বিনোদন

মায়ের কবরে সমাহিত গাজী মাজহারুল আনোয়ার

বাংলা গানের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে রাজধানীর বনানীতে মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

Advertisement

এর আগে সকাল ১০টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সর্বসাধারণের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

দুপুরে দিকে শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ নেওয়া হয়েছে এফডিসিতে। সেখানেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে শেষবারের মতো দেখতে ও শ্রদ্ধা জানান তার সহকর্মী ও প্রিয় মানুষেরা। সেখানে প্রথম জানাজা হয়। এরপর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন

Advertisement

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে ২১ বছর বয়সে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে। ওই চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘আয়না ও অবশিষ্ট’।

১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখায়ও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। তিনি মোট ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। গাজী মাজহারুলের পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম- ‘শাস্তি’, ‘চোর’, ‘শর্ত’, ‘স্বাধীন’, ‘সমর’, ‘রাগী’, ‘আর্তনাদ’, ‘জীবনের গল্প’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘তপস্যা’, ‘ক্ষুধা’, ‘পরাধীন’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’।

অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান লিখেছেন। ২০ হাজারেরও বেশি গানের রচয়িতা তিনি। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ও ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’ তার লেখা তুমুল জনপ্রিয় দুটি গান। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে তার লেখা তিনটি গান।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘চাষির মেয়ে’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মহানগর’, ‘নতুন বউ’, ‘নাজমা’, ‘অভিযান’, ‘মা ও ছেলে’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাবার আদেশ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন।

Advertisement

২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০২১ সালে তিনি সংস্কৃতিতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য গাজী মাজহারুল স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছয়বার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, একাধিকবার ‘বাচসাস পুরস্কার’, ‘বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

এমআই/বিএ/এএসএম