শব্দদূষণের শীর্ষে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। ফলে বধিরতা, হৃদরোগসহ নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক ও জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত হর্ন। নীরব ঘাতক হর্নের সরব ছোবলে আক্রান্ত রাজধানীর মানুষ। এসব কারণে শব্দদূষণ নয় বরং শব্দত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে অধিকাংশের কাছে।
Advertisement
শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও শব্দদূষণ থেকে বাঁচতে ‘শব্দত্রাস’ বিষয়ে সচেতন করছে দুরন্ত বাইসাইকেল। শহর অঞ্চল ও প্রযুক্তি আসক্ত মানুষ, গাড়ির মালিক ও বাস চালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতেই কাজ করছে দুরন্ত বাইসাইকেলের ব্র্যান্ডটি।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশান এলাকায় এ সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় দুরন্ত বাইসাইকেলের পক্ষে। এ সময় ট্রাফিক পুলিশকে ছাতা ও ইয়ার বাডস (শব্দদূষণ থেকে বাঁচার এক যন্ত্র) দেওয়া হয় ব্র্যান্ডটির পক্ষ থেকে। এদিন ট্রাফিক সিগন্যালগুলোয় প্ল্যাকার্ড হাতে নগরবাসীকে সচেতন করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুরন্ত বাইসাইকেলের হেড অব মার্কেটিং শরিফুল ইসলাম, ট্রাফিক গুলশান জোনের এসি মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র জিএম সেলস মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ব্র্যান্ড ম্যানেজার খন্দকার আরিফ হোসেন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ডিজিটাল মিডিয়ার কর্মকর্তা পিয়াস দাস ও এস এম রাশেদ রায়হানসহ প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Advertisement
শব্দ যখন মাত্রা ছাড়ায় তখন শব্দদূষণ, এ বিষাক্ততা ক্রমাগত গ্রাস করছে নগরের মানুষদের। বিষাক্ত সাপের চেয়েও শব্দের বিষাক্ততা আরও ভয়ঙ্কর। শব্দদূষণের কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, সে সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। শব্দদূষণের কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা অত্যন্ত মারাত্মক।
কানে কম শোনা, বধিরতা, হৃৎকম্প, হৃদরোগ, শিশুদের লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যাওয়া, মানসিক বিকাশ বিঘ্নিত হওয়া, খিটখিটে মেজাজ, পেটের আলসার, অনিদ্রা বা ইনসমোনিয়া, মানসিক উত্তেজনা ও উদ্বিগ্নতা বা অ্যাংজাইটি, স্ট্রোকসহ নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয় শব্দদূষণের ফলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, মানুষের জন্য ঘরের ভেতর শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবেল। ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবেল। অথচ ঢাকায় এই মাত্রা ১১৯ ডেসিবেল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবেল। ফলে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ থেকে বাঁচার জন্য বাইসাইকেল বা শব্দদূষণ হয় না এমন যানের প্রচলন জরুরি।
এ বিষয়ে দুরন্ত বাইসাইকেলের হেড অব মার্কেটিং শরীফুল ইসলাম বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে দুরন্ত বাইসাইকেল। দুরন্ত বিশ্বাস করে শুধু ব্যবসা নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, পরিবেশের প্রতি। হর্নজনিত শব্দদূষণের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও প্রতিকারের উদ্দেশ্যে শব্দত্রাস ক্যাম্পেইন শুরু করেছি।
Advertisement
তিনি বলেন, শব্দদূষণ আমাদের দেশে ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে খবর আসে ‘ঢাকা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম শব্দদূষণের নগরী।’ এ খবরটি আমাদের ব্যথিত করেছে। তখনই দুরন্ত বাইসাইকেল একটি ক্যাম্পেইন শুরু করে নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে। যারা হর্ন দিচ্ছি তারা নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবার আশপাশে যারা আছে তাদেরও ক্ষতি করছেন। আশা করছি দুরন্ত বাইসাইকেলের পক্ষ থেকে নেওয়া এ পদক্ষেপ নগরবাসীকে আরও সচেতন করবে।
ট্রাফিক গুলশান জোনের এসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শব্দদূষণের স্বীকার আমরা সবাই। আমরা এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় স্বীকার আমাদের ট্রাফিক পুলিশ। আপনারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যাচ্ছেন হর্ন বাজিয়ে কিন্তু আমাদের এক পুলিশ সদস্যকে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা এই শব্দদূষণের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই আসুন আপনি আমি আমরা সবাই এ বিষয়ে আরও সচেতন হই।
ইএআর/এমআরএম/জিকেএস