প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে করা মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক এমদাদুল কবির এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এছাড়া সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় চার আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত অন্য আসামিরা হলেন ইভ্যালির ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম, হেড অব অ্যাকাউন্ট সেলিম রেজা, অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ, আকিবুর রহমান তূর্য, সিইও’র পিএস রেজওয়ান ও বাইক ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সাকিব রহমান। অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা আসামিরা হলেন ইভ্যালির ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ, সিনিয়র অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্শিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী ও অ্যাকাউন্ট শাখার কর্মী সোহেল।
২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল ইসলাম বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ইভ্যালির রাসেল দম্পতিসহ প্রতিষ্ঠানটির ১২ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। এছাড়া মামলার এজাহারে আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
Advertisement
মামলার এজাহারে বলা হয়, ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ে মামলার বাদী ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য সরবরাহ করেন। কিন্তু ইভ্যালি তার পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা ছিল না। এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও করেন। তবু ইভ্যালি তাদের কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।
মামলার অভিযোগ পত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার উদ্দেশ্যে তাদের অনলাইন শপ থেকে বিভিন্ন পণ্য যেমন- মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, গাড়ি, মোবাইলফোন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিক্রয়ের লোভনীয় অফার দেয়। সাধারণ মানুষ বাজারমূল্য থেকে কম মূল্যে পণ্য পাওয়ার জন্য তাদের কোম্পানিতে পণ্য অর্ডার করতে থাকে। ইভ্যালির মালিক ও কর্মকর্তারা ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে ও বিভিন্ন তারকাকে নিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করে তা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করে। ইভ্যালি বিভিন্ন সময় সাইক্লোন অফার, টি-১০ অথবা স্পেশাল কোনো দিন বিভিন্ন ডিসকাউন্টে অফার নিয়ে বিজ্ঞাপন দিত। গ্রাহক তখন ওই অফারে প্রলোভিত হয়ে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর অর্ডার করতেন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মামলার বাদীর মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি, ফিউচার আইটি নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইভ্যালির একটি ব্যবসায়িক চুক্তিনামা সম্পন্ন হয়। বাদী চুক্তি মোতাবেক ইভ্যালিকে বিভিন্ন আইটেমের পণ্য সরবরাহ করত। চুক্তির মধ্যে বিভিন্ন খাবার পণ্য, চকলেট, মধু, ভিনেগার, চিপস, ইলেকট্রিক সামগ্রীসহ আরো বিভিন্ন সামগ্রী ইভ্যালির অর্ডারকৃত মালামাল প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকেরা বাসা বাড়িতে হোম ডেলিভারি দিয়ে আসতো। আসামিরা অর্ডারকৃত পণ্যের স্বল্প টাকা পরিশোধ করে অধিকাংশ টাকা বাকি রাখতো। ইভ্যালি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আসামি রাসেল ও শামীমা নাসরিনসহ সব আসামিদের কাছে একাধিকবার পাওনা টাকা চাহিলে তারা দিচ্ছি বলে কালক্ষেপণ করে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, মামলার বাদী ইভ্যালি কোম্পানির অফিসে গিয়ে মালিকসহ কোম্পানি তাদের কাছে পাওনা টাকা চাইলে বিভিন্ন তালবাহানাসহ আসামিরা বাদীর সঙ্গে খারাপ আচরণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। বাদী তার অভিযোগে মেট্রো কাভারেজ প্রতিষ্ঠানের পাওনা বাবদ ১০ লাখ ৫৮ হাজার ২৭২ টাকা উল্লেখ করেছেন কিন্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানটি ইভ্যালির কাছে ৯ লাখ ৬২ হাজার ৫২৪ টাকা পাওনা রয়েছে বলে তদন্তকালে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
Advertisement
মামলার বাদী কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে কি না জানি না। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।’
জেএ/জেএইচ/জিকেএস