# ট্রায়াল রানের এক কনটেইনার টিএমটি বার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে এমভি ট্রান্স সামুদেরা#আসামসহ আশপাশের রাজ্যগুলোতে যাবে এসব পণ্য#ট্রানজিটে ভারতের সময়-খরচ বাঁচবে, মাশুল পাবে বাংলাদেশ
Advertisement
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ট্রানজিট চুক্তি হয়েছে আগেই। চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ অন্য যে কোনো দেশে সহজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। অনেকে এ ব্যবস্থাকে বলছেন ট্রান্সশিপমেন্ট। ট্রায়াল রানও (পরীক্ষামূলক চালান) শুরু হয়ে প্রায় শেষের দিকে। এই পথে ভারত স্বল্প সময় ও ব্যয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। আর বাংলাদেশ পাবে মাশুলসহ অন্যান্য ফি।
চুক্তির শর্ত মোতাবেক বর্তমানে তৃতীয় ট্রায়াল রান হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এবার এক কনটেইনার লৌহজাত পণ্য (টিএমটি বার) নিয়ে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি ট্রান্স সামুদেরা। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জানা যায়, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়’ চুক্তির আওতায় টিএমটি বারের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে, যা সড়কপথে শ্যাওলা (সিলেট) সুতারকান্দি (ভারত) স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে নেওয়া হবে। বাংলাদেশে এমভি ট্রান্স সামুদেরা পরিচালনা করছে শিপিং লাইন ‘ম্যাংগো লাইন লিমিটেড’।
Advertisement
২০২০ সালে কলকাতা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ট্রানজিটের চার কনটেইনার পণ্য এসেছিল। সেবার পণ্যগুলো চট্টগ্রামে আসে এমভি সেঁজুতি জাহাজে। পদ্মা সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পর ট্রানজিট চুক্তির আওতায় গত আগস্ট মাসে মোংলা বন্দর দিয়ে আরেকটি সফল ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়। চলতি সপ্তাহে মেঘালয় থেকে চায়ের কনটেইনার ডাউকি-তামাবিল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কলকাতা বন্দরে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ট্রানজিটের ট্রায়াল রানের শেষ চালান এটি।
ম্যাংগো লাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় টিএমটি বার নিয়ে কনটেইনারবাহী জাহাজ এমভি ট্রান্স সামুদেরা ৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা রয়েছে। জাহাজটি এরই মধ্যে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্দর থেকে রওয়ানা হয়েছে। এমভি ট্রান্স সামুদেরা জাহাজটি এমএসটি গ্রুপের মালিকানাধীন এবং বাংলাদেশি পতাকাবাহী।
সূত্র জানায়, এমভি ট্রান্স সামুদেরা ২০১৮ সালে নির্মিত হয়। জাহাজটি ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৫ মিটার প্রস্থের। গভীরতা ৩ দশমিক ৩ মিটার।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ। ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হচ্ছে। ট্রানজিট শুরু হলে দুই দেশই আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য পরিবহনে কমে আসবে সময়।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, এছাড়া বন্দরের ফি, কাস্টমসের রাজস্ব আহরণ বাড়বে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও সম্প্রসারণ হবে।
পুরোদমে ট্রানজিট শুরুর জন্য তিনি বাংলাদেশ রেল, সড়কপথে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোয় তাগিদ দেন।
এক বা একাধিক দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সড়ক, রেল ও নৌপথে পণ্যসামগ্রী পরিবহন করার প্রক্রিয়াকে ট্রানজিট বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ট্রানজিট হলো নিজ দেশের পণ্য অন্য কোনো দেশের ভূমি ব্যবহার করে নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো।
ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন করলে বর্তমানের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ খরচ কমবে। যে কারণে বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট করতে বেশি আগ্রহী তারা।
জানা যায়, নৌ-ট্রানজিটের আওতায় বাংলাদেশ মাশুল বা ফি পায় টনপ্রতি ১৯২ টাকা। টনপ্রতি এসকর্ট বা নিরাপত্তা ফি ৫০ টাকা ও বন্দরে ল্যান্ডিং শিপিং বাবদ মাশুল ধার্য আছে ৩৪ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি টনে ২৭৭ টাকা মাশুল পায় বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয় (এমওইউ)। ২০১৬ সালের জুনে নদীপথে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিট চালু হয় নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় ট্রানজিট কার্যকরের বিষয়ে সই হয়।
এএসএ/জিকেএস