যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাট সদর উপজেলার মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ঘাটে এখনও নির্মিত হয়নি কোনো সেতু। ৫২ বছর যাবত নদীর অপর প্রান্তের গ্রামগুলো থেকে ডিঙি নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় কোমলমতি শিশুদের। ফলে বর্ষা ও বৃষ্টি-বাদলের দিনগুলোতে স্কুলে উপস্থিত হতে পারে না ছোট ছোট শিশুরা। বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ, তদবির আর অনুরোধ করেও কোনো ফল হয়নি বলে অভিযোগ অভিভাবদের।
Advertisement
সরেজমিনে জানা যায়, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় জয়পুরহাট সদর উপজেলার মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তুলশী গঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে পূর্ব তীরে রয়েছে স্কুলটি। স্কুলের পূর্ব দিকে আমদই ইউনিয়নের মুরারীপুর, পাইকর, রাংতা, গোপালপুর, ঘোনাপাড়া, সুন্দরপুর, আর পশ্চিম দিকের পুরানাপৈল ইউনিয়নের পাইকপাড়া, গোবিন্দপুর ও গঙ্গা দাশপুরসহ ১৫টি গ্রাম থেকে আসে বিভিন্ন প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী।
তুলশী গঙ্গা নদীটি আগে তেমন খরস্রোতা ছিল না, ফলে শিক্ষার্থীরা খরা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো ও ডিঙি নৌকায় পার হতো। কিন্ত নদীটি পূণঃখনন করায় নদীর গভীরতা ও স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যায়। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম ঝুঁকিতে পড়েছে।
আমদই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহানুর আলম সাবু ও পুরানাপৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকত বলেন, এই ১৫টি গ্রামে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের বাস। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। রাতে জরুরি যোগাযোগ দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই এখানে একটি ব্রিজ হলে এ দুটি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে। স্বাধীনতার পর এসব গ্রামে জনবসতি গড়ে ওঠে বলে এই জনপ্রতিনিধিরা জানান।
Advertisement
কোমলমতি শিশুদের নদী পার হতে হয় একটি মাত্র ডিঙি নৌকায়। এ ব্যাপারে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ, তদবির আর অনুরোধ করেও কোনো ফল হয়নি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা খাতুন জানায়, ছোট একটি ডিঙি নৌকায় স্কুলে আসতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় নৌকা থেকে নদীতে পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। বর্ষার সময় অনেকেই স্কুলে আসতে পারে না।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেমি, পঞ্চম শ্রেণির রিয়াদ ও ওমর ফারুকসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, যারা সাঁতার জানে না নদী পার হতে তারা খুব ভয়ে থাকে। অনেক সময় নদীতে পড়ে গিয়ে কাপড় চোপড় ভিজলে আর স্কুলে যাওয়া হয় না।
পাইকপাড়া গ্রামের অভিভাবক রেজুয়ান হোসেন, মেহেদী হাসান, সেলিনা বেগম বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের যখন স্কুলে পাঠাই তখন অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি। কারণ তাদের ডিঙি নৌকায় পার হতে হয়।
Advertisement
গোবিন্দপুর গ্রামের ফারজানা আক্তার ও খাদিজা বেগম বলেন, অনেক সময় আমরা নিজেরা গিয়ে নৌকা পার করে স্কুলে দিয়ে আসি। সন্তানরা বাড়িতে না আসা পর্যন্ত উৎকণ্ঠায় থাকি। এছাড়াও একটি মাত্র নৌকা থাকায় নৌকার অপেক্ষায় রোদের মধ্যে শিশুদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নদী পার না হলে ৪-৫ কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। বাধ্য হয়ে নদী পার হতে হয়।
স্কুল কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, বর্ষা মৌসুমে শিশুদের স্কুলে যেতে খুবই অসুবিধা হয়। এ সময় উপস্থিতি একেবারেই কমে যায়। তিনি স্কুলের কাছে একটি সেতু দাবি করেন।
মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রণব চন্দ্র মন্ডল বলেন, নদী পারাপারের এমন দুর্ভোগ নিয়ে ৫২ বছর ধরে ভুগছে এই বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এখানকার সাধারণ মানুষজনকে সব সরকারি বা অন্যান্য দাপ্তরিক কাজের জন্য এই ডিঙি নৌকায় যাওয়া আসা করতে হয়। ১৫টি গ্রামের মানুষের ওই একটি ডিঙি নৌকায় ভরসা। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সেতু নির্মাণের আবেদন জানাচ্ছি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন বলেন, সদর উপজেলার আমদই ইউনিয়নের অন্তর্গত মুরারীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিঙি নৌকায় যাতায়াত করছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। আশা করি খুব শিগগিরই সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
এফএ/এমএস