সাহিত্য

চকমকি পাথর ও শব্দজ্যোতির খোঁজে...

কবিতা ভাবনাভ্রাম্যমাণ এক শব্দশ্রমিকের মতো দু’হাতে ভাঙতে থাকি আনকোরা শব্দের শরীর। শব্দ ছেনে ছেনে আমূল পাল্টে ফেলি হৃদয়ের জলের মতোন কথা। বাগদেবীর পেছনে পেছনে চরকার মতো ভীষণ ঘুরতে থাকি! আবার কখনো বা চকমকি পাথরের খোঁজে আমি দু’পায়ে দৌড়াতে থাকি দিগন্তের ধূলিপথে। অরণ্যের এক পাতাঝরা রাস্তা ধরে তুমুল ছুটতে থাকি কোনো শব্দসরোবরের আশায়! অতঃপর সূর্যাস্তের কিছু আগে দেখা মেলে সেই সরোবরের- যাতে বুদ্বুদ হয়ে ভেসে ওঠে কিছু শব্দজ্যোতি, ঝিনুকের অনুষ্টুপ আর উপমার ডাগর প্রতিমা!তুষার কবিরের এক গুচ্ছ কবিতাস্বরগ্রামএই ধূলিখামে জেগে ওঠা শীতে- আমাকেও ডাকছে কে যেন সেই সুরময় স্বরগ্রামে- ধ্বনিময় দুঃখসুরে- রক্তবীজ জেগে ওঠা কবিতার সরোবরে!জানি তোমার উঠোনে আজ পড়ে আছে শীতের হরিৎ চিঠি- স্বরগ্রামে লেগে আছে শীতের প্রলেপ- জলছাপে জেগে আছে প্রজাপতি! আর অই দূর পুরনো মণ্ডপ থেকে ভেসে আসে কুমারীর সান্ধ্যগীতি- প্রভাময়ী প্রেমের সংলাপ। দেশলাই জ্বেলে দেয়া এই শীতে- খড়কুটো জেগে ওঠে ঘুমঘোর শীতের কার্নিশে। দেখি শীতের শব্দেরা সব একে একে জড়ো হচ্ছে, স্বর্গীয় সন্তের মতো- কোনো এক শীতগ্রস্ত কবির খাতায়! প্রাচীরের শিলালিপি তবে তুমি আমাকেই খুঁড়ে নাও শব্দের অলীক বাতিঘরে-ছিঁড়ে নাও আমার সমূহ কথা যার ভাঁজে ভাঁজে জমা আছে যতো গোপন পয়ার- প্রাচীরের মন্দ্রিত আখ্যান! দিগন্তের শেষ রেখা ধরে গিয়ে দ্যাখো; জানি শূন্যতার পরে জমা আছে আরো কিছু শূন্যতা-প্রাচীরের শিলালিপিঅজন্তার মন্দ্রিত সংলাপ! শিলালিপি খুঁড়ে দ্যাখো;পাথরের ভাঁজে ভাঁজে গাঁথা আছে আমার সমস্ত শব্দ, মনোবীজ, রক্তস্বর!কহবতী পয়ারে খুঁজেছি প্রেম; কহবতী কথাসুরের মন্দিরা চিরে উঠে আসে প্রেমরাধিকা দূরের পথে- পথ জুড়ে ব্যথানা চাইতেই ধরা দেয় রক্ত, মধু, হেম! বাজছে বৃষ্টির ঘড়া তমসার জলে নূপুরে নাচুক আজ বেঘোর শ্রাবণভিজছে হরিৎ পাতা- ধূলির বাকলেকোথা হতে এল আজ জলের কাহন! জলের দোতারা বাজে শব্দভরা ঘুমতোমাকে ডেকেছে খুব শ্রাবণ প্রপাত,কে যেন বৃষ্টির পায়ে দিয়ে যায় চুমবৃষ্টির শব্দেই আজ উড়ে যাচ্ছে রাত। শীতস্বরশীতের লিরিকগুলো সব উড়ে যাচ্ছে- রক্তবীজ জড়ো হচ্ছে কবিতা কার্নিশে; কোরকের গান থেকে উঠে আসে যতো ভগ্নগাথা, নৈশলিপি, রাতচেরা ডাহুকের স্বর। প্রান্তরের শেষ আস্তাবলে হেঁটে যাই, দেখি খড়ের গাদার পাশে জবুথবু বসে আছে একটি শ্বেতাভ ঘোড়া; তার কিছুটা দূরেই পড়ে আছে কীটদষ্ট ক্যারাভান- যাতে ঘুমঘোর পরে আছে এক শীতের সহিস। বাজছে- কোথাও ঠিক বেজেই চলেছে- এই শীতে, প্রান্তরের হাওয়ায়, সহিসের ছড়ছাড়া বিকল বেহালা।এক নজরে তুষার কবিরজন্ম : ২ ফেব্রুয়ারি; ১৯৭৬শিক্ষা: এম.বি.এ. (মেজর ইন মার্কেটিং)সম্মানসহ স্নাতকোত্তর (ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।পেশায় : ব্যাংকারপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: বাগদেবী আমার দরজায় (২০০৬), মেঘের পিয়ানো (২০০৭), ছাপচিত্রে প্রজাপতি (২০০৮), যোগিনীর ডেরা (২০০৯), উড়ে যাচ্ছে প্রেমপাণ্ডুলিপি (২০১০), কুহক বেহালা (২০১২), রক্তকোরকের ওম (২০১৪) এবং ঘুঙুর ছড়ানো ঘুম (২০১৫)। এইচআর/এমএস

Advertisement