মানিকগঞ্জে বাঁশ দিয়ে বিশালাকৃতির একটি নৌকা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন আব্দুস সাত্তার নামের এক সাইকেল মেকানিক। ৬৫ হাত লম্বা নৌকাটি একনজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দূর-দূরান্তের মানুষ। দাবি করা হচ্ছে, এটিই দেশের সবচেয়ে বড় বাঁশের নৌকা।
Advertisement
আব্দুস সাত্তারের (৩৫) বাড়ি সিংগাইর উপজেলার ছোট কালিয়াকৈর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. নাজিমুদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, পেশায় সাইকেল মেকানিক হলেও ছোটবেলা থেকেই ব্যতিক্রম কিছু করার অভ্যাস সাত্তারের। গতবছর নিজে চলাচলের জন্য বাঁশ দিয়ে ছোট নৌকা তৈরি করেছিলেন। এর আগে বিশাল ঘুড়ি তৈরি করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে একটি বাগানের ভেতর সাত্তার ও তার বন্ধু লুৎফর বাঁশের নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত। কয়েকজন গ্রামবাসী দাঁড়িয়ে তাদের এ কাজ দেখছেন। এর মধ্যে পাশের গ্রাম থেকে দুই ব্যক্তি এলেন ব্যতিক্রমী এই নৌকা দেখতে।
Advertisement
সেখানেই কথা হয় নৌকার কারিগর আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল নিজের একটি বাইচের নৌকা থাকবে। সেই নৌকায় বিভিন্ন জায়গায় বাইচে অংশ নেবেন। কিন্তু কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরিতে অনেক টাকা লাগে। এত টাকা দিয়ে নৌকা তৈরি করার মতো তার সামর্থ্য নাই। তাই গতবছর বাঁশ দিয়ে ছোট একটি নৌকা তৈরি করেছিলেন। কাঠের নৌকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাঁশের নৌকা চালিয়েছেন তিনি।
তখন থেকেই পরিকল্পনা শখ পূরণ করতে বাঁশ দিয়ে বাইচের নৌকা তৈরি করবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। বন্ধু লুৎফর রহমানকে ইচ্ছার কথা জানালে তিনিও রাজি হয়ে যান। দুটি বাইসাইকেল বিক্রি করে এবং জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু হয় নৌকা তৈরির কাজ।
সাত্তারের এই উদ্যোগকে প্রথমে পাগলামি মনে করতেন এলাকাবাসী। কিন্তু এখন সবাই প্রশংসা করছেন।
সাত্তার জানান, প্রায় তিন মাস ধরে দুই বন্ধু মিলে নৌকাটি তৈরিতে কাজ করছেন। এটি ৬৫ হাত লম্বা। প্রশস্ত আড়াই হাত। গলই থেকে শুরু করে পুরো নৌকাটি কাঠের নৌকার আদলেই তৈরি করা হয়েছে। তবে নৌকায় কাঠ, লোহার পেরেক ও তারকাটার ব্যবহার নেই। পুরোটাই বাঁশ ও সুতা দিয়ে তৈরি।নৌকার তলায় ছাউনি দেওয়া হবে মোটা পলিথিন দিয়ে। নৌকাটি তৈরিতে ১০০টি জাওয়া ও বৌরা বাঁশ লেগেছে।
Advertisement
কথা হয় সাত্তারের বন্ধু লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাঁশ দিয়ে তৈরি বাইচের নৌকা দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করে। এটি নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ। নৌকাটি দেখে যখন সবাই প্রশংসা করে, তখন মনে হয় দুই বন্ধুর পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মাঝি মাল্লা নিয়ে ৪০ জন মানুষ এই নৌকায় বাইচ দিতে পারবেন। এটি কাঠের নৌকার চেয়ে দ্রুতগতিতে চলবে।
নৌকা দেখতে আসা দর্শনার্থীদের একজন মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাঁশ দিয়ে বাইচের নৌকা এর আগে দেখাতো দূরের কথা, শুনিওনি। জীবনে প্রথম দেখলাম। অনেক সুন্দর হয়েছে নৌকাটি। যখন নৌকাটি কোনো বাইচে অংশ নেবে তখনো দেখতে যাবো ইনশাআল্লাহ।’
হাফিজুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, ‘সাত্তার আমাদের এলাকার গর্ব। বাঁশ দিয়ে বাইচের নৌকা তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের আর কোথাও এ ধরনের নৌকা আছে বলে আমার জানা নেই।’
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) নৌকাটি স্থানীয় বরুন্ডি ঘাটে কালীগঙ্গা নদীতে ভাসানো হয়। এরপর বিভিন্ন বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে দেশের প্রথম বাঁশের তৈরি এই বাইচের নৌকা।
এসআর/এএসএম