ধর্ম

‘জীবন-মৃত্যু’ নিয়ে বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাস

যুদ্ধে শাহাদাতবরণকারীদের মৃত্যু নিয়ে মুনাফিকরা বিভিন্ন মন্তব্য করে। মানুষের বেঁচে থাকা কিংবা মৃত্যুবরণ করা সবই মহান আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা জীবন দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা মৃত্যু দেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গীদের মধ্যে যারা যুদ্ধের ময়দানে শাহাদতবরণ করেছেন, তাদের ব্যাপারে কিছু কিছু মুনাফিক নিজেদের মনমতো কথা রচনা করেছেন। যা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-

Advertisement

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ قَالُوۡا لِاِخۡوَانِهِمۡ اِذَا ضَرَبُوۡا فِی الۡاَرۡضِ اَوۡ کَانُوۡا غُزًّی لَّوۡ کَانُوۡا عِنۡدَنَا مَا مَاتُوۡا وَ مَا قُتِلُوۡا ۚ لِیَجۡعَلَ اللّٰهُ ذٰلِکَ حَسۡرَۃً فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ ؕ وَ اللّٰهُ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ؕ وَ اللّٰهُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

‘হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কুফরি করেছে এবং তাদের ভাইদেরকে বলেছে, যখন তারা জমিনে সফরে বের হয়েছিল অথবা তারা ছিল যোদ্ধা (এরপর নিহত হয়েছিল)- যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো, তবে তারা মারা যেত না এবং তাদেরকে হত্যা করা হত না’। যাতে আল্লাহ তা তাদের অন্তরে আক্ষেপে পরিণত করেন এবং আল্লাহ জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৬)

এ আয়াতে ঈমানদারদেরকে সেই বিভ্রান্তিকর আকীদা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে, যা কাফের ও মুনাফিকরা পোষণ করতো। কারণ, এই বিশ্বাসই হল ভীরুতার মূল কারণ। পক্ষান্তরে যখন এই বিশ্বাস জান্মাবে যে, জীবন ও মরণ আল্লাহর হাতে এবং মৃত্যুর একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, তখন মানুষের মধ্যে সাহসিকতা এবং আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার উৎসাহ সৃষ্টি হবে।

Advertisement

 যদি তারা যুদ্ধের ময়দানে না গিয়ে বাড়িতেই বসে থাকত, তাহলে মৃত্যুর কবলে পড়া থেকে বেঁচে যেতো। এ রকম ভ্রান্ত আকীদা আন্তরিক অনুতাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, মৃত্যু তো সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরেও আসে। মহান আল্লাহ বলেন-

أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِكْكُمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِي بُرُوجٍ مُشَيَّدَةٍ

‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভিতরে অবস্থান কর তবুও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৭৮) কাজেই এই অনুতাপ থেকে মুসলিমরাই রক্ষা পেতে পারে। কারণ, তাদের আকীদা সঠিক ও শুদ্ধ।

وَ لَئِنۡ قُتِلۡتُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اَوۡ مُتُّمۡ لَمَغۡفِرَۃٌ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَحۡمَۃٌ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ

Advertisement

‘যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও অথবা মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তারা যা সঞ্চয় করে, তা থেকে উত্তম আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৭)

এ আয়াতে এসেছে, যে কোনোভাবেই হোক না কেন মৃত্যু তো আসবেই, তাই এমন মৃত্যু যদি ভাগ্যে জুটে, যে মৃত্যুর পর মানুষ আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর দয়া লাভের যোগ্য হয়ে যায়, তবে এটা হবে তার জন্য পার্থিব সেই সব ধন-সম্পদ থেকেও উত্তম, যা মানুষ সারা জীবন উপার্জন করে থাকে। কাজেই আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছপা না হয়ে সেদিকে বড়ই উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে অগ্রসর হতে হবে। আর নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার উৎসাহ থাকলে তাঁর ক্ষমা ও দয়া সুনিশ্চিত হয়ে যাবে।

মৃত্যুর পরে সবাইকেই মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সব মানুষকেই তার সামনে একত্রিত করবেন। এ বিষয়টি কোরআনুল কারিমের মহান আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-

وَ لَئِنۡ مُّتُّمۡ اَوۡ قُتِلۡتُمۡ لَاِالَی اللّٰهِ تُحۡشَرُوۡنَ

‘আর তোমাদের মৃত্যু হলে অথবা তোমরা নিহত হলে, তোমাদেরকে আল্লাহর কাছেই একত্রিত করা হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৫৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনুল কারিমের এ আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তার অনুগ্রহ পাওয়ার চেষ্টা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম