সারাদিন ফাঁকা থাকলেও দখল প্রক্রিয়া চলে সন্ধ্যার পর থেকেই। কে কার আগে অবস্থান নিতে পারবে, কোন কোণায় গেলে খদ্দের বেশি মিলবে তা নিয়ে চলে তীব্র বাকযুদ্ধ। মাঝে মধ্যে নিজেরাই হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণে রংচটা মেকআপে ওদের কোনো জুড়ি নেই। স্বল্প বসনায় পুরুষ হিজরারাও ক্লিন সেভ আর নকল চুলের বেনী লাগিয়ে দখলে আসে পরীবাগ ওভার ব্রিজে। মাঝে মাঝে নারী যৌনকর্মীরও দেখা মেলে। এ যেন অবাধ যৌন পেশার নিরাপদ প্লাটফর্ম।রাজধানীর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ রাস্তা কারওয়ান বাজার-শাহবাগ সড়ক। আর এ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বাংলামোটর-রূপসী বাংলার মাঝামাঝি পরীবাগ ওভার ব্রিজ। রূপসী বাংলা থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত রাস্তার আইল্যান্ডে পারাপারের কোনো জায়গা না থাকায় একমাত্র অবলম্বন এই ওভারব্রিজটি।রাত ১০টা বাজতে না বাজতেই ওভারব্রিজটি দখলে চলে যায় যৌনকর্মীদের। প্রায় ডজন খানিক যৌনকর্মী রাতভর ব্রিজের ওপরে অনেকটা প্রকাশ্যেই যৌনপেশায় লিপ্ত থাকেন। যৌনকর্মীদের অধিকাংশই হিজড়া সম্প্রদায়ের। পরীবাগ, শাহবাগ, বাংলামটর এলাকাতেই তাদের বসবাস।আশেপাশে দোকানপাট বা মার্কেট না থাকার কারণে রাতে অনেকটাই ভূতুড়ে রূপ নেয় ওভারব্রিজ এবং ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা। ওভারব্রিজের দু’পাশেই রিকশা স্ট্যান্ড। খদ্দেরদের অধিকাংশই মূলত তারাই। তবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে যৌনকর্মীদের সঙ্গ নিতে আসে অন্যান্য পরিবহণ শ্রমিকরাও। আসে আশেপাশের নির্মাণ শ্রমিকরাও।যৌনকর্মী আর খদ্দেরের এমন অবাধ মেলামেশায় বিব্রত হতে হয় হাজারও পথচারীকে। বিশেষ করে স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে ব্রিজ পার হতে গেলে বিপত্তির যেন অন্ত থাকে না। পথচারীর হাত ধরে টানাটানি, সামনে পথ আগলে দাঁড়িয়ে যৌনকাজে লিপ্ত হওয়ার আহ্বান সেখানকার নিয়মিত দৃশ্য। লজ্জায়, ক্ষোভে অনেকেই ও পথে পা বাড়ান না। আবার অনেকেই ব্রিজে উঠেও ফিরে যেতে বাধ্য হন।এছাড়া ব্রিজটিতে ছিনতাইয়ে ঘটনাও নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। খদ্দেরের কাছ থেকে মোবাইল, ম্যানিব্যাগসহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়যর ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশে নালিশ করেও এর কোনো প্রতিকার পায়না ভুক্তভোগীরা।গত শনিবার রাতের ঘটনা, ব্রিজটির গোড়ায় বাদাম বিক্রি করছিল সাত্তার নামের এক ব্যক্তি। আলাপকালে তিনি বলেন, “রাত হলেই ব্রিজের ওপর এক অন্য দুনিয়া দেখতে পাওয়া যায়। কত রঙ্গের মানুষ যে এখানে আসে। সাধারণ পথচারী ব্রিজের ওপর দিয়ে যেতেই পারেন না। ছিনতাই হয় নিয়মিত। পুলিশ টহল দিলেও ব্রিজের ওপরে কখনও যায় না।”খোকন নামের এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রূপসী বাংলার সামন দিয়ে ঘুরে আসি। তবুও রাতের বেলায় ওভারব্রিজে উঠি না। বড় ভাইয়ের সঙ্গে একবার ব্রিজে উঠে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছিল। এরপর থেকে ও পথে আর পা বাড়াই না।ব্রিজে দাঁড়িয়ে খদ্দেরের অপেক্ষা করছিল হ্যাপী নামের এক হিজড়া যৌনকর্মী। জাগো নিউজকে বলছিল, “আমাদেরও তো বাঁচতে হয়। জায়গা কই? সরদারের নির্দেশেই এখানে দাঁড়াতে হয়। আয় না করলে সরদারকে কী দেব, নিজেইবা কী খাব?”ছিনতাইয়ের সঙ্গে কখনও জড়িত থাকেন না উল্লেখ করে সে আরো জানায়, “শরীর বেঁচে টাকা নেই। ধোকা দিয়ে বা জোর করে টাকা নেয়ার অভ্যাস আমার নেই। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।”এএসএস/আরএস/এমএস
Advertisement