দেশজুড়ে

‘চাল-ডালের দরকার নেই, ইউরিয়া-পটাশ খেয়ে বাঁচেন’

ঠাকুরগাঁওয়ে খুচরা দোকানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার। তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে বিক্রেতারা, তারপরও সংকট। এভাবে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) উপজেলার লাহিড়ি বাজারে একটি সারের দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রান্তিক কৃষক সাতানু চন্দ্র সিংহ।

লাহিড়ির খুচরা সার বিক্রেতা সাদেকুল ও দুলালের দাবি, ডিলাররা সার মজুত করছেন। আমরা সার পাচ্ছি না।

জেলার হরিপুরের যাদুরানী, বালিয়াডাঙ্গীর লাহিরি, রানীশংকৈল বন্দর ও ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লি বাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। দোকানে দোকানে শত শত কৃষক লাইনে দাঁড়ানো।

Advertisement

কৃষক শ্রী গুলটেন চন্দ্র সিংহ বলেন, এত বেশি টাকা দিয়ে সার কিনে দেশের জন্য ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। বার বার সরকারের লোকজন সাবধান করার পরও সার সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে দোকানদাররা৷ আমরাতো জিম্মি।

কৃষক রহিমউদ্দীন বলেন, শাক, সবজি, চাল, ডাল এসব খাওয়ার দরকার নাই৷ ফসফেট, ইউরিয়া, পটাশ এসব খেয়ে বেঁচে থাকেন। আমরা যেন ফসল উৎপাদন না করতে পারি সেজন্যইতো এত সিন্ডিকেট। আমরা গায়ের চামড়া রোদে পোড়ানো কৃষক৷ আমাদের সঙ্গে জুলুম সহ্য করা হবে না। হয় ন্যায্যমূল্যে সার দিন নয়তো উৎপাদন করা সম্ভব নয়।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সারের দোকানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষকরা৷ তারপরও এমওপি সার না পেয়ে ঘুরে যাচ্ছেন অনেকে। অনেকে মেজাজ হারিয়ে প্রতিবাদ করছেন। সাড়ে ৭শ টাকার সার বিক্রি করা হচ্ছে ১৭শ টাকা বস্তা। এমন চিত্র জেলার প্রতিটি উপজেলায়।

তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সার সংকট নিরসনে কিছু দোকানে সারের মূল্য তালিকা দেখা গেছে।

Advertisement

কৃষি অফিস বলছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে সার রয়েছে যা কৃষকের চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। সার সংকটের কোনো প্রশ্নই আসেনা। সেইসঙ্গে আমনের যা চাহিদা তার অনেক গুণ বেশি সার রয়েছে। বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট দেখালেও ডিসি অফিসের নির্দেশে বিভিন্ন দোকানে যেখানে অনিয়মন পাওয়া যাচ্ছে সেখানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এবং জরিমানা করেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এখনো সিন্ডিকেট করে সার বিক্রি করছে। এ নিয়ে কয়েক দফা জরিমানা গুণলেও কোন পরিবর্তন হচ্ছে না।

এ বিষয়ে সারের ডিলার মুহম্মদ হাসান বলেন, সার সংকট নেই। আমাদের কাছে কৃষক তার চাহিদা মতো সার পাচ্ছেন।

তাহলে কৃষকরা কেন অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাময়িক সমস্যা ছিল, তখন একটু দাম বাড়তি ছিল। এখন সব ঠিকঠাক।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল আজিজ বলেন, চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি সার রয়েছে। সারের জন্য যে হাহাকার সেটি কৃত্রিম। এটি সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রশাসন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যারা সার মজুত করেছে এবং বেশি দামে বিক্রি করছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। যদি তারপরও কৃষকদের ওপর জুলুম করা হয় তাহলে আরও কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম