খেলাধুলা

আফগানিস্তানের চেয়ে যে জায়গায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের শুরুর গল্পটা দারুণ। যাকে বলে উড়ন্ত সূচনা। ২০১৪ সালে হোম অব ক্রিকেটে এই আফগানিস্তানকে মাত্র ৭২ রানে অলআউট করে ৯ উইকেটের সহজ জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল টাইগাররা।

Advertisement

এরপর ঘরের মাঠে দুটি সিরিজ ১-১‘এ অমিমাংসিত রাখতে পারলেও সময়ের প্রবাহমানতায় দিনকে দিন আফগানদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।

যত দিন যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে টাইগাররা পিছাচ্ছেই। আর আফগানরা ততই দ্রুত এগুচ্ছে। রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ নবী, ফজল হক ফারুকি, ইব্রাহীম জাদরান, নজিবুল্লাহ জাদরানদের শৌর্য্য-বীর্য্যের সামনে দাঁড়াতেই পারছেন না সাকিব, মুশফিক, রিয়াদরা।

এশিয়া কাপের আগে ৮ বারের মোকাবিলায় আফগানদের জয় ছিল ৫টি। গতকাল মঙ্গলবারের ৫ উইকেটের জয়ে সেটা গিয়ে ছয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের জয় তিনেই বহাল রয়েছে।

Advertisement

অথচ ক্রিকেটের প্রচার, প্রসার, অর্থ, জনপ্রিয়তা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং সুযোগ-সুবিধা ও আনুসাঙ্গিক উপকরণ, উপাদান আফগানদের জেয়ে বাংলাদেশের অনেক বেশি। আফগানিস্তানের ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে।

আফগান ক্রিকেট বোর্ডের তুলনায় বিসিবির অর্থনৈতিক ভিত অনেক মজবুত। মোট কথা, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক সমৃদ্ধ, ধনী। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সবরকম সুযোগ সুবিধা পান অনেক অনেক বেশি; কিন্তু তারপরও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগানরা এগিয়ে এবং যতদিন যাচ্ছে ততই আফগানদের প্রাধান্য বাড়ছে।

কেন পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ? ঠিক কোথায় আফগানদের চেয়ে পিছিয়ে টাইগাররা? বিসিবি ও টিম বাংলাদেশের করণীয়টাই বা কি? জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে দেশের ক্রিকেটের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব গাজী আশরাফ হোসেন লিপু এবং নাজমুল আবেদিন ফাহিম সেটাই জানিয়েছেন।

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন, মঙ্গলবার শারজায় এশিয়া কাপের ম্যাচটি বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে।

Advertisement

লিপুর কথা, ‘আমার মনে হয়, গতকালকে (মঙ্গলবার) ম্যাচটি দু’দেশের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের প্রকৃত অবস্থা কি, কার কি মান ও অবস্থান, আমাদের ও আফগানদের পাইপ লাইনের কার কি অবস্থা, সব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’

লিপু অকপটে স্কীকার করেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা ও কঠিন সত্য হলো, টি-টোয়েন্টিতে আমরা তেমন ভাল খেলি না। দল হিসেবেও মোটেই ভালো না। এ উপলব্ধিটা খুব জরুরি। আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট নিয়ে নতুন করে চিন্তার সময় এসেছে। খারাপ করা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন না। আমি মনে করি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে রাতারাতি অবস্থার উন্নতি হবে না আমাদের।’

‘আমরা কোথায় আছি? প্রকৃত অবস্থাটা কি? কোধায় ভুল-ত্রুটি? ফাঁক-ফোকর কি? তা খুঁজে বের করা দরকার। আমার মনে হয় না খুব বেশি বিচলিত হওয়ার কিছু আছে। আমাদের টেস্ট আর ওয়ানডেতে বেশি মনোযোগ দিয়ে পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে ভাল করায় উদ্যমী হতে হবে। লক্ষ্য ও পরিকল্পনা হতে হবে যুগোপযোগি। প্লেয়ার, ম্যানেজমেন্ট ও বোর্ড কর্তা সবারই বাড়তি দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে এবং একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগুনোর চিন্তা করা উচিত।’

আফগান ক্রিকেটের উন্নতির পিছনে রশিদ খান ও মুজিবুর রহমানদের ব্যাক্তিগত দায়িত্ব বা কমিটমেন্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে বলে বিশ্বাস লিপুর। তার কথা, ‘রশিদ খান আর মুজিবুর রহমান যেচে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন ও উত্তরণে ভূমিকা রাখছেন। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কতটা কি করতে পারবে, এ ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে কি না, তার জবাব দেবে সময়। তবে এখন রশিদ ও মুজিবরা যে কমিটমেন্ট শো করেছে তা দারুন প্রশংসাযোগ্য। আমার মনে হয় রশিদ ও মুজিবদের ব্যক্তিগত কমিটমেন্ট অনেক অনেক বেশি। তারা নিজের ক্যারিয়ারের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগি ও যত্মশীল। তাদের কোচ কারা, তাদের মান কি, তার চেয়ে বেশি মুজিব ও রশিদ ভালো ছাত্র বলে মনে হয় আমার। তারা নিজেদের তৈরি করতে, ফিটনেস ও পারফরমেন্স ধরে রাখায় বেশি মনোযোগি।’

অন্যদিকে নাজমুল আবেদিন ফাহিমের মত আসলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই শুধু নয়। আফগানরা ক্রিকেটেই (সব ফরম্যাটে) উন্নতি করেছে, করছে এবং সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য-পরিকল্পনা এবং দৃঢ় সংকল্পই হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করা।’

ফাহিম যোগ করেন, ‘আফগানদের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব ভালোমতো নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করা। আফগানরা ক্রিকেট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আর আমরা করি ঘরোয়া ক্রিকেটে সারভাইভ করার জন্য। আফগানদের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্ব ক্রিকেটে ভাল করা আর আমাদের লক্ষ্য হলো শুধু জাতীয় দলে খেলা।’

কোচ ও বিশেষজ্ঞ ফাহিমের শেষ কথা, ‘আসলে আমাদের ক্রিকেটে বড্ড বেশি ফাঁকি-ঝুকি। আমরা কেউই নিজেদের করণীয় কাজগুলো ঠিকমত করছি না। ক্রিকেটার, কোচ, সংগঠক, বোর্ডকর্তা সহ আমরা সবাই একটি ভুলের জগতে বাস করি। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ও করণীয় সম্পর্কে সচেতনতার অভাব। সামনে এগুতে হলে এ অবস্থার উন্নতি খুব জরুরি।’

এআরবি/আইএইচএস