আল্লাহ শিগগিরই তোমাদের উপর তার শাস্তি নাজিল করবেন; তোমরা তখন তার কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া কবুল করবেন না। এ সময়টি কখন? কেনই বা সে সময়টিতে দোয়া কবুল করা হবে না? কাদের দোয়াই বা কবুল করা হবে না? এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা কী?
Advertisement
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা হচ্ছে যে, তোমরা ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো। যারা এর ব্যতিক্রম করবে তাদের দোয়া কবুল করা হবে না। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি সুস্পষ্ট করেছেন। তাহলো-
১. হজরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শিগগিরই আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আজাব পাঠাবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে দোয়া করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
২. হজরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঐ পবিত্র সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ, নিম্নোক্ত দুটি বিষয়ের মধ্যে একটি অবশ্যই হবে। হয় অবশ্যই তুমি সৎকাজের আদেশ করবে এবং মন্দকাজ থেকে নিষেধ করবে; নতুবা অনতিবিলম্বে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর আজাব নাজিল করবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে; কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না।’ (তিরমিজি, আত-তারগিব, মুসনাদে আহমাদ, আবু ইয়ালা, বায়হাকি)
Advertisement
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আল জাযারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘الْمَعْرُوفِ হলো এমন এক পরিপূর্ণ অর্থ প্রদানকারী ইসম বা নাম; যার দ্বারা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং নৈকট্য পাওয়ার উপায়, মানুষের সাথে সদাচরণসহ শারিয়তের প্রত্যেকটি হালাল-হারাম বিধান যথাযথভাবে উপলব্ধি করা যায়।’ (তুহফাতুল আহওয়াযি)
আর হাদিসের এ অংশের (وَلَا يُسْتَجَاب لكم) উদ্দেশ্যমূলক অর্থ হচ্ছে, আমাদের পক্ষ থেকে সৎকাজের আদেশ বা মন্দ কাজের নিষেধ উভয়টি একত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর পক্ষ থেকে আজাব নেমে আসবে। তখন ঐ আজাব থেকে বাঁচার জন্য দোয়া করা হলে তা তখন আর কবুল করা হবে না।
৩. হজরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ; নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের জন্য আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। তা না হলে আল্লাহ তাআলা শিগগিরই তোমাদের উপর তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তার কাছে দোয়া করলেও তিনি তোমাদের সেই দোয়া গ্রহণ করবেন না।’
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, যেসব বান্দা মানুষকে সৎ পথের দিকে আহ্বান করবে না। মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করবে না; তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। আর তাদের দোয়াও কবুল হবে না।
Advertisement
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সৎ কাজ বাস্তবায়ন এবং অসৎ কাজ বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করা। তবেই বান্দা এ দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবে এবং তাদের দোয়াও কবুল হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম