জাতীয়

কোনো পোশাকশ্রমিক বুস্টার ডোজ নেননি: সিপিডি

দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক। কিন্তু এখনো বুস্টার ডোজ নেননি কেউ।

Advertisement

বুধবার (৩১ আগস্ট) ‘সাম্প্রতিক আরএমজি প্রবৃদ্ধি: উপযুক্ত কর্মসংস্থান সম্পর্কে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি’ শীর্ষক আলোচনায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এ আলোচনার আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হাতেমসহ এ খাতের শ্রমিক নেতা এবং শ্রমিক সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানরা। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডি গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

৫১টি পোশাক কারখানার ১২৪৪ জন শ্রমিকের ওপর এ জরিপ পরিচালিত হয়। যেখানে ৬০ শতাংশ নারী আর ৪০ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক অংশ নেন।

Advertisement

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার সময়ে তৈরি পোশাক খাতে উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে, ওই সময় গড়ে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ শ্রমিককে জোর করে কাজ করানো হয়েছে। যেখানে পুরুষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি ছিল। প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ৪২ শতাংশ কারখানা কোনো নিয়মের মধ্যে নেই। ৪৫ শতাংশ কারখানা ভাড়ায় চলে। ২৫ শতাংশ কারখানার সার্টিফিকেট নেই।

জরিপে ওঠে এসেছে প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক কারখানাকে কলকারখানা পরিদর্শন বিভাগের পরিদর্শকদের বাড়তি অর্থ ঘুস হিসেবে দিতে হয়েছে যা অবৈধ।

তৈরি পোশাকশিল্পের করোনার টিকার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ২০ শতাংশ শ্রমিক। তবে, যাদের ওপর জরিপ করা হয় তারা কেউই বুস্টার ডোজ নেননি।

শ্রমিকদের টিকা নেওয়ার বিষয়ে কারখানার মালিকপক্ষ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, শ্রমিকদের টিকা নিতে গেলে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে, এত সময় ব্যয় করে তারা টিকা নিতে আগ্রহ হন না। তাই করোনার সময়ে সরকারি যেভাবে উদ্যোগে নিয়ে প্রথম ডোজ দিয়েছিল সেটা চলমান রেখে দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

Advertisement

দেশে এক হাজার ১৩৪টি পোশাক কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন আছে। আসলে কী ট্রেড ইউনিয়নে শ্রমিকদের কোনো উপকার হচ্ছে। এটা নিয়ে গবেষণা করা দরকার? ট্রেড ইউনিয়নের কাজ শুধু আন্দোলন নয়, শ্রমিক-মালিকের মধ্যে সমন্বয় করা। কিন্তু আমাদের এখানে তা হয় না। কাখানার শ্রমিকরা স্ব উদ্যোগে ট্রেড ইউনিয়ন করেন না। বাইরের লোকজন এটা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মালিকপক্ষ।

কারখানায় নারী শ্রমিক কমে যাওয়ার যুক্তি হিসেবে মালিকদের দাবি যন্ত্রের ব্যবহার যত বাড়বে শ্রমিক তত কমবে। এখন মেশিন চালাতে হলে দক্ষতার দরকার হয়। বেশিরভাগ নারী শ্রমিকের এক্ষেত্রে দক্ষতার অভাব রয়েছে। তাই নারী শ্রমিক কমছে। তাই নারীদের ধরে রাখতে হলে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

তবে, শ্রমিক নেতারা জানান, এ পর্যন্ত যেসব শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের উদ্যোগ নিয়েছে তাদেরই চাকরি হারাতে হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটিতে বৈষম্যের অভিযোগ করে শ্রমিকরা জানান, সরকারি অফিসে মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস। পোশাকশ্রমিকদের চার মাস, এ বৈষম্য কমাতে হবে। এছাড়া কাগজে কলমে মাতৃত্বকালীন ছুটি কথা থাকলেও তা বেশিরভাগ শ্রমিক পান না। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি নয়, চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।

শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। শ্রমিকের জীবনে সংকট বাড়ছে। চার বছর আগে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে মজুরি বাড়ানোর কথা এখনো সরকার বিবেচনা করছে না। যতদ্রুত সম্ভব মজুরি বাড়ানো আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরকারের তথ্যানুযায়ী, দেশে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১৩ কোটি ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১১ জন, দুই ডোজের আওতায় এসেছেন ১২ কোটি ১২ লাখ ১৮ হাজার ৮৫৪ জন। আর এসময়ে বুস্টার ডোজের আওতায় এসেছেন ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯ জন।

এমওএস/এমএএইচ/এএসএম