খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ২১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার (দুই হাজার ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা) ব্যয়ে রাশিয়া থেকে জিটুজি পর্যায়ে পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করবে সরকার। একই সঙ্গে ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করা হবে।
Advertisement
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল বারিক বলেন, আজকের ক্রয় কমিটিতে টেবিলে উত্থাপিত প্রস্তাবসহ মোট ১৫টি প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে সবগুলো প্রস্তাবই অনুমোদন দেওয়া হয়।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, টেবিলে উত্থাপিত প্রস্তাবের মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাশিয়া থেকে জিটুজি পর্যায়ে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব। প্রতিকেজি গমের মূল্য ধরা হয়েছে ৪০.৮৫ টাকা। রাশিয়ার একটি কোম্পানিকে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
Advertisement
কোন কারেন্সিতে কেনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবে টাকার অঙ্ক দেওয়া হয়েছে। মিটিংয়ে কোন কারেন্সিতে কেনা হবে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ডলারে কেনা হবে। সে হিসাবে ২১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে করা হয়েছে। প্রতি টন ৪৩০ মার্কিন ডলার।
সভায় অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হলো
ভারত থেকে জিটুজি পর্যায়ে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪১৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ৭০ হাজার টন লটের চাল আসবে পোর্টের মাধ্যমে। এরফলে প্রতিকেজি চালের দাম পড়বে ৪২.১৩ টাকা। ৩০ হাজার টন লটের ল্যান্ডের মাধ্যমে আসবে। এতে প্রতিকেজি ৪০.৭০ টাকা। আর প্রতিটনের দাম পড়বে ৪৪৩.৫০ মার্কিন ডলার৷
এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে জিটুজি পর্যায়ে দুই লাখ টন থাই নন-বাসমতি চাল এবং ভারত থেকে ৩০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দুটি মিলে একত্রে দুই লাখ ৩০ হাজার টন। নন-বাসমতি চাল প্রতিকেজি ক্রয়মূল্য ৪৯.৪৯৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৬.৯৩ টাকা। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ভারতের সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট কনজুমার করপোরেশন সোসাইটি লিমিটেড দিল্লি সেখান থেকে ক্রয় করা হবে। নন-বাসমতি প্রতিটন ৫২১ মার্কিন ডলার। ৩০ হাজার টন আতপ চাল প্রতিটন ৪৯৪ মার্কিন ডলার। মোট এক কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। সর্বমোট দুই লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানিতে খরচ হবে ১১ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলা টাকায় এক হাজার ১৩০ কোটি ৬৯ টাকা।
Advertisement
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও গম আমদানিতে সংকটে পড়ে। এরই মধ্যে গত মে মাসে বাংলাদেশে গমের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী দেশ ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে সংকট আরও ঘনীভূত হয়।
বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্যশস্য ও সার কিনছে বলে ব্রিটিশ এক সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি দেননি। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের ২৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে ডলার দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে খাদ্যশস্য ও সার আমদানি করতে পারবো, এ ধরনের আমদানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মজুত ছিল। ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে অস্থিরতার কারণে কিছু দরপত্র বাতিল করতে হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ক্রেমলিনের অভিযান শুরুর পর রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর ব্যাংকিং লেনদেনসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে ঋণপত্র খোলা, পণ্যের চালানের নিশ্চয়তা পাওয়ার মতো বিষয়গুলো ঝুলে ছিল। এর পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার কারণে লেনদেনের ধরন নিয়েও অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচল এখনো নিরাপদ ছিল না। তবে সম্প্রতি রাশিয়ার কৃষি ও খাদ্যপণ্য আমদানি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
আইএইচআর/বিএ/এএসএম