মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা একে অন্যকে ‘সালাম’ দিয়ে কুশল বিনিময় করে। অথচ এ সালাম দেওয়াকে পুঁজি করে রাজধানীতে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো একটি চক্র। তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে প্রথমে চলার পথে সালাম দিয়ে গতিরোধ করতো। এরপর পরিচিত হওয়ার ভান করে সময়ক্ষেপণ করতো। তখন আশেপাশে ঘাপটি মেরে থাকা চক্রের অন্য সদস্যরা এসে ওই লোককে ঘিরে ধরতো। হুমকি দিয়ে বা ভয়ভীতি দেখিয়ে লুটে নিতো সর্বস্ব।
Advertisement
গত ২১ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডাক ভবনের সামনে সালাম দিয়ে পথরোধ করে লুৎফর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী। মামলার তদন্তে নেমে চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন মো. পিন্টু মিয়া (৩২) ও মো. সুমন (৩৫)।
বুধবার (৩১ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, রাজধানীতে ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে নতুন ছিনতাই চক্রের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে। ছিনতাইকারীরা টার্গেট ব্যক্তিকে পথে সালাম বিনিময়ের প তার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ভান করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। সাধারণত, সালাম দিলে পরিচিত ভেবে মানুষজন একটু থামেন, চক্রের সদস্যরাও তাদের থামিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন।
Advertisement
আশপাশে তাদের অন্য সদস্যরা ঘাপটি মেরে বসে থাকতো। তখন তারাও এসে টার্গেট ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে সঙ্গে যা আছে দিয়ে দিতে বলে। হুমকি দিয়ে কাজ না হলে অস্ত্র আছে বলে ভয়ভীতি দেখায়। এভাবে টার্গেট ব্যক্তির সবকিছু নিয়ে সটকে পড়তো তারা।
ডিসি বলেন, যেহেতু তাদের কাছে কোনো অস্ত্র বা আলামত থাকতো না, সাধারণ মানুষের মতোই ঘোরাফেরা করতো তাই তাদের চিহ্নিত করে গ্রুপটিকে ধরা বেশ কঠিন ছিল।
গত ২১ আগস্ট আগারগাঁও ডাক ভবনের সামনে এক ব্যক্তির কাছ থেকে এভাবে ৮০ হাজার টাকা লুটের ঘটনায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দুজনকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। দুজনই ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
ডিসি এইচ এম আজিমুল হক আরও বলেন, মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) কারওয়ান বাজার এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে র্যাব সদস্য পরিচয়ে চাঁদাবাজি করা মো. এনায়েত শেখ (৩৬) ও আব্দুর রহমান মুন্সি (৪৬) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
Advertisement
যাদের সঙ্গে ওয়াকিটকি থাকতো এবং নিজেদের র্যাব সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা কারওয়ান বাজার মাছের আড়তে শ্রমিকদের কাছে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। বিষয়টি শ্রমিকরা পুলিশকে জানালে ভুয়া র্যাব সদস্য দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ ধরনের প্রতারণা এড়াতে মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, পথে কেউ সালাম দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে চাইলে এ বিষয়ে যেন সবাই সতর্ক থাকেন। কোনোভাবেই দাঁড়ানো যাবে না বা এমন হলে পুলিশকে বিষয়টি জানাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, অনেক প্রতারক ওয়াকিটকি সঙ্গে রেখে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছে। এ বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে।
টিটি/এমকেআর/এমএস