আইন-আদালত

তলবে হাইকোর্টে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দাখিল করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হয়েছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান (বিএফআইইউ) মাসুদ বিশ্বাস।

Advertisement

বুধবার (৩১ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

হাইকোর্টের আদেশের পরেও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে সুইস ব্যাংকে অর্থপাচার সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দাখিল করায় গতকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টের একই বেঞ্চ মাসুদ বিশ্বাসকে তলব করে বুধবার বেলা ১১টায় হাইকোর্টে উপস্থিত হতে আদেশ দেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বেলা পৌনে ১১টায় হাইকোর্টে উপস্থিত হন মাসুদ বিশ্বাস।

Advertisement

সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে অর্থ জমাকারী বাংলাদেশিদের বিষয়ে সরকার নির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য চায়নি বলে সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রদূত বক্তব্য দেন। তার এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর পক্ষ থেকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে পাওয়া তথ্য প্রতিবেদন আকারে দাখিল করা হয়। দাখিল করা কাগজপত্রে কারও নাম, সিল ও পদবি উল্লেখ না থাকায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর তথ্যাদি আদালতে তুলে ধরেন। এরপর অর্থ নিয়ে কাজ করে আসা বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করেন আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে একপর্যায়ে আদালত বলেন, সাদা কাগজে লিখে দিয়ে দিলেন। নাম-ঠিকানা-পদবি নেই। গোঁজামিল হয়ে গেল না? বিষয়টি কি এমন যে ধরি মাছ না ছুঁই পানি। যা হওয়ার হোক, যেন তার নাম (আদালতে দাখিল করতে যে কর্মকর্তা কাগজ দিয়েছেন) না আসে। এত ভয় কিসের? যে কথা লিখেছেন, তার নিচে সই দিলেও হতো। নাম লিখলেন না, সই দিলেন না, যা খুবই উদাসীনতা। এটি কি কেউ গ্রহণ করবে? এই তথ্যাদির ওপর নির্ভর করা যায় না। এমন কাগজ দাখিল করা দুঃখজনক।

পরে আদালত বিএফআইইউর প্রধানকে তলবের আদেশ দেন। এসময় দুদকের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত সুইস ব্যাংক বা কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি।

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পরদিন হাইকোর্ট সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে অর্থ রাখা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চাওয়া হয়েছিল কি না, তা জানতে চান গত ১১ আগস্ট। স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ দুদক এবং রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পদক্ষেপ জানতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এসব বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছিল দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে ওইদিন (১১ আগস্ট) আদালত জানতে চান কী পরিমাণ অর্থ সুইচ ব্যাংকে পাচার হয়েছে? এ বিষয়ে সরকার ও দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে? তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বা দুদক কোনো তথ্য দিতে পারেনি আদালতকে। এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আবার সামনে আসে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৪ আগস্ট বিষয়টি আদালতে ওঠে।

ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতে বলেছিলেন, বিএফআইইউর মাধ্যমে ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে একজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, সুইজারল্যান্ড থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুদক বিএফআইইউর কাছে অনুরোধপত্র দেয়। এরপর বিএফআইইউ অনুরোধ করে সুইজারল্যান্ডের কাছে একটি তথ্য পেয়েছে, তা-ও অসম্পূর্ণ।

১৪ আগস্ট হাইকোর্ট লিখিতভাবে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে ঘটনা সম্পর্কে হলফনামা আকারে তথ্যাদি দাখিল করতে নির্দেশ দেন। ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক হলফনামা আকারে কাগজসহ লিখিত বক্তব্য আদালতে দাখিল করে। পরে মঙ্গলবার বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতে ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর কাগজপত্র তুলে ধরে মঙ্গলবার শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিএফআইইউ ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য সরবরাহের জন্য ১৩ বার সুইজারল্যান্ড এফআইইউকে অনুরোধ জানায়। এরমধ্যে একজন ছাড়া অন্যদের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম