দেশজুড়ে

১৫ স্বেচ্ছাসেবীর পৌনে ৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর হাসনাত ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনেশিয়ান খবির উদ্দীনের বিরুদ্ধে এমএইচভি পদে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের ৭ মাসের সম্মানির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা ৭ মাসের ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা ফেরত চেয়ে সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

Advertisement

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের স্বাক্ষর জাল করে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ইপিআই টেকনেশিয়ান ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তবে সিভিল সার্জন ডা. বোরহান-উল আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, জুন মাসে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের সম্মানীর টাকা পাস করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার ১২টি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানীর টাকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে চিরিরবন্দরে এ সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেল ৩টায় সিভিল সার্জন বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন বিক্ষুব্ধ ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। ভয়াবহ করোনা চলাকালীন সময় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে চিরিরবন্দর উপজেলায় টিকাদান কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারা।

Advertisement

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি করোনাকালীন সময় সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আসছি। গত ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অদ্যাবধি ১৫ মাস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরহীতীনভাবে কাজ করে আসছি। টিকাদান কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে দুপুরে কোনো প্রকার খাবারের ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনেশিয়ান খবির উদ্দীনের কাছে সম্মানীর টাকা চাইতে গেলে স্বেচ্ছাসেবকদের চাকরিচ্যুত ও শোকজ করার হুমকি প্রদান করা হয়। এরইমধ্যে ভরত রায় প্রত্যয়কে শোকজ করা হয়েছে। জেলার অন্যান্য ১২টি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের ভাতার টাকা প্রদান করা হলেও চিরিরবন্দরে তা করা হচ্ছে না। সরকার কর্তৃক একজন স্বেচ্ছাসেবীকে প্রতিদিন সম্মানী ভাতা হিসেবে ৩৫০ টাকা প্রদান করার নির্দেশ থাকলেও তারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে ১৬০ টাকা করে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদান করেছেন।

চলতি বছর ৩০ জুন গত ২১-২২ অর্থবছরের ৭ মাসের ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের জন্য বরাদ্দকৃত ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা উত্তোলন করেন ইপিআই টেকনেশিয়ান খবির উদ্দীন। টাকা উত্তোলনের পরও তিনি আমাদেরকে জানান যে আমাদের নামে বরাদ্দকৃত কোনো টাকা আসেনি।

স্বেচ্ছাসেবক ভরত রায় প্রত্যয়, মুক্তা রানী, রাকিবুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, কাকলী অভিযোগ করেন, তিনি (খবির উদ্দীন) টাকা উত্তোলনের পর বিষয়টি আমরা জানতে পারি। ইপিআই টেকনেশিয়ান ১৫ জন স্বেচ্ছাসবেকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া মাস্টার রোল তৈরি করে জনপ্রতি ৫৮ হাজার ৮০০ টাকা হিসেবে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।

Advertisement

পরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর হাসনাতের কাছে গেলে তিনি আমাদের জানান, ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকার আমার নামে কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে। আমার নামে বরাদ্দকৃত টাকা আমি যা খুশি তাই করবো। এমনকি একাধিকবার ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে তাগিদ দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা সকলেই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। সম্মানীর টাকা না পেয়ে আমরা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছি। তাই আমরা আমাদের পাওনা টাকা চাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তানভীর হাসনাত বলেন, যেসব অভিযোগগুলো করা হচ্ছে সেগুলো ভিত্তিহীন ও তাদের দাবিগুলো অযৌক্তিক। তাদের নামে অর্থ তোলা হয়েছে, কিন্তু এখনও বিতরণ শুরু হয়নি। যে ৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা এসেছে তা প্রায় ৩০০ জন স্বেচ্ছাসেবীর নামে। কিন্তু তারা এই অর্থ ১৫ জনের মধ্যেই ভাগ করে দেয়ার দাবি তুলেছে যা ঠিক নয়। হয়তো তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে এবং আমার কাছে চাঁদাবাজি করার জন্য উসকে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআই টেকনেশিয়ান খবির উদ্দীন বলেন, তাদের টাকা তুলে রাখা হয়েছে। সময়মতো ভাগ করে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. বোরহান-উল আলম সিদ্দিকী বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। জুন মাসে জেলার ১৩টি উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানীর টাকা প্রদান পাস করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১২টি উপজেলায় সম্মানীর টাকা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করেছে। কিন্তু চিরিরবন্দরে কী কারণে এমন সমস্যা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

এমদাদুল হক মিলন/এফএ/জেআইএম