দেশজুড়ে

দুধ বিক্রি করে খরচের টাকাই উঠছে না খামারিদের

গোখাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন সিরাজগঞ্জের খামারিরা। খাদ্যের মাত্রাতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণে দুধ বিক্রি করে খরচই উঠছে না বলছেন তারা। এ অবস্থায় খামার ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন খামারিরা।

Advertisement

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা খামারে উৎপাদিত দুধ পাইকার ও বিভিন্ন কোম্পানির কাছে প্রতি লিটার ৪৫-৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। আর খোলা বাজারে বিক্রি করছেন ৫৫-৬০ টাকা দরে। এতে তাদের খরচের টাকাই উঠছে না।

১৯৭৩ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা মিল্কভিটা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ঘিরে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠে গরুর খামার।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জে ১৩ হাজার ৪৮০টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে গবাদিপশু রয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ৩৫ হাজার। এসব খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ লাখ লিটার দুধ পাওয়া যায়।

Advertisement

বেলকুচি উপজেলার সরকার ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী আলীম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার ফার্মে ২৯টি গরু ছিল। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে ফার্মে ৯টি গরু রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে গরুর পেছনে আমার প্রতিদিন গড়ে খরচ হয় ৩৬০০ টাকা। খামার থেকে দুধ বিক্রি করে আয় হয় দুই হাজার। খাদ্যের দাম যদি না কমে তাহলে খামার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

জেলার শাহজাদপুর উপজেলার খামারি সামাদ ফকির জানান, তার একটি গরুর খামার রয়েছে। খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ লিটার দুধ পান। এসব দুধ মিল্কভিটা কোম্পানিতে দেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বন্যায় গো-চারণভূমি তলিয়ে গিয়েছিল। এখন পানি নেমে গেলেও আমরা ঘাসের আবাদ করতে পারিনি। তাই কেনা খাবার খাওয়াতে হচ্ছে। এখন দুধ বিক্রি করেও খরচের টাকা উঠছে না।’

Advertisement

খামারি আবুল কালাম বলেন, ‘গরুকে সবুজ ঘাস খাওয়ালে বেশি দুধ দিতো। বৃষ্টি ও বর্ষার কারণে কাঁচা ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। যে কারণে খামারের গরুকে খড়, ভুসি, খৈল, সয়াবিনসহ দানাদার খাবার দিতে হচ্ছে। ঘাস না খাওয়ার কারণে দুধ হচ্ছে কম। খাদ্যের দামতো বাড়ার ওপরে রয়েছে। সে তুলনায় বাজারে দুধের দাম পাচ্ছি না।’

পোতাজিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, বাজারে প্রতি লিটার দুধের দাম ৪০-৪৫ টাকা। এই দামে দুধ বিক্রি করে খামারিদের চলা কষ্টকর হয়ে গেছে।

গোখাদ্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা হাজী মেসলেম উদ্দিন জানান, কয়েকদিনের ব্যবধানে গবাদিপশুর সবধরনের খাদ্যের দাম বেড়েছে। ভুসির বস্তা আগে ছিল ১৪০০ টাকা। এখন তার দাম বেড়ে হয়েছে ১৫৫০ টাকা। এছাড়া খৈল ২৭০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩২০০, গম দুই হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২২৫০ এবং লবণ প্রতি বস্তা ৭৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৫০ টাকা। অন্যান্য খাদ্যের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, কেনা খাবার খাওয়ানোর কারণে গবাদিপশুর দুধ উৎপাদন কমে গেছে। এতে দুধের দামের তুলনায় খাবারের খরচ বেড়ে গেছে। কাঁচা ঘাস চাষাবাদ করে খাওয়াতে পারলে খামারিদের খরচ কমে যাবে। সেইসঙ্গে তারা স্বস্তি ফিরে পাবেন।

এসআর/এএসএম