দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে জোড়া থেকে আলাদা হওয়া সেই মনি-মুক্তা এবার ১৪ বছরে পা দিয়েছে। তারা দুজনে স্থানীয় ঝাড়বাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ভালো আছে জোড়া থেকে আলাদা হওয়া এই দুই কিশোরী। সোমবার (২২ আগস্ট) বাড়িতেই মনি-মুক্তার জন্মদিন পালন করা হবে বলে জানা গেছে।
Advertisement
গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ঘরোয়া পরিবেশে জন্মদিন পালন করা হলেও এ বছর বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনি-মুক্তার বন্ধুবান্ধবসহ প্রতিবেশী এবং গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে বলে জানা গেছে। মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মনি মুক্তা সুস্থ এবং ভালো আছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নাচ শিখছে। উপজেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে তারা।
জন্মদিনে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে মনি-মুক্তা বলে, আমরা চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। দেশবাসীর দোয়া এবং সহযোগিতা পেলে আমরা অবশ্যই আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো।
Advertisement
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামে জয় প্রকাশ পালের বাড়ি। জয় প্রকাশ পালের স্ত্রী কৃষ্ণা রাণী পালের গর্ভে ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মনি এবং মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। পরে রংপুরের চিকিৎসকরা ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে যমজ বোনকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ ক্রমে ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে মনি-মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।
২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অপারেশনের মাধ্যমে মনি-মুক্তা আলাদা হয়। বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।
মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ পাল জানান, সে সময় গ্রামের মানুষ এটাকে অভিশপ্ত জীবনের ফসল বলে প্রচার করতে থাকে। সমাজের নানা কুসংস্কারে প্রায় একঘরে হয়ে পড়ি। সমাজের নানা অপবাদে জোড়া লাগা সন্তান নিয়ে গ্রামে আসিনি। হতাশার মাঝে স্বপ্ন দেখি মনি-মুক্তাকে নিয়ে। বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকি তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়ার জন্য। আমাদের স্বপ্ন বাস্তব হয় ডা. এ আর খানের কারণে। সেই মানুষটির কারণে আমাদের এই দুই সস্তানের নতুন করে বেঁচে থাকা।
মনি-মুক্তার মা কৃষ্ণা রাণী পাল জানান, ২০০৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে প্রথমে ২১ ফ্রেব্রুয়ারি পার্বতীপুরে বাবার বাড়িতে আসি। কিছুদিন সেখানে থাকার পর নিজগ্রাম বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় মনি-মুক্তাকে নিয়ে আসি। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে এবং ডা. এ আর খানের সাফল্যে আমরা মনি মুক্তাকে স্বাভাবিকভাবে ফিরে পেয়েছি। আমরা সব কষ্ট ভুলে তাদেরকে চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। মনি-মুক্তা এবং পরিবারের জন্য সকলের দোয়া কামনা করেছেন তিনি।
Advertisement
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/জেআইএম