জাতীয়

নতুন কর আরোপে মালয়েশিয়ায় চাপের মুখে বিদেশি শ্রমিকরা

মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের উপর বার্ষিক কর বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন এ ঘোষণা অনুযায়ী বিদেশি প্রত্যেক শ্রমিককে বাৎসরিক আড়াই হাজার রিঙ্গিত কর দিতে হবে। যা আগে ছিল ১ হাজার ২শ’ ৫০ রিঙ্গিত। এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ কর বাড়ানোর ফলে সর্বত্র বইছে আলোচনা-সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির শিল্প মালিকরাও। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় এ বাড়তি চাপ ব্যবসায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তারা।কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নতুন করে বিদেশি শ্রমিকের উপর বার্ষিক কর বাড়ানোর ঘোষণায় কড়া সমালোচনা করেছে মালয়েশিয়ার ৫৫টি স্থানীয় ইন্ড্রাস্ট্রি চেম্বার ও ট্রেড অর্গানাইজেশন।মালয়েশিয়া কিনিতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শিল্প মালিকদের সংগঠন এফএমএম বলেছে, ইতোমধ্যে সরকার বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যে নতুন কর কাঠামো ঘোষণা করেছে, তা হতাশাজনক। সরকার এ ক্ষেত্রে শিল্প মালিকদের অবস্থা বিবেচনা করেনি। মালয়েশিয়ায় কর্মরত অভিবাসী শ্রমিককে এখন থেকে লেভি দিতে হবে। আগে লেভির এই অর্থ পরিশোধ করতো নিয়োগকর্তারা।সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর অংশ হিসেবে বিদেশি শ্রমিকদের কর বাড়ানোর এ পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো। অ্যাসোসিয়েটেড চায়নিজ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি মালয়েশিয়ার ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল তেও চিয়াং কক বলেছেন, আমরা এর আগে অনেক সভা ও বৈঠকে বলেছি রাজস্ব বাড়ানোর প্রক্রিয়া হিসেবে কখনোই বিদেশি শ্রমিকদের উপর কর বাড়ানো উপায় হতে পারে না। বরং বিদেশি শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।তবে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করা রাজস্ব বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া হতে পারে বলে সে দেশের ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তারা বলছেন, দেশটিতে ৪০ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিককে বৈধতা দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকার ৫শ’ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত অতিরিক্ত আয় করতে পারবে।মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ম্যানুফ্যাকচারার্স এবং নির্মাণ কোম্পানিগুলোকে প্রতি বিদেশি শ্রমিকের জন্য বাৎসরিক আড়াই হাজার রিঙ্গিত কর দিতে হবে। এর আগে এ করের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৫০ রিঙ্গিত।দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী জাহিদ হামিদি গত রোববার (৩১ জানুয়ারি) বলেন, নতুন এই কর ব্যবস্থায় সরকার আড়াইশ’ কোটি রিঙ্গিত রাজস্ব আয় করবে।এদিকে মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এছাড়া অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে প্রায় এর দ্বিগুণ। এ ব্যাপারে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিযুক্ত শ্রম বিষয়ক কাউন্সিলর মো. সাইয়েদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ‘শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সাধারণত নিয়োগদাতারাই লেভি দিয়ে থাকেন। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকারের নতুন এক ব্যবস্থার আওতায় শ্রমিকদের উপর লেভি পরিশোধের দায় চাপিয়ে দিয়েছে।’সাইয়েদুল ইসলাম আরো জানান, বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক নেয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে শ্রমিকদেরকে নতুন আরোপিত লেভি দেয়া থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্যও দেশটির সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।তবে নতুন এই লেভি আরোপের ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা নতুন করে চাপের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ কর্মকর্তারা। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘যেসব শ্রমিক মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং যারা নতুন করে আসবেন তাদের সবাইকে বছরে একবার করে লেভি দিতে হবে। ফলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য যারা নাম নিবন্ধন করেছেন তাদেরকেও লেভি দিতে হবে।’এর ফলে মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের অভিবাসন ব্যয় বাড়বে কি না জানতে চাইলে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘লেভির কারণে অভিবাসন ব্যয়ের ওপর কোনো রকম প্রভাব পড়বে না।’আরএস/এসএইচএস

Advertisement