দেশজুড়ে

৬ শিক্ষকের স্কুলে পাঠদান করান একজন!

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাং পাড়া এলাকার বাসিন্দা পাইগ্য খ্যাং। তার মেয়ে খামতাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তবে সে অ, আ, আ-কার, এ-কার ১, ২ কিছু চেনে না। এমনকী স্কুল ও তার শিক্ষকদের নামও জানে না।

Advertisement

পাইগ্য খ্যাংয়ের ভাষ্য, শিক্ষকের অবহেলায় শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখতে পারছে না। তারা ঠিকমতো স্কুলেও আসেন না। এ অবস্থায় শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা। তারা তাদের সন্তানকে অন্যত্র ভর্তি করানোর চিন্তাভাবনা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামতাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। এদের মধ্যে চারজন সরকারি। বাকি দুজন এনজিও থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত। তারা নিয়মিত স্কুলে না আসায় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা।

সরেজমিন খামতাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, স্কুল খোলার দিনেও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। দ্বিতল ভবনের স্কুলটিতে ছয়টি কক্ষ থাকলেও একটি কক্ষে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে পাঠদান।

Advertisement

আলাপ করে জানা যায় ওই শিক্ষকের নাম কিংশুক। এক মাস আগে যোগদান করেছেন। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে পাঠদান দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, স্কুলটিতে তিনিসহ ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। বাকি পাঁচ শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত না থাকায় বাধ্য হয়ে এক কক্ষেই সবাইকে পাঠদান করাতে হচ্ছে।

শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও দেখা গেলো অনিয়মিত উপস্থিতির চিত্র। পরে স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আরেক শিক্ষক রতন খ্যাংয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনিও অনুপস্থিত।

স্কুলের পাশে শিক্ষিকা চেওজির বমের বসতঘর। তাকেও উপস্থিত পাওয়া যায়নি বিদ্যালয়ে। পরে খবর পেয়ে তিনি স্কুলে আসেন। তিনি জানান, পরিবারের জন্য পানি আনতে গিয়েছিলেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল ৯টায় ক্লাস শুরু হয়। আর স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১২টায়। বৃষ্টি হলে শিক্ষকরা আসেন না। প্রায়সময় একজন শিক্ষক এক কক্ষে সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করান।

Advertisement

অভিভাবক পাইগ্য খ্যাং জাগো নিউজকে বলেন, তার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু অ, আ, আ-কার, এ-কার ও ১, ২ পর্যন্ত চেনে না। জানে না স্কুল কিংবা শিক্ষকের নাম। তাই প্রথম শ্রেণিতেই রেখে দিতে অনুরোধ করেন প্রধান শিক্ষককে। তবে প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে না আসায় দিনদিন লেখাপড়ার মান অবনতি হচ্ছে। এজন্য এলাকায় সরকারি স্কুল থাকা সত্ত্বেও এলাকার বাইরে নিয়ে শিশুদের পড়ালেখা করানোর চিন্তা করছেন অনেকে। তবে হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে সন্তানদের অন্যত্র নিয়ে পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে এই স্কুলেই সন্তানদের পড়াচ্ছেন তারা।

শিক্ষক চেওজির বম ও রতন খ্যাং জাগো নিউজকে জানান, স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষকই তেমন স্কুলে আসেন না। প্রধান শিক্ষক আনন্দ চাকমাও নিজের খেয়ালখুশি মতো আসেন। তাও মাসে দু-একবার। যখন আসেন তখন সারা মাসের উপস্থিতি সই দিয়ে যান শিক্ষক হাজিরা খাতায়। সরকারি বেতনভাতা উত্তোলন করেন সবাই নিয়মিত।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আনন্দ চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অনুপস্থিত কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন কাজে তাকে স্কুলের বাইরে থাকতে হয়। তখন তার পরিবর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক দ্বায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য এনজিও থেকে সহায়তা নিতে শনিবার (২০ আগস্ট) উপস্থিত থাকতে পারেননি।

রোয়াংছড়ি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাকারিয়া হায়দার বলেন, ‘মাসিক দুটি মিটিং হয়। তবে গতকাল কোনো মিটিং ছিল না। তাছাড়া অন্য কোনো কাজে তিনি স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে পারেন না। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম জাগো নিউজকে জানান, স্কুলটিতে এত অনিয়মের বিষয়টি তিনি অবগত নন। বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তার মাধ্যমে জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআর/জিকেএস