দাবি করা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগের নেতা ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ভাস্কর মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, চাঁদা না দিলে বুয়েটের আবরারের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
Advertisement
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা তার রুমে ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ এসেছে।
ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মতিহার হলের তৃতীয় ব্লকের ১৫৯নং কক্ষে থাকেন। পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি। গত ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগীকে ফোন করে ১২ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। ভুক্তভোগী ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় ৫ হাজার টাকার বেশি দিতে পারবেন না বলায় তাকে গলায় ছুরি ধরে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
Advertisement
নির্যাতনের পর এ তথ্য কাউকে না জানাতেও হুমকি দেওয়া হয়। সাংবাদিক ও পুলিশকে এসব জানালে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। এমনকি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শিবির বলে চালিয়ে দেবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমার পরিবার খুব দরিদ্র, তাই আমি হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারকে কিছুটা আর্থিক সহায়তা করি। হলে সার্ভিসিং কাজ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করলে আমি ৫ হাজার টাকা দিতে চাই। ৫ হাজার টাকায় হবে না বলে আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। আমি একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। প্রশাসনের কাছে বিচার চাই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সামসুল।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। কারও ইন্ধনে এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জাগো নিউজকে বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. আরিফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অনেক কিছু ভয়ে বলছেন না। সব তথ্য নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ছাত্রলীগের ওই নেতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর জাগো নিউজকে বলেন, এরইমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে আপাতত মেডিকেলে পাঠিয়েছি। আমরা তদন্ত করে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মনির হোসেন মাহিন/কেএসআর/এএসএম