বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও এর সুফল পাচ্ছেন না খামারিরা। তারা বলছেন, বাজারে যে মুরগি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খামারি তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা কেজি দরে। খামারে মুরগির দাম না বাড়লেও তাদের ব্যয় বেড়েছে। মুরগির বাচ্চা ও পোলট্রি ফিড বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সরেজমিন টাঙ্গাইলের মুরগি বাজার ও দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের নরুন্দা গ্রামের বেশ কয়েকটি পোলট্রি খামার ঘুরে এতথ্য পাওয়া গেছে।
নরুন্দা গ্রামের খামারি লোকমান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, খামারিদের কাছ থেকে পাইকারি দামে মুরগি কিনে বাজারের ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ কারণে বাজারে মুরগির দাম বেশি থাকলেও তারা লাভবান হচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ‘কোনো রোগবালাই না হলে ৩৫ দিনের একটি মুরগির পেছনে তাদের খরচ হয় প্রায় ২৩৫ টাকা। এ সময়ে ওই মুরগির সর্বোচ্চ ওজন হয় দুই-আড়াই কেজি। স্বাভাবিকভাবে ৩০ দিনের একটি মুরগির ওজন হয় ১ কেজি ৭০০-৮০০ গ্রাম। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মুরগি করলেও তাদের আয় ও খরচ সমান সমান হবে। লাভ হবে না।’
Advertisement
লোকমান হোসেন জানান, তার খামারে ৮০০ বাচ্চা ৩৫ দিন পরিচর্যায় ৪২ বস্তা খাবার (ফিড) লাগে। এতে খরচ পড়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৪ টাকা। এছাড়া ওষুধ বাবদ ছয় হাজার, তুস/ভুষি বাবদ ছয় হাজার, বিদ্যুৎ বাবদ তিন হাজার আর বাচ্চার দাম বাবদ দুই হাজার ৪০০ টাকা খরচ হয়।
তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে ৫০ কেজির এক বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ছিল ১৭০০ টাকা। এখন সেই বস্তার দাম হয়েছে ৩৩৭০ টাকা। অস্বাভাবিক হারে খাবারের দাম বাড়ার পরও আবার শুনছি দাম বাড়বে। এতে খামারিদের ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
একই গ্রামের খামারি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে ২১০-২২০ টাকা দরে মুরগি বিক্রি হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে আমি গত চালানে ১৩০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি করেছি। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে। ফলে খামারিরা তেমন কোনো সুফল পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, বাজারে যেখানে ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে মুরগি বিক্রি হচ্ছে, সেখানে অবশ্যই আমাদের পাইকারি ১৭০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি করার কথা ছিল। তবে এখনো শুনছি মুরগির পাইকারি বাজার ১৩০-১৪০ টাকা।
Advertisement
খামারি শফিকুল ইসলাম জানান, অস্বাভাবিকভাবে মুরগির বাচ্চা আর খাবারের দাম বেড়েছে। গত ৭-৮ মাসেই খাবারের দাম বেড়েছে এক হাজার টাকা। এখন খামারিদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ সংকট। সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় গরমে মুরগির বাচ্চা স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। এরই মধ্যে তার খামারের ২০-২৫টি মুরগির বাচ্চা মারা গেছে।
ছয় মাস ধরে পোলট্রি মুরগির খামার করেছেন জহুরুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিন দফায় মুরগি বিক্রি করলেও এখন ২০ হাজার টাকা ক্ষতিতে আছি। এবারও এক হাজার বাচ্চা লালন-পালন করছি। তবে খাবারের দাম বাড়ার কারণে মুরগি বিক্রি করে লাভবান হতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না।’
পার্ক বাজারের মুরগী বিক্রেতা সবুজ বলেন, আজকে দুইশ টাকা কেজি দরে পোল্ট্রি মুরগী বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি দামে মুরগী কেনায় ওই দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বাচ্চার ও খাদ্যের দাম বাড়াসহ উৎপাদন না থাকায় মুরগীর দাম বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় পোলট্রি ফিডের দাম বাড়ছে বলে জানান আফতাব ফিডের টাঙ্গাইলের ডিলার আলভী ট্রেডার্সের ম্যানেজার মনিরুজ্জামান। তিনি জানান প্রতি কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে।
পোলট্রি ফিড ডিলার মো. রাসেল আকন্দ বলেন, কোম্পানির লোকজন বলছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তারা ভুট্টাসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপাদান অন্যান্য দেশ থেকে আনছেন। এ কারণে ফিডের দাম বেড়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রানা মিয়া জানান, পোলট্রি ফিডের দাম বাড়ায় খামারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে এ শিল্প চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। ফলে বাজারে পোলট্রি মুরগিসহ ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
এসআর/জিকেএস