চার লাখ টাকাসহ কার্যালয় ত্যাগ করার সময় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. মনিরুল ইসলামকে আটক করেছে জনতা। পরে এ ঘটনায় করা একটি মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব (চার্জ) বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল মনিরুল ইসলামের। কিন্তু তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কৌশলে বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে দপ্তর থেকে চলে যাচ্ছিলেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করেন।
খবর পেয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেক মুহিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তার সামনে তহশিলদার মনিরুল ইসলামের ব্যাগ তল্লাশি করে চার লাখ ৪০০ টাকা জব্দ করা হয়। পরে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায় এবং রাতেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেক মুহিদ বাদী হয়ে রাঙ্গাবালী থানায় মামলা করেন। পরে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এস এ শাখা থেকে গত ১০ আগস্ট ইস্যু করা এক চিঠি সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ থেকে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার কোড়ালিয়া স্পিডবোট ঘাটের এক কিলোমিটারের মধ্যে খাস আদায়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেখানে খাস আদায়ের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ, বিধিবহির্ভূতভাবে কাউখালীর মালেকার খাল ও চর ইমারশন স্লুইস খালে খাস আদায়ের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে কৃষি খাসজমি একসনা বন্দোবস্ত দেওয়া ও সরকারি সম্পত্তি যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করে জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন তহশিলদার মনিরুল ইসলাম।
Advertisement
এ কারণে গত ১০ আগস্ট পাঠানো ওই চিঠিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। বুধবার সকালে নতুন ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আ ন ম মুরাদুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল তার। দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়েই ওইদিন সন্ধ্যার দিকে অফিস থেকে চলে যাচ্ছিলেন মনিরুল ইসলাম।
চলে যাওয়ার খবর আগে থেকে টের পাওয়ায় ঘুসের টাকা পাওনাদাররা ভূমি কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নেন। তিনি ভূমি অফিসে থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শতাধিক লোক তাকে ঘিরে ধরেন এবং ঘুসের টাকা ফেরত চান।
মামলার বাদী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেক মুহিদ বলেন, ‘বুধবার নতুন তহশিলদারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি না বুঝিয়ে দিয়েই চলে যাচ্ছিলেন। পরে তার ব্যাগ তল্লাশি করে চার লাখ ৪০০ টাকা পাওয়া যায়। আদায় করা সরকারি রাজস্বের টাকা কোষাগারে জমা না দিয়ে ওই টাকা নিয়ে তিনি বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগে ওই তহশিলদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘুসের টাকা নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Advertisement
রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, গ্রেফতার তহশিলদারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ওই তহশিলদারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকালের ঘটনায়ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আব্দুস সালাম আরিফ/এসআর/জেআইএম