সাহিত্য

অভিযান সব পাঠকের কথা ভেবে কাজ করে: মারুফ হোসেন

অভিযান পাবলিশার্সের যাত্রা শুরু ২০০৫ সালে। এখন প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা এক হাজারের উপরে। এর মধ্যে বাংলাদেশের লেখকের বই আছে ৭০টির মতো। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পশ্চিমবঙ্গের প্রথম থিমনির্ভর বুকশপ হলো ‘অভিযান বুক ক্যাফে’। বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার (১৭৭৮-২০২২) ২৪৪ বছরের ইতিহাসকে এখানে থিম করা হয়েছে। নানা বাঁক বদলের ইতিহাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিপুল বইয়ের সংগ্রহ এ বুকশপকে সমৃদ্ধ করেছে।

Advertisement

অভিযান বুক ক্যাফে বহুদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বাতিঘর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই কলকাতায় একটু ছোট আয়তনে থিমনির্ভর বইয়ের দোকান শুরু করেছেন অভিযান পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী মারুফ হোসেন। পশ্চিমবঙ্গে যা প্রথম। ভারত ও বাংলাদেশের বিপুল গ্রন্থসম্ভার নিয়ে তাদের এ আয়োজন।

সম্প্রতি তিনি অভিযান পাবলিশার্স ও অভিযান বুক ক্যাফে নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: কলকাতার ‘অভিযান পাবলিশার্স’ বাংলা প্রকাশনায় একটি বহুল চর্চিত নাম। এর প্রথম দিককার কথা শুনতে চাই—মারুফ হোসেন: অভিযান পাবলিশার্সের সূচনা হয়েছিল নবারুণ ভট্টাচার্যের লুব্ধক উপন্যাসের মধ্য দিয়ে। লুব্ধক একটি কুকুর বিষয়ক উপন্যাস। লুব্ধক একটি উচ্ছেদবিরোধী, নিপীড়নবিরোধী মানবিক সচেতনতার উপন্যাস। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তুর মধ্যে দিয়েই অভিযান তার যাত্রাপথের টিউন ঠিক করে ফেলেছিল। তা হলো মানবিকতার পক্ষে সংখ্যালঘু যে কোনো মতকে সে প্রকাশ করতে সহায়তা করবে। ২০০৫ সাল থেকে কাজ শুরু করি, নয় দশকের উল্লেখযোগ্য কবি সুবীর মণ্ডল এবং রাজীব মিত্র আমাকে সাহায্য করে পাণ্ডুলিপি সিলেকশনে। ২০০৬ সালে কলকাতা বইমেলায় অভিযান প্রথম অংশ নেয়। আজ অভিযান আঠারো বছরের সাবালক। এ যাত্রাপথে বহু পাঠক, লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের অবদান আছে। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

Advertisement

জাগো নিউজ: বইবান্ধব একজন মানুষ হিসেবে আপনার পরিচিতি মানুষকে নাড়া দেয়, এই যে এত ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পধারা থাকতে এই বইয়ের ব্যবসার মতো নান্দনিক ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় কেন এলেন?মারুফ হোসেন: আসলে আমার সাহিত্যের সংস্পর্শে আসাটা লিটল ম্যাগাজিনের হাত ধরে। ফলে শুধু ব্যবসা নয় শিল্পসম্মত একটা ব্যবসা করতে চেয়েছিলাম। যেখানে আনন্দ থাকবে। সত্যি কথা, যে টাকা ও সময় প্রকাশনায় ইনভেস্ট হয়েছে; তা অন্য কোনো ব্যবসায় লাগালে আজ আরও অনেক টাকার নিশ্চয়তা থাকত। কিন্তু কাজ করার যে আনন্দ তা থাকত না। আমি আমার একটি মাত্র জীবনে আমার ভালো লাগাকে বেশি গুরুত্ব দিতে চেয়েছি।

জাগো নিউজ: অভিযানের বইমেলায় অংশগ্রহণে গায়ক-নায়ক শিলাজিতের একটি যোগসূত্র বিভিন্ন সময় আপনি স্মরণ করেন। সেই ঘটনাগুলোর কিছু যদি বলতেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য।মারুফ হোসেন: শিলাজিৎ ছাড়া অভিযানের উত্থান বেশ কয়েকবছর ব্যাহত হতো। অসুবিধা হতো। আজকের সাফল্যমণ্ডিত অভিযানের জন্য আমরা তিনজন মানুষের কথা বারবার বলি, গায়ক-নায়ক-লেখক শিলাজিৎ, কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। একেবারে শুরুর দিনগুলোয় শিলাজিৎ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বইমেলায় অভিযানের স্টল সামলেছেন। ২০০৭ থেকে ২০১২ শিলাজিৎময় অভিযান। শিলাজিতের একক পাঁচটি বইসহ মোট ছয়টি বইয়ের প্রকাশক অভিযান। ২০০৮ সালের বইমেলার শেষদিন আমাদের পাশের স্টল থেকে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি আসে। কারণ আমাদের স্টলের ভিড় আর শব্দে তাদের নাকি অসুবিধা হচ্ছিল। সেই স্টলটি ছিল তৎকালীন শাসকদলের যুব সংগঠনের। শেষ দিন, তাই স্টল থেকে সব বই নিয়ে যেতে হবে। আমরা একটু ভয়ে আছি। শিলাজিৎ থেকে গেলেন এবং স্টলের সব বই বের করে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত থাকলেন। রাত বারোটা ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে। শিলাজিৎ আসা মানে ভিড়, অটোগ্রাফ শিকারি ভক্তদের আবদার। সেই ভিড়ে অভিযানের স্টল ভরে যেত, গেট বন্ধ করে দিতে হতো, বাইরে লাইন পড়তো। একটা সদ্যজাত প্রকাশনার জন্য যা ছিল খুবই আনন্দের ও গর্বের। মানুষ হিসেবে শিলাজিৎ অনেক বড় মনের।

জাগো নিউজ: অভিযান মানসম্মত বই প্রকাশ করে। বাংলা থ্রিলার সাহিত্যকে দারুণভাবে বাজারজাতকরণ থেকে উজ্জীবিত করছে লেখক-পাঠক-সমালোচক সবাইকে। এ বিশেষ দিকটি নিয়ে বাংলাদেশের সেবা প্রকাশনী ও বাতিঘর দীর্ঘদিন থেকে সুনামের সাথে কাজ করছে—আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন?মারুফ হোসেন: অভিযান শুধু মানসম্মত বই ছাপে, ছাপতো এবং ছাপবে। তা সে সামাজিক উপন্যাস হোক বা কবিতার বই। নাটকের বই হোক বা থ্রিলার। আমাদের একটি শক্তিশালী এডিটরিয়াল টিম আছে। তাদের মতামত ছাড়া কোনো বই ছাপা হয় না। পাণ্ডুলিপি পড়ার পরে এডিটোরিয়াল টিম তাদের সম্পূর্ণ মতামত জানায় লেখককে, কোথায় কোথায় সংযোজন বা বিয়োজনের প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন তা-ও বলা হয় লেখককে। তারপর সেগুলো এডিটর বা লেখক এডিট করেন। এই এডিট ছাড়া আমরা সেই বই ছাপি না। দেবেশ রায়ের মতো বিরাট মাপের লেখকও আমাদের এডিটরিয়াল পদ্ধতিতে খুশি হয়ে পাণ্ডুলিপি ঠিক করে দিয়েছিলেন। ফলে এই বিষয়ে আমরা কোনোরকম কম্প্রোমাইজ করি না। ফলে খুব ভালো থ্রিলার আমরা পাঠকের হাতে তুলে দিতে পারি। থ্রিলার নিয়ে আমরা কাজ করছি নতুন। পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছরেই অভিযান পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় থ্রিলার প্রকাশনা। এ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একেবারে নতুন একটি পাঠকগোষ্ঠী অভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ পাঁচ বছরে—একটি তরুণ উদ্যমী পড়ুয়াশ্রেণি। এই তরুণ পাঠকেরাই বাংলা বইয়ের আগামী দিনের প্রচারক ও প্রসারক।

জাগো নিউজ: বাংলা থ্রিলার নিয়ে ওয়েবসিরিজ হলো, সেটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। বইটি বাংলাদেশের সব ধরনের পাঠকের বুক সেলফে পাওয়া যায়—এটাকে কীভাবে দেখছেন?মারুফ হোসেন: এটা বাংলা বইয়ের জন্য খুবই আনন্দের মুহূর্ত। এ মুহূর্তে বাংলা থ্রিলারের স্বর্ণযুগ চলছে বলা যায়। দুই বাংলার জনপ্রিয়তম থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের হাত ধরে বাংলাদেশে একঝাঁক তরুণ লেখক এসেছেন থ্রিলার লিখতে। আবার তারই প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গেও একদল তরুণ লেখক এখন দুর্দান্ত থ্রিলার লিখছেন। থ্রিলারের হাত ধরে বাংলা বইয়ের গণ্ডি বাড়ছে প্রতিদিন।

Advertisement

জাগো নিউজ: বাংলাদশ-ভারতে বাংলা বইয়ের বাজার ও বাজারজাতকরণের সীমাবদ্ধতাগুলো কীভাবে দেখেন?মারুফ হোসেন: বইয়ের ব্যবসা একটি বিরাট সময়ের ব্যবসা। কয়েকটা প্রজন্মকে প্রভাবিত না করতে পারলে বইয়ের ব্যবসায় কোনো লাভ নেই। অর্থাৎ এটি একটি স্লো রিটার্ন ব্যবসা। এটা জেনে এ সেক্টরে আসা উচিত। দ্বিতীয়ত, বই ব্যবসাকে বাড়ানোর জন্য সরকারের স্বচ্ছ কোনো পরিকল্পনা নেই। তৃতীয়ত, এ ব্যবসায় পেশাগত ঠিকঠাক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নেই। চতুর্থত, দুই বাংলার মাঝের কাঁটাতার বাংলা বইয়ের জন্য খুব নেগেটিভ একটি বিষয়। সাংস্কৃতিক পণ্যের আদান-প্রদান অবাধ হওয়া দরকার।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশের বইয়ের বাজার তৈরিতে বাংলাবাজার, বিউটি বোর্ডিং, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, শাহবাগের বই মার্কেট, কনকর্ড বই মার্কেট, চট্টগ্রামের বাতিঘর, সিলেটের বইপত্র, বগুড়ার পড়ুয়া, রাজশাহীর আলীগর লাইব্রেরি, দিনাজপুরের সোবহানিয়া লাইব্রেরি এবং এখনকার পাঠক সমাবেশ, প্রথমা, বাতিঘরের একাধিক শাখা, মধ্যমা, বেঙ্গল বইসহ বইয়ের বাজার ভূমিকা রাখছে। কিছু কিছু থিমেটিক বুক ক্যাফে বাংলাদেশে বেশ ভালো সরবের সঙ্গে বইয়ের প্রচার-প্রসার ও বাজারজাতকরণসহ নানাভাবে বই বিষয়ক নানা কাজ করছে—এর ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখছেন?মারুফ হোসেন: সময় বদলাচ্ছে, পাঠকের রুচি বদলাচ্ছে। মুদির দোকানের বদলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দেখা দিচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়। ফলে বইয়ের দোকানের দুশ বছরের পুরোনো কনসেপ্ট ভেঙে নতুন কিছু করতেই হবে। এখনকার পাঠক সেটাই চাইছে। একটু বসে-জিড়িয়ে প্রিয় বইটির কয়েকটি পাতা পড়ে তবে কিনতে চাইছেন। অনেক অনলাইন বুক স্টোর সে কারণে কয়েক পাতা স্যাম্পল রাখছে সাইটে। এসব উদ্যোগ আসলে আগামীর পাঠককে বরণ করার জন্য। দু’হাত তুলে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো উচিত।

জাগো নিউজ: সব বয়সের পাঠকের জন্য অভিযানের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?মারুফ হোসেন: অভিযান পাবলিশার্স প্রথম দিন থেকেই সব বয়সের পাঠকের কথা ভেবে কাজ করে। সব রকম পাঠকের রুচির কথা ভেবেই বইয়ের বিষয়বিন্যাস করে থাকে। গভীর চিন্তনের বই থেকে রম্যরচনা, কবিতা থেকে থ্রিলার, কিশোরদের সংকলন থেকে ভ্রমণ—সব পাঠকের কথা ভেবেই অভিযান বই প্রকাশ করে থাকে।

জাগো নিউজ: অভিযান বুক ক্যাফে উদ্বোধন হলো, পশ্চিমবাংলায় প্রথম থিমেটিক বুক ক্যাফের জার্নির লক্ষ্য নিয়ে কিছু বলুন—মারুফ হোসেন: আমাদের এ থিমেটিক বুক ক্যাফের ধারণা বাংলাদেশের বাতিঘর গ্রন্থবিপণীর কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। বাতিঘরের এখনো পর্যন্ত তিনটি বড় স্টোরের থিম লালবাগ কেল্লা, বাতিঘর এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। এরকম থিম্যাটিক বুকশপ পশ্চিমবঙ্গে একটিও নেই। তাই আমরা ঠিক করলাম কলকাতায় আমরা প্রথম থিমনির্ভর বুকশপ তৈরি করব। বিষয় হিসেবে বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনাকে বেছে নিলাম। গ্রন্থশিল্পের ভেতর যে রুচি থাকে, বিপণীর অন্দরসজ্জাতেও সেই রুচি থাকা জরুরি। পাঠকরা পাশে থাকলে আমাদের ইচ্ছা আগামীতে এরকম থিম্যাটিক গ্রন্থবিপণী পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় খোলার।

জাগো নিউজ: অভিযানে বাংলাদেশের বইয়ের সমাহার সব সময় সমৃদ্ধ বলে পাঠকরা দাবি করেন এবং বাংলাদেশের বই প্রাপ্তি সহজ করতে অভিযান বুক ক্যাফে অগ্রিম অর্ডার বা প্রি-অর্ডার টাইপ কোনো পরিকল্পনা আছে?মারুফ হোসেন: পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় অবাধ হওয়া উচিত। কারণ আমরা এক ভাষার এক সংস্কৃতির ধারক। পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক পণ্য বাংলাদেশে বা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পণ্য পশ্চিমবঙ্গে সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। যেন পাঠক কখনো রাজনৈতিক কাঁটাতারকে সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বাধা না মনে করে। আর সে ক্ষেত্রে দুই বাংলার ২৫ কোটি বাঙালি মানে লেখক-প্রকাশকদের জন্য বিরাট সুযোগ। আমরা বাংলাদেশের বাতিঘর, রকমারি বা তক্ষশিলার মতো পশ্চিমবঙ্গের দিক থেকে সেই বাধা সরানোর কাজে বিগত ছয় বছর ধরে নিয়োজিত। আর বাংলাদেশের বই প্রি-অর্ডার আমরা করেছি। এমনকি একই দিনে দুই বাংলা থেকে একযোগে বই প্রকাশও করেছে অভিযান।

জাগো নিউজ: কলেজ স্ট্রিটের প্রাণকেন্দ্রে অভিযান বুক ক্যাফের যাত্রা শুরু হলো—কলকাতায় এর কেমন প্রতিক্রিয়া মিলছে?মারুফ হোসেন: পাঠকদের তরফ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা এসে পুরোনো ছাপার মেশিন দেখে কৌতূহলী হয়ে নানা প্রশ্ন করেছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর হয়েছে। লেখকেরা এসেছেন। সবচেয়ে যেটা ভালো লাগার সহ-প্রকাশকেরা এবং সিনিয়র প্রকাশকেরা এসে প্রশংসা করেছেন। যা আমাদের আগামীতে নতুন কিছু করতে উৎসাহিত করবে।

জাগো নিউজ: আপনাদের থিমটা যদি একটু বিস্তারিত বলেন—মারুফ হোসেন: অভিযান বুক ক্যাফের থিম—বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার ২৪৪ বছর। ১৭৭৮ সালে হ্যালহেডের ‘এ গ্রামার অব বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ প্রকাশিত হয়। এ বইয়ে প্রথম বাংলা মুভেবেল টাইপ ব্যবহার করা হয়। সে কারণে এ বই থেকে পণ্ডিতেরা বাংলা মুদ্রণের শুরু বলে অভিহিত করেন। হ্যালহেডের পরে গত ২৪৪ বছরে বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। সেই উন্নতির প্রতিটি বাঁক বদলকে চিহ্নিত করে তার ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে অভিযান বুক ক্যাফে। প্রথম বাঙালি প্রকাশক গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের বইয়ের একটি ছবি, বাংলা টাইপ তৈরির কিংবদন্তি পুরুষ পঞ্চানন কর্মকারের কাজ বা বর্ণপরিচয়-শিশুশিক্ষার পাতার নমুনা আছে এখানে। কাঙাল হরিনাথের প্রেস মেশিনের ছবি, মুক্তধারার প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা, ইউপিএলের মহিউদ্দিন আহমেদ, সেবার কাজী আনোয়ার হোসেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, একুশের বইমেলা প্রভৃতির ছবি আমরা ব্যবহার করেছি এখানে। একটি প্রায় একশ বছরের পুরোনো ছাপার মেশিন এখানে রাখা হয়েছে পাঠকদের দেখার জন্য।

জাগো নিউজ: অভিযান বুক ক্যাফে ও অভিযান প্রকাশনীকে বাংলাদেশ-ভারতের বিদগ্ধ লেখক-পাঠকরা নিজেদের বলে দাবি করেন—এ অর্জনের যোগসূত্র জানতে চাই—মারুফ হোসেন: এটা অভিযানের জন্য খুবই আনন্দের একটি বিষয়। অভিযান জন্মলগ্নকাল থেকে পাঠককে গুরুত্বের আসনে বসিয়েছে, লেখককে বসিয়েছে সম্মানের আসনে। শুধু বইমেলার ক’টা দিন নয়, সারাবছর ধরে অভিযান এ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করে। আসলে এই পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক বাংলা বইয়ের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। পাঠক-লেখক-প্রকাশকের ত্রিমুখী রসায়ন আগামী দিনে বাংলা বইয়ের জন্য নতুন কিছু সুসংবাদ বয়ে আনবে বলেই বিশ্বাস করি।

এসইউ/জিকেএস