ভ্রমণ

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে একদিন একরাত

ভ্রমণের শখ সবার মধ্যেই কমবেশি আছে। আসলে ভ্রমণ করতে চান না এমন মানুষ খুঁজে বের করাটা কঠিন। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।

Advertisement

তাইতো এবারের গন্তব্য কুয়াকাটা। ভ্রমণসঙ্গী হিসেবে আছে দুই বন্ধু। তারাও কুয়াকাটায় এই প্রথমবার। যাই হোক, আজকের ভ্রমণের মধ্য দিয়ে আপনাদের জানাবো কুয়াকাটা ভ্রমণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা।

কুয়াকাটার অবস্থান ও নামের ইতিহাস

সুন্দরবনের প্রান্ত ছুঁয়ে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে দক্ষিণে প্রসারিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভাগ হল বরিশাল। আর পটুয়াখালী হলো বরিশালের একটি অন্যতম জেলা। আর এ জেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠে কুয়াকাটা। পরে ধীরে ধীরে এটি একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

Advertisement

কুয়াকাটা নামের ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হলো, ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ারও আগে মুঘল আমলে বর্তমান মায়ানমার ওতৎকালীন বার্মা হতে বিতাড়িত হয়ে কিছু উপজাতিরা এখানে এসে আশ্রয় নেয়।

সাগরে লোনা পানি থাকায় তখন বিশুদ্ধ পানির খুব অভাব ছিল। তাই তারা সাগরের বালি সরিয়ে গর্ত করে কুয়া বানিয়ে খাবার পানির ব্যবস্থা করে। বলা হয়ে থাকে এই কুয়া থেকেই কুয়াকাটা নামের উৎপত্তি।

কুয়াকাটায় যেভাবে যাবেন/আমরা যেভাবে গিয়েছি

সড়ক পথেই কুয়াকাটায় যাওয়া যায়। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহজেই আপনি কুয়াকাটায় আসতে পারবেন। রাজধানী থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া যায়। বাস ছাড়াও আপনি প্রাইভেট কারে সেখানে যেতে পারবেন।

Advertisement

তাছাড়া পদ্মাসেতু হয়ে যাওয়ায় কুয়াকাটা আসার পথ আরও সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে আপনি যদি এই ভ্রমণে জলপথের স্বাদও পেতে চান তাহলে ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত অথবা ঢাকা থেকে আমতলী পর্যন্ত লঞ্চ যাত্রা করতে পারেন। এরপর সহজেই সড়ক পথে কুয়াকাটায় পৌঁছে যেতে পারবেন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে একদিন একরাত

এবার তিন বন্ধু মিলে আমরা কুয়াকাটায় হাজির হলাম। বাস থেকে নেমে প্রথমেই এক দৌড়ে সাগর পাড়ে চলে গেলাম। আহ! সাগরের বুক চিঁড়ে আসছে এক মিষ্টি বাতাস। যা আমাদের সাড়া পথের ক্লান্তি নিমিষেই দূর করে দিয়েছে। যেন নতুন অতিথিদের এভাবেই বরণ করে নেয় তারা।

এখন আমি নিঃসন্দেহে বলতে চাই, কুয়াকাটা সত্যিই সুন্দর ও আকর্ষণীয় একটি স্থান। থাকার জন্য চিন্তা করতে হবে না। বাস থেকে নেমেই আশপাশে অনেক হোটেল পাবেন। আপনার পছন্দমতো যে কোনো একটি হোটেলে উঠে যেতে পারবেন। হোটেলের বেলকনিতে বসেও পাবেন সমুদ্রের স্বাদ।

এরপর হোটেলে চলে এলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে ফের গেলাম সমুদ্রে। এবার আর কুলে বসে নয় সরাসরি সমুদ্রে। চিন্তা কিসের, সাঁতার তো জানি। ওরাও জানে। অনেকক্ষণ সাগরে গোসল করলাম। সেই সঙ্গে ফুটবল খেলাসহ আরও কত কি। গোসল শেষে ফিরে এসে গেলাম দুপুরের খাবার খেতে।

শুটকি মাছের ভর্তা দিয়ে ভাত খেলাম। সে কি স্বাদ, এখনো মুখে লেগে আছে। খাবার শেষ করে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে আবারও বেরিয়ে পরলাম। ঘুরতে এসে বসে থাকলে চলবে? এবার ঘুরে দেখব কুয়াকাটার কোথায় কি আছে। প্রথমেই গেলাম রাখাইন মার্কেটে। এই মার্কেটে আপনি রাখাইনদের নিজ হাতে তৈরি করা নানা জিনিসপত্র দেখতে পাবেন।

সেখান থেকে গেলাম বৌদ্ধ মন্দিরে। ওই মন্দিরের ভেতরটা সুন্দরভাবে সাজানো। কিছুক্ষণ ঘুরে দেখলাম মন্দিরের সাজ। মন্দিরের কাছেই আছে বিশাল একটি নৌকা। কয়েকবছর আগে এটি সমুদ্রের বালির ভেতর থেকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নৌকাটি সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে দেখে মনে হচ্ছে বেশ পুরোনো দিনের একটি নৌকা। সেখান থেকে গেলাম ঝাউবনে। এরপর সোজা মোটরসাইকেল যোগে লাল কাঁকড়ার চড়ে। একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখা পেলাম সেই লাল কাঁকড়ার দল। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করছে। কাছে গেলেই পালিয়ে যাচ্ছে, হাড়িয়ে যাচ্ছে নিমিষেই। সেখানে বসে কাঁকড়ার ফ্রাই খেলাম। খেতে বেশ দারুণ।

এর মধ্যেই সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত যাওয়া দেখছি। সূর্যাস্তের এত সুন্দর দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি। তখন বুঝতে পেরেছিলাম কেন সবাই কুয়াকাটায় সূর্যাস্ত দেখতে আসে। কিছুটা অন্ধকার নেমেছে। তবুও সমুদ্রটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।

এরপর চারপাশে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে হোটেলে চলে আসি। হালকা নাস্তা শেষে বসে গানের আড্ডা। যা চলছিল মধ্যরাত পর্যন্ত। সাথে নানা ধরনেট গেম ছিল। রাতটা বেশ উপভোগ করেছি। একসময় না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।

সকালে তড়িঘড়ি করে উঠে সূর্যোদয় দেখতে সমুদ্র পাড়ে যাই। মৃদু একটা বাতাস ভেসে আসতেছিল সমুদ্র থেকে। সেই আলতো বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ লাগছিল। সঙ্গে সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সব মিলিয়ে এক ভিন্নরকম ভালোলাগা।

এবার ফেরার পালা। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। রোদ উঠে গেছে। সকালের নাস্তা শেষ করে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিচ্ছি। ঝিনুক দিয়ে বানানো বেশ কিছু সুন্দর জিনিসপত্র কিনেছিলাম। তাও সযত্নে রাখলাম ব্যাগে। গোছানো শেষ, এখন যাচ্ছি বাসস্ট্যান্ডে।

বাসস্ট্যান্ডে যাবার পথে আরেকবার রাখাইন মার্কেটে যাই। প্রথমবার যখন গিয়েছিলাম তখন রাখাইনদের বানানো আঁচার ও চকলেট দেখেছিলাম। তাই কিছু চকলেট ও আঁচার কেনার জন্য আবার সেখানে যাচ্ছি। এটা অপূর্ণ থেকে যাবে সেটা চাই না।

যাই হোক বাসে টিকিট কেটে উঠে পড়েছি। কিছুক্ষণ পরেই বাস ছেড়ে দিবে। এখন আর কিছুই করার নেই। জানালা দিয়ে এখনো সমুদ্র দেখছি। সমুদ্রের প্রেমে পড়েছি হয়তো। বাস ছেড়ে দিল। ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে সমুদ্র। আমি তাকিয়ে আছি আর মনে মনে ভাবছি, ফিরে আসবো আবারও।

লেখক: ফ্রিল্যান্স ফিচার রাইটার

জেএমএস/এমএস