ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চার বছরে। অথচ ১০ বছরেও কাজ শেষ হয়নি। এতে ওই সড়কে যাতায়াতকারীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এর ওপর আবার একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে আলোচনায় বিআরটি প্রকল্প। তবে সোমবার বিকেলে উত্তরায় প্রাইভেটকারের ওপর গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় ফের আলোচনায় বিআরটি। এর আগেও এখানে দুইবার গার্ডার দুর্ঘটনা ঘটে, যাতে একজন নিহত হন।
Advertisement
বিআরটি প্রকল্পে গত এক দশকে এ ধরনের বড় দুর্ঘটনা তিনটি ঘটলেও এই সড়কে দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী। এই সড়কে চলাচলকারীরা বলছেন, এরকম দুর্ঘটনা দেখে পথ চলতে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
গার্ডার স্থানান্তর করার সময় দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহতের ঘটনায় বারবারই সামনে আসছে নিরাপত্তার বিষয়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে এবং সড়ক বন্ধ না করে গার্ডার স্থানান্তর এ প্রশ্নকেই সামনে আনছে। এমনকি খোদ ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ঢাকা বিআরটি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিকুল ইসলামও নিরাপত্তার ঘাটতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তার মতে, গার্ডার স্থানান্তরের সময় সেখানে আন্তর্জাতিক মানের কোনো নিরাপত্তা ছিল না।
শফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের সেফটি এলাকার মধ্যেই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু ক্রেন হেলে যাওয়ার কারণে গার্ডার গাড়ির ওপর পড়ে যায়। প্রাইভেটকার নির্মাণাধীন প্রকল্পের ভেতরে আসেনি, গার্ডারই গিয়ে রাস্তায় (প্রাইভেটকারের ওপরে) পড়ে।
Advertisement
এ ধরনের কাজ করার আগে রাস্তা ঘিরে রাখা হয় অথবা নেট দিয়ে নিরাপত্তা বলায় তৈরি করা হয়। কিন্তু কাজের সময় কোনো নিরাপত্তা ছিল না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গার্ডারের ওজন ছিল ৮০ টন (ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে ১২০ টন)। ফলে এই বিশাল গার্ডার স্থানান্তরে নেট দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়।
দুর্ঘটনা কবলিত প্রাইভেটকারের কোনো দোষ ছিল না উল্লেখ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেন হেলে গিয়ে গার্ডার রাস্তার ওপর থাকা গাড়িতে গিয়ে পড়েছে।
কাজের সময় কোনো নিরাপত্তা না থাকার দায়ভার কার? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ও সেফটি কনসালটেন্টে যারা রয়েছেন এর দায়ভার সবার।
বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, এটি সত্যি যে প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়ে আমরা একটু সমস্যায় আছি। আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নেওয়া হয়নি।
Advertisement
নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হবে। নো সেফটি নো ওয়ার্ক (নিরাপত্তা ছাড়া আর কোনো কাজ হবে না)। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা আর আপস করবো না বলেও জানান তিনি।
এর আগে সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন।
সোমবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাড়িটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন- রুবেল (৫০), ঝর্ণা (২৮), ফাহিমা, জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামে নবদম্পতি গুরুতর আহত হন।
স্বজনরা জানান, ফাহিমা নববধূ রিয়া মনির মা। আর রিয়ার খালা ঝর্ণা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝর্ণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝর্ণার সন্তান। ফাহিমা-ঝর্ণার বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।
এদিকে, উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সোমবার রাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কমিটিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগ) নীলিমা আখতারকে প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
টিটি/কেএসআর/জেআইএম