জাতীয়

যেভাবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ৫ জনের

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। সোমবার (১৫ আগস্ট) দিনগত রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন।

Advertisement

গার্ডারচাপায় নিহতরা কীভাবে প্রাইভেটকারের ভেতর চাপা অবস্থায় ছিল, রোমহর্ষক সে বর্ণনা ওঠে এসেছে মামলার বিবরণে।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, নিহত আইয়ুব আলী হোসেন ওরফে রুবেলের (৫৫) শরীরের মুখমণ্ডল থেতলে যায়। তার নাক দিকে রক্ত নির্গত হতে থাকে। বুক, পেট, পিঠ, হাত ও পায়ের বিভিন্ন স্থানে কালচে জখমপ্রাপ্ত হয়।

ফাহিমা আক্তারের (৩৮) মাথা থেতলানো ও চেপ্টা ছিল। ঘাড় ভাঙা ও বুক-পেটের চামড়া ওঠে গিয়েছিল। বাম হাত ও কোমড়ের ডান পাশ ভাঙা, বাম পায়ের হাঁটুর নিচে হাড় থেকে মাংস আলাদা হয়ে যায়।

Advertisement

ঝর্ণা আক্তারের (২৭) মাথা থেতলানো ও মগজ বিছিন্ন হয়ে যায়। ঘাড় ভাঙা, বুক থেতলানো ও চামড়া ওঠে গিয়েছিল। পেট-পিট থেতলানো ও মোচড়ানো ছিল। এছাড়া দুহাত ভাঙা, দুপায়ের হাঁটুর নিচ থেকে থেতলে যায়।

শিশু জান্নাতুলের (৬) মুখমণ্ডল-মাথা থেতলানো ও চেপ্টানো ছিল। ঘাড় ও বুকের পাজর ও ডান হাত ভাঙা ছিল।

আরেক শিশু জাকারিয়ার (৪) শরীরের বাম পাশ চেপ্টানো ও জখমপ্রাপ্ত ছিল। নাক দিয়ে নালা নির্গত হচ্ছিল।

মামলায় অবহেলাজনিত কারণে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

Advertisement

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বোনের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, সিজিজিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।

এর আগে সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতরা ঢাকায় একটি বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন

রাতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গাড়িটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন

নিহতরা হলেন- আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), ফাহিমা আক্তার (৩৮), ঝরণা আক্তার (২৭), জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)।

তবে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় একই গাড়িতে থাকা হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামের নবদম্পতি গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান। দুজনেই উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্বজনরা জানান, ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝরণা হলেন তার খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝরণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝরণার সন্তান। ফাহিমা-ঝরণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।

এদিকে উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সোমবার রাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, কমিটিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগ) নীলিমা আখতারকে প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে বিআরটি প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন। এরপরও জননিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় সোমবার আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

‘এখানে ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই’ উল্লেখ করে বিআরটি প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে বলে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, এ প্রকল্প কাজ পরিচালনায় ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ফলে কিছুদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এভাবে উন্নয়ন কাজ চলতে দেওয়া যাবে না। আগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

টিটি/এমকেআর/জেআইএম