জাতীয়

শ্রেষ্ঠ ওসির এলাকাতেও অপরাধীদের আঁখড়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)ওয়ারি বিভাগের গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সম্প্রতি শ্রেষ্ঠ ওসি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে তার এলাকায় অপরাধ কমেনি। নানা তৎপরতা সত্ত্বেও চুরি-ডাকাতি ও মাদকের দৌরাত্ম্য কমেনি গেন্ডারিয়ায়। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। গেন্ডারিয়া ডিএমপির আওতাভুক্ত থানা হলেও রাজধানীর প্রান্তসীমায় এর অবস্থান। নারায়ণগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জের সঙ্গেই এ এলাকার মানুষের যাতায়াত বেশি। এখানে মাদক ব্যবসায়ীদের বিচরণও বেশি। চুরি-ডাকাতিসহ অন্যান্য অপরাধের হারও এখানে তুলনামূলক বেশি।   পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত মাসের শেষ সপ্তাহেই তিন লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে রনি (২০) নামে এক যুবককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে সন্ত্রাসীরা। গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করে। গেন্ডারিয়া থানার ৯৮ নম্বর কেভি রোডে ওই যুবকের বাসা।  গত ৬ জানুয়ারি র্যাব-১০ এর একটি দল গেন্ডারিয়ায় সতীশ সরকার রোডে অভিযান চালিয়ে ৪২১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ শামীম ও সেন্টু নামে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। পরে তাদের নামে থানায় মাদক আইনে মামলাও হয়। চলতি মাসের ১০ তারিখে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার পথে দয়াগঞ্জ মোড়ে এসে রিকশায় ওঠার সময় তিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন আমিন নামে একজন। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে।  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) একটি সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে রাজধানীতে এক হাজার ২০০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগেরই রয়েছে পৃথক সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটগুলোর বেশ কয়েকটি গেন্ডারিয়া এলাকায় সক্রিয়।  মাদকদ্রব্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীতে যে স্পট মাদকের বুথ হয়ে গেছে তার মধ্যে গেন্ডারিয়াও একটি। এখানে মাদক বাণিজ্য একসময় স্পটকেন্দ্রিক হলেও এখন চলছে মোবাইল নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে। মোবাইলে অর্ডার নিয়ে তা ডেলিভারি হচ্ছে এমএলএম কায়দায় (বিভিন্ন হাত ঘুরে)। সাময়া (৪০) নামে এক মাদকসম্রাজ্ঞীর কারণেই মূলত গেন্ডারিয়া এলাকায় মাদকের প্রসার বেশি। একাধিকবার গ্রেফতার হলেও গেন্ডারিয়া এলাকায় মাদকবাণিজ্যে তার জুড়ি মেলা ভার।  গেন্ডারিয়ার দয়াগঞ্জে শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম ওরফে বুইড়া নাদিম গ্রেফতার হয়েও দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসা। তার নেটওয়ার্কিংয়ের কাছে গেন্ডারিয়া পুলিশকে ব্যর্থই বলা চলে। দিনকয়েক আগে নাদিমকে চাপাতি, ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ১৭ পুরিয়া হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।  এলাকাবাসীর অভিযোগ, গেন্ডারিয়ায় মাদককে ঘিরে অনেক অপরাধ ঘটেছে। এসবে পুলিশেরও যোগসাজশ রয়েছে। ২০১০ সালে গেন্ডারিয়ার বিকে দাস রোডে গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ৮২ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দীন ইসলাম দিলা (৪৫)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শরীফসহ জুয়েল ও ডানো নামে দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও মাদক ব্যবসায়ী জুয়েল ও ডানো পুলিশী ধরাছোয়ার বাইরে। গত ২৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিসংখ্যান বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর মাহবুবকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ছিনতাইকারীরা। মাহবুবের কাছে থাকা ল্যাপটপ, মোবাইল ও টাকাও নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় গেন্ডারিয়া থানায় সুমন ও সুজন নামে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলেও তাদের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ।  গেন্ডারিয়ার ৯ নং ওয়ার্ডের নুরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, এ এলাকায় প্রায়ই চুরি-ডাকাতি হচ্ছে। থানায় অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয় না। গেন্ডারিয়া থানার এক সেরেস্তা জানান, গত দুই মাসে ৪০টির বেশি মামলা দায়ের হয়েছে গেন্ডারিয়া থানায়। এর মধ্যে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা ও হত্যা চেষ্টা এবং মাদকের মামলা রয়েছে। দুশোর বেশি হয়েছে সাধারণ ডায়েরি। এ ব্যাপারে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার(ওসি) কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এলাকায় নজরদারি রয়েছে। ডাকাতি ও চুরির ঘটনা অনেক কমে গেছে। মাদকের বিষয়টি জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে।জেইউ/এনএফ/পিআর

Advertisement