টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দুই স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর গলা কেটে হত্যার ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও ওই এলাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও উপস্থিত রয়েছে একশ এরও কম শিক্ষার্থী। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলে, লেবু ক্ষেতে ইমরান ও শাকিলের গলা কাটা লাশ দেখার পর থেকেই আমি কোনো লেবু ক্ষেত দেখলেই এখন ভয় পায়। এ কারণে আমি কোনো লেবু ক্ষেতের কাছ দিয়ে যায় না। একই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী আকলিমা আক্তার বলে, আগে আমি একা বিদ্যালয়ে আসতাম কিন্তু এ ঘটনার পর থেকে আমি আর তা পারি না। সেজন্য আমার বাবা প্রতিদিনই আমাকে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দেয় ও ছুটি হলে সঙ্গে করে নিয়ে যায়।ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় উপস্থিতি অর্ধেকেরও কম। এ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, এখনো ছেলে মেয়েদের মন থেকে ইমরান ও শাকিলের বিভৎস মৃত্যুর স্মৃতি মুছে যায়নি। তাই শিক্ষার্থীরা এখনো খুব আতঙ্কিত রয়েছে। চর চৌহাট এলাকার অভিভাবক মজনু মিয়া ও কুলসুম বেগম বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েদের মন থেকে ভয় দূর করতে আমরা নিজেরাই তাদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে আসি। আবার ছুটি হলে বাড়ি নিয়ে যাই। এতে করে আমাদের অসুবিধা হলেও আমরা কষ্ট মনে করি না।এদিকে, ইমরানের বাড়ি ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখনও ওই এলাকায় শোকের মাতম চলছে। ইমরানের মা বার বার মাটিতে মূর্ছা যাচ্ছেন। এ সময় প্রতিবেদককে দেখে তিনি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকল আসামির ফাঁসি দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে ও একটি ছেলেই ছিল। যারা আমার বুক যারা খালি করেছে তাদের ফাঁসির মাধ্যমে মায়ের কোল খালি দেখে আমি মরতে চাই।অন্যদিকে, একই এলাকায় শাকিলের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। শাকিলের মা জোসনা বেগম সন্তান শোকে এখন মৃতপ্রায়। তিনি বলেন, আমার সন্তানের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে আমি মরতে চাই।এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এ নিয়ে আমরা ওই এলাকার বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হয়ে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়ানো পরামর্শ দেয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ আগে (বুধবার) হাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে বাড়ি ফেরার পথে অপহৃত হয় ধামরাই উপজেলার চর চৌহাট এলাকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ইমরান ও শাকিল। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের গলা কাটা লাশ হাড়িয়া এলাকায় একটি লেবুক্ষেত থেকে উদ্ধার করে মির্জাপুর থানা পুলিশ। শনিবার শাকিলের মা বাদী হয়ে মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করে। রোববার রাতে টাঙ্গাইল গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল ঘটনার মূলহোতা ইমরানের চাচাতো ভাই মিল্টন, চাচা তারা মিয়া ও রাসেলকে গ্রেফতার করে। পরে মিল্টন এ ঘটনা সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।এসএস/পিআর
Advertisement