নওগাঁয় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মালেকের আলুর চপ। একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করে এ আলুর চপ। সুস্বাদু হওয়ায় লোকমুখে এখন এটা `মালেকের চপ` নামেই পরিচিত।নওগাঁ শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন আব্দুল মালেক। বর্তমানে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১০ জন। তিনি ৩৪ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছেন। আর ৩১ বছর যাবৎ আলুর চপ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ ব্যবসা করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে পরিবারের বড় কিছু করতে পারেননি বলে জানান আব্দুল মালেক। যা আয় হয় তা দিয়ে খেয়েপড়েই শেষ।সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লায় ভাড়া বাড়ির সঙ্গে লাগানো বারান্দায় তার দোকান। দোকানে একটি কাঠের চার কোনা ছোট বাক্স, দুইটি বেঞ্চ, পানির বালতি, মগ ও গ্লাস এবং আলুর চপ নিয়ে বসে আছেন ছোট ছেলে নূর ইসলাম। আলুর চপ শেষ হলে আবার বাড়ির ভেতর থেকে নিয়ে আসছেন নূর ইসলাম। আর বাড়ির ভেতর আলুর চপ ভাঁজছেন আব্দুল মালেক এবং পাশে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী নূরুন নাহার।আলুর চপ সুস্বাদু হওয়ার কারণটা জানালেন আব্দুল মালেক। আলুর চপে আলুর মধ্যে আদা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, কালিজিরা, মোহরী, নেতী, শাইজিরা, জাইফল, ফিরিংঙ্গি, জোরতি, তেজপাতা, পোস্তদানা, চাউলভাজাসহ প্রায় ২৫ ধরনের আইটেম ব্যবহার করেন। এছাড়া চাটনির মসল্লায় ওইগুলোসহ ব্যবহার করেন প্রায় ২২ ধরনের আইটেম।মালেক জানান, আট আনা (পঞ্চাশ পয়সা) পিচ দামে তিনি আলুর চপ বিক্রি শুরু করেন। সময়ের পরিবর্তনে এক টাকা থেকে শুরু করে বর্তমানে ৬ টাকা করে আলুর চপ বিক্রি করছেন। আর ৬ টাকা পিস বিক্রি শুরু করেন ৪ বছর আগ থেকে।প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে দোকানে আলুর চপ বিক্রি শুরু হয়ে চলে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত। কখনও আগেই শেষ হয়ে যায়। আর বাড়ির মধ্যে চপের আইটেম তৈরি শুরু হয় দুপুর থেকে। আলুর উপর নির্ভর করে চপের পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। আলু যদি বালু বা আঠালো হয় তাহলে পরিমাণে কম হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৪৫০ পিস চপ দুই হাজার থেকে ২৩শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এখান থেকে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের আপায়ন করা হয়। তিনি জানান, পাম ওয়েল তেল দিয়ে চপ ভাঁজা হয়। প্রতিদিনের তেল প্রতিদিন ব্যবহৃত হয়। যে তেল দিয়ে একবার চপ ভাজা হয় তা আর পরে ব্যবহার করা হয় না। ভাজা তেল বিক্রি হয় বাজার কম-বেশি অনুসারে ৩২ টাকা কেজিতে। অনেকে বলেন যে, চাচা চপে কি জিনিস মিশিয়েছেন যে নেশা লাগে। না খাইলে ঘুম ধরে না। তখন আমি বলি এটার মধ্যে ৩টি জিনিস আল্লাহর রহমত, খাঁজা বাবার রহমত এবং মানুষের দোয়া আছে। অনেকে আবার তাদের আত্মীয় স্বজন দেশের বাইরে লন্ডন ও দুবাইতে পাঠিয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকে অর্ডার দিয়ে আলুর চপ নিয়ে যান।আলুর চপ খেতে আসা তপু রায়হান জানান, নওগাঁর মধ্যে মনে হয় এটা প্রথম চপ। আমরা প্রতিদিনই খাই। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে খাই এবং বাড়ির জন্য নিয়েও যায়। একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করে। ক্রেতা রনি জানান, মাঝেমধ্যেই এখানে চপ খেতে আসি। মালেক চাচার আলুর চপ খুবই সুস্বাদু।রিকশা চালক শহিদুল জানান, যখনই চপ খেতে আসি তখনই ফুইরা যায়। অপেক্ষা করতে হয় ভেজে নিয়ে আসার জন্য। খাইলেও পোস্তাবো, না খাইলেও পোস্তাবো। এছাড়া অনেকেই বাড়ির জন্য আলুর চপ নিয়ে যাচ্ছেন।আব্বাস আলী/এসএস/পিআর
Advertisement