পানিতে ভেসে সব বয়সের মানুষের শরির চর্চার অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে সাঁতার। ইট-পাথরের যান্ত্রিক নগরীতে পুকুর ও নদী-নালা না থাকায় সাঁতার না জানাদের সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলছে। এতে মানুষ আগ্রাহ হারাচ্ছেন সাঁতারে।
Advertisement
তবে কুমিল্লার ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়াম লাগোয়া উত্তর পাশে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠিত সুইমিংপুলে মিটছে স্থানীয় সাঁতার প্রেমীদের তৃপ্তি। সাঁতার শিখতে আগ্রহীদের জন্য কর্তৃপক্ষ নিয়েছে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বেসরকারিভাবে দেয়া হচ্ছে সাঁতার প্রশিক্ষণ। এতে কুমিল্লা নগরীতে বসবাসকারীদের মাঝে সাঁতারের আগ্রহও বাড়ছে।
কুমিল্লার সুইমিংপুলে গত এক বছরে প্রশিক্ষণ নিয়েছে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে থেকে সাঁতারুরা জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্জন করেছে একাধিক পুরস্কারও।
কুমিল্লা সুইমিংপুলোর ব্যস্ততাও বেড়েছে। জাতীয় ও অঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন সাঁতার প্রতিযোগিতা এই সুইমিংপুলে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণেরও ব্যাঘাত ঘটছে। এ কারণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে আরও সুইমিংপুল নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের।
Advertisement
সূত্র মতে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে কুমিল্লা স্টেডিয়াম এলাকায় বীর মুক্তযোদ্ধা শহীদ রফিকুল ইসলামের নামে আন্তর্জাতিক মানের সুইমিংপুলটি উদ্বোধন করা হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। দেড় একর জায়গাজুড়ে নির্মিত সুইমিং কমপ্লেক্সে রয়েছে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য, ২২ মিটার প্রস্থ এবং ১ দশমিক ৮ মিটার গভীর ৮ লেনের একটি সুইমিংপুল।
রয়েছে খোলোয়াড়দের জন্য অত্যাধুনিক ড্রেসিং রুম, প্লেয়ার্স লাউঞ্জ, সহস্রাধিক দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারি, বিশুদ্ধ পানির প্ল্যান্ট, ডিপ টিউবওয়েল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২৫০ কেভির বিদ্যুৎ সাবস্টেশন এবং নিজস্ব পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
উদ্বোধনের পর করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে আন্তর্জাতিক মানের এই সুইমিংপুলটি। তবে সব স্বাভাবিক হওয়ার পর গত একবছরে এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ। যদিও নামমাত্র মূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়ার কারণে আর্থিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুল পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ।
রাকিবুল হাসান রাফি নামে এক শিক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে প্রশিক্ষকরা খুব অন্তরিক। আমাদের ভালভাবেই সাঁতার শিক্ষাচ্ছেন। আশা করছি প্রশিক্ষণ শেষে আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সাতার প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারবো। মূলত সেভাবেই আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে।’
Advertisement
প্রশিক্ষক শিবু চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ছাত্র এবং বিকেল ৩টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ছাত্রীদের জন্য পৃথক নারী প্রশিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়াও কর্মজীবী পুরুষদের জন্যও রাতে সুইমিংপুলটিতে রয়েছে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। করোনার পর গত ২০ মে থেকে আমাদের নতুন ব্যাচ চালু হয়েছে। অগ্রহ নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। এখানে প্রশিক্ষক হিসেবে নারী-পুরুষ মিলে আমরা ৪জন কাজ করছি।’
আবদুল্লাহ মামুন ভূঁইয়া নামে এক অভিভাবক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইতিপূর্বে এ সুইমিংপুল থেকে আমার দুই ছেলে-মেয়ে সাঁতার শিখেছে। নতুন ব্যাচে ছোট ছেলেকে ভর্তি করিয়েছি। এখানে প্রশিক্ষক হিসেবে যারা রয়েছেন তারা যত্মসহকারে বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এতে আমরা সন্তুষ্ট।’
তার দাবি সুইমিং বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাহলে নগরীতে বসবাসকারীদের মধ্যে সাঁতার শেখার বিষয়ে আগ্রহ আরও বাড়বে এবং ইতিবাচক একটি প্রভাব ফেলবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান ফারুক রোমেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে সুইমিংপুলটির উদ্বোধন হয়। এরপরই স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। উদ্বোধনের পর প্রায় এক বছরে কুমিল্লার এক হাজার ছেলে-মেয়েকে সাঁতার শেখাতে সক্ষম হই। এদের জন্য দুইজন করে আলাদা আলাদা পুরুষ ও মহিলা প্রশিক্ষক রয়েছে। রয়েছে পৃথক শিফটিং-এর ব্যবস্থা। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সাঁতার প্রতিযোগীতা আমাদের এখানেই হয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুইমিংপুলটি পরিচালনা করতে আর্থিকভাবে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। মাসে প্রায় অর্ধলাখ টাকার মতো বিদুৎবিল আসে। এর সিংহভাগ টাকাই আমাদের ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে। সুইমিংপুল ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কাছে চিঠি দেবো, আমাদের যেন সহায়তা করা হয়। করোনা মহামারীতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পূনরায় আমরা পুলটি চালু করেছি। এতে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বর্তমানে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন সাঁতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পরিকল্পনা রয়েছে প্রতি ব্যাচে ১০০ ছেলে এবং ১০০ মেয়েকে ভর্তি করা হবে।’
জাহিদ পাটোয়ারী/আইএইচএস/