বেঁচে থাকলে আজ হয়তো পরীক্ষা দিতে ছুটতো মাইশা। পরিবারের সবাই প্রার্থনা করতো তার ভাল পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এই পরীক্ষার কথা মনে করেই স্বজনরা এখন হু হু করে কাঁদছেন। এক বছর আগের এই দিনে (৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) রাজনীতির পেট্রলবোমা কেড়ে নিয়েছে মাইশার জীবন। এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল মাইশা তাসনিম নাহিয়ান। পরীক্ষা শুরু হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি। সহপাঠীরা পরীক্ষায় বসেছে। নেই মেধাবী মাইশা ও তার বাবা নুরুজ্জামান পপলু, আছে শুধু স্মৃতি। পরীক্ষার খবরে স্বজনদের বুকটা কষ্টে মোচড় দিয়ে ওঠে। পড়ার ঘরের টেবিল, বই, ব্যাগ সব আছে। এই সব বুকে জড়িয়ে কান্নায় ঢুকরে ওঠে মাইশার মা মারুফহা বেগম মিতা, ভাই ইমতিয়াজ মাথিন, দাদী নুরজাহান বেগমসহ স্বজনেরা। তাদের স্মৃতি নিয়ে এভাবে কষ্টে বেঁচে আছেন পরিবারের সদস্যরা। এমনটাই জানালেন মাইশার চাচা কামরুজ্জামান ডাবলু। ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা হামলায় নিহত হন যশোরের ঠিকাদার জেলা শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা নুরুজ্জামান পাপলু ও তার মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসনিম নাহিয়ানসহ ৮ জন।নুরুজ্জামান পপলুর ভাই কামরুজ্জামান ডাবলু বলেন, বাবা-মেয়ের মৃত্যু সবার হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। ভাবীর চোখের সামনে স্বামী-সন্তান আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তিনি সব চেয়ে বেশি মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যরাও শোকের সাগরে ভাসছে। এক বছর হয়ে গেল তাদের আমরা হারিয়েছি। আজ (বুধবার) তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হবে। একই সঙ্গে দোষীদের বিচার নিশ্চিত হবে। তবে সে সময় পপলু ও মাইশার ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছিল। তাই গত বছর ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার আমলি আদালত-৫ এর বিচারক মুনতাসির আহমেদ নিহত পপলু ও মাইশার মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। গত ২১ জানুয়ারি যশোর শহরের ঘোপ কবরস্থান থেকে পপলু ও মাইশার মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, শুধু বাবা ও মেয়েকে নয়, এর আগে কক্সবাজার চকরিয়া থেকে মো. ইউছুফ ও রাশেদুল ইসলাম বাদশাকে কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। নরসিংদীর আরও দু`জনের মরদেহ উত্তোলন বাকী আছে। ওই দুটি মরদেহেরর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে দ্রুত চার্জশিট দেয়া সম্ভব হবে।উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি এই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে ৫৬ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন ও এজাহারবহির্ভূত ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।মিলন রহমান/এসএস/পিআর
Advertisement