দেশজুড়ে

উপকূলের সাত উপজেলা নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা

পটুয়াখালী ও বরগুনার সাত উপজেলা নিয়ে পরিবেশ ও পর্যটন ভিত্তিক সমন্মিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। এর আওতায় এসব এলকার সার্বিক উন্নয়ন কাজ সম্পাদিত হবে। যাতে সুনির্দিষ্টভাবে অবকাঠামোগত পরিকল্পনা এবং পরিবেশ ও প্রতিবেশ সমুন্নত রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকছে।

Advertisement

আগামী কয়েক দশকে পরিকল্পা অনুযায়ী এই এলাকায় পর্যটন হাব তৈরি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ‘পায়রা বন্দর নগরী ও কুয়াকাটা উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ-পর্যটন ভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

দেশের দক্ষিণের এ জেলাগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, বনৌজা শের ই বাংলা নৌ ঘাঁটি, আলীপুর মহিপুর ফিস ল্যান্ডিং স্টেশনসহ কুয়াকাটার মতো বিকশিত পর্যটন কেন্দ্র। আর পার্শ্ববর্তী জেলা বরগুনাতেও রয়েছে বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র এবং সরকারের মেগা সব প্রকল্প। এজন্য পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী এবং বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, তালতলি, আমতলি ও পাথরঘাটা উপজেলাকে নিয়ে হচ্ছে পরিবেশ পর্যটন ভিত্তিক সমন্বিত এ উন্নয়ন পরিকল্পনা।

এনিয়ে সম্প্রতি পটুয়াখালী প্রকল্প এলাকার সাত উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দিনব্যাপী কর্মশালা। এতে প্রকল্প এলাকার জিওলজি ও হাইড্রোলজি, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, প্রকল্প এলাকার কৃষি-বন-পরিবেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং উপজেলা ভিত্তিক স্ট্রাকচার প্ল্যান ও আরবান এরিয়ার খসড়া প্ল্যান তৈরি করে উপস্থাপন করা হয়।

Advertisement

এই প্রকল্পের রিজিওনাল প্ল্যানার ও বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরেন এবং প্রকল্পের বিষয়ে উপস্থিত প্রতিনিধিদের ব্রিফ করেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা মুক্ত আলোচনায় জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে সব কিছু নির্ধারণ করা থাকবে। কোন স্থান পর্যটনের জন্য ভালো হবে, কোথায় আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, কোথায় মাছের বাজার হবে, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় কোথায় বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। কোথায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হবে। এছাড়া কোন স্থানে ভারী শিল্প, কোন স্থানে মাঝারি শিল্প নির্মাণ করা সম্ভব হবে এবং এগুলো ফলপ্রসূ হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। পাশাপাশি এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কেও এই পরিকল্পনায় নির্দেশনা থাকছে। এদিকে প্রকল্পের সুফলভোগী এলাকার মানুষ মনে করেন, এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বিশ্ব মানের পর্যটন ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র তৈরি হবে।

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুম্মান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা এখন এক-দুই দিন থেকে এরপর আর কোনো স্থানে যাওয়ার সুযোগ পায় না। তবে এই প্রকল্পের যে পরিকল্পনা রাখা হয়েছে তাতে পূর্ব দিকের সোনারচর থেকে পশ্চিমের হরিণঘাটা পর্যন্ত পর্যটকরা ঘুরতে পারবেন। ফলে এই এলাকায় একটি সমৃদ্ধ পর্যটন এলাকা হিসেবে পর্যটকদের কাছে সমাদৃত হবে।

এই প্রকল্প বিষয়ে আয়োজিত কর্মশালায় বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান বলেন, দেশের অন্যান্য পর্যটন স্পটের অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব উন্নয়ন কাজ সম্পাদিত হলে পুরো দক্ষিণ এলাকায় পর্যটন ও ব্যবসা বাণিজ্যে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হবে। এর ফলে এখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশসহ মানুষের জীবন জীবিকা সবকিছুই ঠিক থাকেব। কোনো সেক্টরের কারণে কোনো সেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই পরিকল্পনা প্রণয়নে সরকারের ৪০টি সংস্থার বাস্তবায়নকৃত প্রকল্প সমূহের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণসহ জিআইএস ডাটাবেজে তা চিহ্নিত করা হয়েছে।

Advertisement

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে কুয়াকাটার এখন নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি অগের থেকে অনেক বেশি বাড়ছে। তবে সাত উপজেলা নিয়ে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এর ফলে এখানকার পর্যটন ও ব্যবসা বাণিজ্য হবে পরিকল্পিত। এতে করে দেশি বিদেশি ব্যবসায়ীরাও এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।

আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/এএসএম