ফিচার

জীবন বাঁচানোর শঙ্কায় আত্মগোপনে ছিলাম: খোকন সেরনিয়াবাত

একটি সদ্য স্বাধীন দেশের অগ্রযাত্রাকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দেওয়ার সুদীর্ঘ চক্রান্তের অংশ হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী, দেশি-বিদেশি অপশক্তি এবং ঘাতকচক্র সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর বিশ্বস্ত মানুষদের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যা করেছিল। সেই নির্মম রাতে জাতির পিতার অতি আস্থাভাজন ও তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি প্রশাসন, ভূমি সংস্কার ও ভূমি রাজস্ব ও বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সরকারি বাসভবনে আক্রমণ করে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় সেনাবাহিনীর বিপথগামী কতিপয় সেনা অফিসার। ২৯ নম্বর মিন্টু রোডে (বর্তমানে পুলিশ কমিশনার অফিস) আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সরকারি বাসভবনে সেদিন ঘাতকদের গুলি শরীরে নিয়েও দৈবক্রমে বেঁচে যান তাঁর ছেলে এবং বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত।

Advertisement

এমন নারকীয় ঘটনার সাক্ষী খোকন সেরনিয়াবাতের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর সেদিনের নির্মমতা ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের ওপর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. সাঈদ মাহাদী সেকেন্দার—

জাগো নিউজ: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পূর্ববর্তী দিনটি কেমন ছিল?খোকন সেরনিয়াবাত: অন্যান্য দিনের মতোই দিনটি খুবই স্বাভাবিক ছিল। ১৪ আগস্ট আমার দাদির মৃত্যু দিবস ছিল। সেদিন আমাদের বাড়িতে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়। আমাদের সরকারি বাসায় আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতি ছিল। আমার দাদির মৃত্যুবার্ষিকী হলেও নিকট আত্মীয়দের উপস্থিতিতে উৎসবমুখরই ছিল পরিবেশ। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ মণি, আরজু মণি, শেখ পরশ, শেখ তাপস, শেখ জামাল, রোজি জামাল, শেখ আবু নাসেরসহ অনেকেই সন্ধ্যার মিলাদে উপস্থিত ছিলেন আমাদের বাসায়। আমরা পারিবারিক বন্ধনে দারুণ সময় উপভোগ করি। আমাদের আড্ডা-গল্প চলে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। এরপর অতিথিরা তাদের বাসার উদ্দেশে চলে যান। খুবই স্বাভাবিক ছিল সময়টি।

জাগো নিউজ: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে?খোকন সেরনিয়াবাত: সবাই চলে যাওয়ার পর আমরা সেদিন একটু বেশি রাতেই ঘুমাতে যাই। আনুমানিক ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে হবে, তখন বাইরে গুলির আওয়াজ শুনতে পাই। আমরা ভাই-বোনেরা নিজেদের রুম থেকে বের হয়ে আমার বাবা আবদুর রব সেরনিয়াবাতের রুমে যাই। তখন আমার বাবাকে দেখলাম খুবই বিচলিত এবং আমার মা (বঙ্গবন্ধুর বোন) বলেন, ভাইজানকে ফোন দাও। বাবা তখন মামাকে (বঙ্গবন্ধু) ফোন দিয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তখন ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে মামা (বঙ্গবন্ধু) বলেন তিনি বিষয়টি দেখেতেছেন। আমিসহ আরও অনেকেই আমার বাবার রুমে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উপস্থিত ছিলাম। খানিক পরেই কয়েকজন সেনাসদস্য আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা সশস্ত্র অবস্থায় আমার বাবাসহ সবাইকে নিচের তলায় নামার জন্য বলে। আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি এবং তাদের নির্দেশে আমরা নিচতলার ড্রয়িং রুমে জড়ো হই। আমার বাবা তখন তাদের কমান্ডিং অফিসারের বিষয়ে জানতে চান। তবে তারা অস্ত্র উঁচিয়ে সময়ক্ষেপণ না করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে।

Advertisement

জাগো নিউজ: যখন গুলি শুরু হয়, তখন আপনি কোথায় ছিলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: আমিও অন্যদের সাথে নিচতলার ডাইনিংয়ে জড়ো হই। এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হলে আমার পায়ে এসে গুলি লাগে এবং আমি লুটিয়ে পড়ি। আমার দুপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় আমার বোন বেবি সেরনিয়াবাত এবং ভাই আরিফ সেরনিয়াবাত। দুজনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। যখন আমার মনে হলো সেনাসদস্যরা আমাদের বাসা থেকে প্রস্থান করেছে; তখন আমি উঠে দেখি, আমার বাবা-মা, ছোট ভাই, বোনসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। এর মধ্যে স্থানীয় থানার একটি পুলিশের গাড়ি আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং আহতদের রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়।

জাগো নিউজ: পুলিশ আসার পর আপনি কী করলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: আমি তখন বাইরে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমার বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেয়ে কান্তা এবং ছেলে সাদিককে (বসিক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ) নিয়ে একটি রিকশায় চড়ে পুরান ঢাকায় চলে আসি। সেখানে এক আত্মীয়ের বাসায় কান্তা এবং সাদিককে নিরাপদে রেখে আমি আমার বোনের শ্বশুরবাড়ির এক আত্মীয়ের একটি প্রিন্টিং প্রেসে আশ্রয় নিই।

জাগো নিউজ: আপনি যখন বাড়ির বাইরে বের হন, তখন পরিবেশ কেমন ছিল?খোকন সেরনিয়াবাত: তখন সকাল হয়েছে। আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়েছে। উৎসুক জনতা ছিল, এর মধ্যে কয়েকজন আমাকে রিকশায় তুলে দিলো। তাদের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট ছিল। কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। নিরাপদ কোথাও ছুটে যেতে চাচ্ছিলাম। তারপর আমার ওই আত্মীয়ের ‘ইউনিভার্সাল প্রেসে’ উঠি।

জাগো নিউজ: প্রেসে অবস্থানের সময়টি যদি বর্ণনা করতেন—খোকন সেরনিয়াবাত: কোনো আত্মীয়ের বাসার চেয়ে আমার এ জায়গাটাকেই নিরাপদ মনে হয়েছিল। যেহেতু আমার পায়ে গুলি ছিল, সেখানে আমার চিকিৎসা জরুরি হয়ে পড়ে। গোপনে ডাক্তার ডাকা হলো। আমার পায়ে মূলত দুটি গুলি লাগে। ডাক্তার একটি বের করতে পারলেন, আরেকটি গুলি বের করা সম্ভব হয় না। আমি সপ্তাহখানেক সেখানে অবস্থান করি এবং আমার বোন জামাই মাঝে মাঝে এসে খুব গোপনে খাবার দিয়ে যেতেন। আমার দিন চলে অর্ধাহারে-অনাহারে। আমার সাথে বাড়তি কাপড়ও ছিল না। এক কাপড় পরতে থাকলাম। তখন সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। সেখান থেকেই আমি চট্টগ্রামে চলে যাই।

Advertisement

জাগো নিউজ: চট্টগ্রাম কীভাবে গেলেন এবং পরে সেখানে সময় কেমন কাটলো?খোকন সেরনিয়াবাত: আমার এক গণিত শিক্ষক আমার বোন মারফত খবর পেয়ে আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যান। সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে কাঠ পরিবরহন করা একটি ট্রাকে আমি এবং আমার গণিত শিক্ষক রাতে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা করি। আমার শিক্ষক মূলত যাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ঘটনার ১৮ দিন পর আমার ঢাকার বাইরে যাত্রা করা। আমরা সকালের দিকে চট্টগ্রামের মিরসরাই নামি। সেখান থেকে গ্রামের সরু রাস্তা ধরে গ্রামের ভেতর প্রবেশ করি এবং আমার শিক্ষকের পরিচিত একজনের বাসায় আশ্রয় নিই। সেখান থেকে কয়েকদিন পর ফেনী নদীর পাশে আলীপুর নামক এক গ্রামে ৮-১০ দিন অবস্থান করি।

জাগো নিউজ: আপনি কি তখন নিরাপদ বোধ করছিলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: তারা আমার পরিচয় হয়তো জানতে না পারলেও কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিল বলে আমার মনে হয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী সেনাবাহিনী কিন্তু আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের খুঁজতে তল্লাশি শুরু করে। ফলে আমি নিজেকে অনিরাপদ বোধ করি। যে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম, সে বাড়ির এক যুবক ছেলে নাম সবুজ, তার সহযোগিতায় কলাগাছের মাধ্যমে সাঁতার কেটে ফেনী নদী পার হয়ে ছাগলনাইয়া এসে এক বাড়িতে আশ্রয় নিই। পরে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে নিউমার্কেটের পাশে সুখতারা হোটেলে অবস্থান করি এবং আমার সেই শিক্ষকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমার ওই শিক্ষক আমাকে ভারত যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং তিনি নিজেই আমার যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম থেকে ৪-৫ দিন পর ফেনীর ছাগলনাইয়া ফিরে এসে অক্টোবরের ১২-১৩ তারিখ বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করি। ভারতের নলুয়া নামক স্থানে বিএসএফের হাতে আটক হই। আমার পরিচয় দেওয়ার পর তারা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর একদিন পর বিএসএফ আমাকে আগরতলা নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করে আমার গুলিবিদ্ধ পায়ের অপারেশন করে অপর গুলিটি বের করে। হাসপাতালে ২২-২৩ দিন কাটানোর পর কার্গো বিমানে করে কলকাতা আসি এবং দমদম বিমানবন্দর থেকে বরিশালের চিত্তরঞ্জন সুতার কলকাতার বাড়িতে আশ্রয় নিই।

জাগো নিউজ: আপনার পরিবার, বঙ্গবন্ধুর পরিবার, শেখ মণির পরিবারের ওপর একই হামলা হয়। আপনি সেসব বিষয়ে কি কিছু জানতে পেরেছিলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: আমি কলকাতা যাওয়ার আগে অন্যদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল না। যদিও সেদিনের হামলার বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম। আমার দু’বোন হেনা সেরনিয়াবাত এবং বিউটি সেরনিয়াবাত সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান। আজও তারা গুলির ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন। আমি তাদের সাথেও সেভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমার মামা বঙ্গবন্ধুসহ তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ রাসেল, শেখ জামাল, রোজি জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আমার ছোট মামা শেখ আবু নাসেরও ঘাতকের বুলেটে মারা যান। এ ছাড়া আমার বোন আরজু মণির বাড়িতে আক্রমণ হয় এবং আমার বোন আরজু মণি এবং আমার বোন জামাই শেখ ফজলুল হক মণি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। যা আমি প্রেসে অবস্থানকালে জানতে পারি। আমার বোনের পরিবার এবং বিশেষ করে আমার ভাগ্নে শেখ পরশ (আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান) এবং শেখ তাপস (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র) তাদের মায়াবী মুখ মনে পড়ছিল। যা আমাকে আরও বেশি ব্যথিত করে তোলে। ঘটনা জানলেও যোগাযোগ না থাকার কারণ হলো আমি তখন নিজের জীবন বাঁচানোর শঙ্কায় অনেকটা আত্মগোপনে ছিলাম। কলকাতা যাওয়ার পর কলকাতার নর্দান পার্ক চিত্তরঞ্জনের বাড়িতে শেখ সেলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয় এবং কলকাতা থিয়েটার রোডে আমার বড় ভাই থাকতেন, তার সাথে সাক্ষাৎ হয়। কলকাতার লেক টাউনে বিএফএফের ক্যাম্পে ৫ম এবং ৬ষ্ঠ তলা দুটি ফ্লোরে বাংলাদেশ থেকে আমরা যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য গিয়েছিলাম, তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। পরে ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমি, সেলিম ভাই এবং শেখ মারুফ দিল্লি গিয়ে হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তখন এক হৃদয় বিদারক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অন্যরা দিল্লি থেকে চলে গেলেও আমি হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করি।

জাগো নিউজ: ভারত যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো সহযোগিতা পেয়েছিলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: তখনকার সময়ে চলমান সংকটে আমি বা আমাদের পরিবারের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগের সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্তদের পরিস্থিতি অনেকটা সংকটকালীন সময়ের মতো ছিল। ফলে অনেকের আমাদের সহযোগিতা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তবে ইউনিভার্সাল প্রেসে অবস্থানকালে টেলিভিশন সংবাদের মারফতে জানতে পারি, তৎকালীন খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৬০-৭০ জন যোগদান করে। যা আমাকে ব্যথিত করেছে।

জাগো নিউজ: ১৫ আগস্ট স্মরণে কোনো দোয়া অনুষ্ঠান হয়েছে, এমনটি আপনার মনে পড়ে?খোকন সেরনিয়াবাত: ১ বছর কেটে গেল জীবনের চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে। তখন দিল্লিতে শেখ হাসিনা আপা এবং রেহানার সঙ্গে আমিই ছিলাম। কারোরই মনের অবস্থা ভালো ছিল না। আপার কথামতোই আমি হাসিনা আপা এবং রেহানা একসঙ্গে আজমির শরিফ গেলাম। সেখানে প্রথম ১৫ আগস্ট উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। খাদেম কলিমউদ্দিন আমাদের নিয়ে দোয়া করেন। সেদিন রেহানা ও আমি কান্না করছিলাম। শেখ হাসিনা আপাকেও দেখি কান্না করতে। তবে তিনি বারবার আমাদের থেকে লুকাতে চান আর সান্ত্বনা দেন।

জাগো নিউজ: আপনি কখন বাংলাদেশ ফিরে আসেন এবং পরিস্থিতি কেমন দেখলেন?খোকন সেরনিয়াবাত: আমি রাজনৈতিক আশ্রয় শেষে ৪ বছর পর দেশে ফিরে আসি। আমি প্রথমে ঢাকা আসি। এরপর বরিশালের কালিবাড়ি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু তখন জিয়াউর রহমান বাড়িটি সিজ করে নেয়। ফলে আমাদের বাড়িতে আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকায় সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এ বাড়ি-ও বাড়ি করে আমাকে নিদারুণ কষ্টে সময় পার কারতে হয়েছিল। আমার বাবা নীতিবান রাজনীতিক হওয়ায় আমাদের জন্য বিশেষ ধন-সম্পদ রেখে যেতে পারেননি। স্বভাবতই অর্থনৈতিক চাপ এসে পড়ে। জীবন-জীবিকার তাগিদে আমি খুলনায় নিজের পরিচয় গোপন রেখে ব্যবসা শুরু করি। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকায় আমাদের পরিবারের ওপর যথেষ্ট চাপ ছিল। স্বাভাবিক জীবনযাপনও করতে পারছিলাম না।

জাগো নিউজ: আপনাকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায় না। বড় নেতার সন্তান এবং জাতির পিতার ভাগ্নে হিসেবে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে বলে মনে করেন কি?খোকন সেরনিয়াবাত: আমার শৈশব কেটেছে আমার বাবার সংস্পর্শে। প্রায় ১৭ বছর আমি বাবার সংস্পর্শে তার নেতৃত্ব গুণ এবং সততার স্বাক্ষী। বাবার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বাবার প্রত্যাশা ছিল দেশ গঠনে আমিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখব। তিনি আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। রাজনীতি থেকে ধর্মীয় সব বিষয়ে গল্প হতো বাবার সাথে। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে হয়তো আমার সম্মুখে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে আমি ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠনে বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছি দীর্ঘদিন ধরে। সুতরাং আমার বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করেন, আমার কোনো রাজনৈতিক বা জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উচিত; সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই আমি তা পালনে শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমার বাবা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের আদর্শ ধারণ করে সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

জাগো নিউজ: আপনার সফলতা কামনা করছি এবং সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।খোকন সেরনিয়াবাত: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসইউ/জিকেএস