‘আব্বা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তুমি আসো, তাড়াতাড়ি আমাকে বাঁচাও’—রাতে বাবাকে ফোন করে এভাবেই বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছিলেন মনিরা খাতুন (২৩)। পরে তার স্ত্রী ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘কোথায় পাবেন জানি না, ২০ হাজার টাকা দেন। না হলে মেয়ের লাশ পাবেন।’
Advertisement
কথাগুলো বলেন মনিরা খাতুনের বাবা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাতলামারী এলাকার দিনমজুর মনিরুল ইসলাম।
রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে শ্বশুর বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকা থেকে মনিরা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মনিরা খাতুন একই ইউনিয়নের নওদা আজমপুর এলাকার সজিব মোল্লা অনিকের স্ত্রী।
Advertisement
এলাকাবাসী জানায়, যৌতুকের টাকার জন্য কিছুদিন পরপরই মনিরা খাতুনকে মারধর করতেন তার স্বামী সজিব মোল্লা অনিক (২৮)। একই কারণে দুদিন ধরে তাকে খেতে পর্যন্ত দেননি সজিবের মা রাজেনা খাতুন (৪০)। শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে মারধর করেন তারা। পরে স্থানীয়রা তাদের বাধা দেয়। পরে রাতে আবার চিৎকার শুনতে পান প্রতিবেশীরা। সকালে সবাই জানতে পারেন রাতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মনিরা।
নিহত মনিরা খাতুনের বাবা মনিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে তার কাছে ফোন করেন মনিরা খাতুন। ফোন দিয়ে বলেন, ‘বাবা, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে এসে নিয়ে যাও, আমাকে বাঁচাও’। তখনই জামাই সজিব তার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘আমার ২০ হাজার টাকা দরকার। কোথায় পাবেন তা জানি না। আমাকে টাকা দেন না হলে আপনার মেয়েকে মারতে মারতে মেরে ফেলবো।’ তখন বাবা মনিরুল ইসলাম তাকে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, টাকা কোথায় পাবো? মেয়েকে মেরে ফেললেও এখন টাকা দিতে পারবো না।’
পরিবার সূত্র জানায়, পরিবারের অমতে পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক করে সজিব বিয়ে করেন মনিরা খাতুন। পরে জামাইকে নগদ এক লাখ টাকা দেন মনিরুল ইসলাম। পরে দফায় দফায় আরও ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও টাকার জন্য মারধর করে সজিব। মাঝে মধ্যে এমন মারধর করলে আমি এসে মেয়েকে একাধিকবার আমার বাড়িতে নিয়েও গেছি। গতকাল এসে যদি নিয়ে যেতাম তাহলে আজ হয়তো মেয়ের লাশ দেখতে পেতাম না। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই যাতে আর কোনো বাবার বুক এভাবে খালি না হয়।’
Advertisement
নিহত মনিরা খাতুন ও সজিবের সংসারে তিন বছর এবং ৮ মাস বয়সী দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে মনিরা খাতুনের স্বামী সজিব মোল্লা অনিক (২৮), তার বাবা শরিফ মোল্লা (৪৭) এবং সজিবের মা রাজেনা খাতুন পলাতক।
আমলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
আল-মামুন সাগর/এসআর