শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোনার রাজাকার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, আজ রায় প্রদানকালে আদালত বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে বির্তকের কোনো অবকাশ নেই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে শহীদ পরিবারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। এ রায় শহীদ পরিবারের জন্য স্বস্তি ও সান্ত্বনা। দীর্ঘ সময় পর হলেও ন্যায়বিচার পেয়েছে শহীদ পরিবারগুলো। মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৪টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণে প্রসিকিউশন সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে ১ ও ২ নং অভিযোগে আসামিদের আমৃত্যুকরাদণ্ড এবং ৩ ও ৫ নম্বর অভিযোগে এ আসামিদের ফাসিঁতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ আসামিদের দ্বারা যে নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তাতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজাই প্রাপ্য বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।বাদল বলেন, এ আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, দেশান্তরিতকরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সর্বোচ্চ এ সাজা দেয়া হয়েছে।মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১০ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক পেশ শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ২৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার উপস্থাপন শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। রায়ের প্রথম অংশ পড়েন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দী। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন অন্য সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। সবশেষে রায়ের মূল অংশ ও দণ্ড ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক।সরকার ইচ্ছা করলে দণ্ডিত তাহের ও ননীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াড) হত্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারে। মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ দুই প্রক্রিয়ার যেকোনো একটি অবলম্বন করা সরকারের ইচ্ছাধীন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামি তাহের ও ননীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে আসামির কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুসহ প্রসিকিউশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাসহ বিপুল সংখ্যক গণমাধ্যম কর্মী ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে উপস্থিত ছিলেন।এফএইচ/এসকেডি/এমএস
Advertisement