# দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ পাম অয়েলে ৩০০, চিনিতে ২০০ এবং গমে বেড়েছে ১৫০ টাকা# ডলারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে দাম বাড়ছে, দাবি ব্যবসায়ীদের# আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাড়ছে দেশের বাজারে
Advertisement
নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সপ্তাহের শুরুতেই ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের দাম বেড়েছে হু হু করে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ ভোজ্যতেলে ৩০০ টাকা, চিনিতে দুইশ টাকা এবং গমে আরও দেড়শ টাকা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দামে ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট ওঠানামার কারণে গত কয়েক মাস ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা ছিল। বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। বাংলাদেশে পাম অয়েলের বাজার সে সময় প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
Advertisement
পরবর্তী সময়ে ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে স্বাভাবিক হতে থাকে ভোজ্যতেলের বাজার। বিশেষত গত সপ্তাহে পাম অয়েলের দাম ৪৭০০ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু গত দুদিনে আবার বেড়েছে পাম অয়েলের দাম। খাতুনগঞ্জে দুদিন আগে সিটি গ্রুপের পাম অয়েল ৪৭০০ টাকায় বিক্রি হলেও বুধবার রাতে ৫১০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। অন্যদিকে এসআলম গ্রুপের পাম অয়েল দুদিন আগে ৪৬৫০ টাকা থেকে বেড়ে বুধবার ৪৯৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনির দামও বেড়েছে। গত কয়েকমাস ধরে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ চিনি ২৬শ থেকে ২৮শ টাকায় বেচাকেনা হয়ে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত দুদিনে চিনির দাম ছাড়িয়েছে মণপ্রতি তিন হাজার টাকা।
খাতুনগঞ্জের ডিও ব্যবসায়ী আবু তাহের বুধবার রাতে জাগো নিউজকে বলেন, একদিন আগেও প্রতি মণ পাম অয়েল ছিল ৪৭শ টাকা। আজকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। চিনির দামও বেড়েছে। ২৮৫০ টাকার চিনি আজকে ৩ হাজার ৫০ টাকা। হঠাৎ করে হু হু করে দাম বাড়ছে। বাজার গরম, তাই আজকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিও কেনাবেচা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় এস আলম গ্রুপের চিনি প্রতি মণ ৩ হাজার টাকা, সিটি গ্রুপের চিনি ৩০৫০ টাকা এবং মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের চিনি বিক্রি হয়েছে ৩০৩০ টাকায়।
Advertisement
খাতুনগঞ্জের চিনির ব্যবসায়ী ইমাম শরীফ ব্রাদার্সের পরিচালক ছৈয়দুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, ৯০ টাকার ডলার এখন ১২০ টাকা। চিনির (কাঁচামাল) আসে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে। যে কারণে ডলারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুধু চিনি নয়, সব পণ্যের দাম বাড়ছে। তাছাড়া মিলগুলোতে বর্তমানে চিনির মজুতও কম। তাই গত দুদিন ধরে চিনির দাম বাড়ছে।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম নিয়ে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অস্থিরতা শুরু হয়। গত এপ্রিল থেকে গম নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাতামাতি শুরু হয়। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন খাদ্যশস্য ও ভোজ্যতেল রপ্তানি শুরু করলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। কমতে থাকে গমের বুকিং রেটও। কিন্তু খাতুনগঞ্জের বাজারে তার উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমলেও ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে গমের দাম কমছে না। গত দুদিনে গমের দাম বেড়েছে প্রতি মণে দেড়শ টাকা।
খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ী আবু তৈয়্যব জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে নরম গমের চাহিদা বেশি। নরম গম আসে ভারত ও রাশিয়া থেকে। এখন বাজারে রাশিয়ান গম নেই। ইন্ডিয়ান গম থাকলেও দাম বাড়ছে। বুধবার ইন্ডিয়ান গম প্রতি মণ ১৬১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। দুই-তিন দিন আগেও এ গমের দাম ছিল ১৪৬০ টাকা।
এ ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন ডলারের দাম বাড়ছে। আজকে ১১৯ টাকা পর্যন্ত ডলারের দাম উঠেছে। তেল-চিনি-গমের বাজার আন্তর্জাতিকভাবে ওঠানামা করছে। ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমলেও আমাদের দেশে পণ্যের দাম বাড়ছে।
খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ বৃহস্পতিবার সকালে জাগো নিউজকে বলেন, কোনোভাবেই বাজারে ডলারের দাম কমছে না। বর্তমানে যেসব এলসি হচ্ছে, সেগুলোর জন্য বাইরে থেকে ডলার কিনে আমদানিকারকরা এলসি খুলছেন। খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার হলেও এখানকার ভোগ্যপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখন ডলারের দাম বাড়তি থাকার কারণে বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। পণ্যের দাম বাড়ছে। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার আরও বাড়তে পারে।
এমএইচআর/জিকেএস