দক্ষিণ কোরিয়ায় চলছে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। প্রতিবারের মতো এবারও গ্রীষ্মকালীন মিলনমেলার আয়োজন করেছে ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়া।
Advertisement
রোববার (৩১ জুলাই) গাংউয়ন প্রদেশের বিখ্যাত নাকসান ও হাজেদো সমুদ্র সৈকতে এ মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ইতিহাসে সব দেশের অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিলন মেলা ও অবিস্মরণীয় লাল সবুজের মানব পতাকা তৈরি করে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশিরা।
আমরা একা নই, আমরা শক্তি, আমরা সমষ্টি এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে ২০১২ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করা এই সংগঠনটি কোরিয়ায় থাকা বাংলাদেশীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে আসছে।
এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে ৩২টি বিলাসবহুল বাস ও ১৩টি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এক হাজার ৫৪২ জনেরও বেশি প্রবাসী এই মিলনমেলায় অংশ নেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন পরে অবিস্মরণীয় আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে প্রবাসীরা আনন্দ ও খোশগল্পে মেতে ওঠেন। সেদিন ভিনদেশী সমুদ্র পাড়ে এ যেন এক টুকরো লাল সবুজের বাংলাদেশে পরিণত হয়।
Advertisement
মিলনমেলায় অংশ নিয়েছিল অর্ধশতাধিক বাংলাদেশী পরিবার। এ দিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল সংগীত পরিবেশনা, ফটো ও ভিডিও কনটেন্ট প্রতিযোগিতা, ধাঁধা, কুইজ, রাফেল ড্র, আঞ্চলিক কৌতুক, প্রবাস জীবনের নানা অনুভূতি ও সেরা সুদর্শনের প্রতিযোগিতাসহ নানা ব্যতিক্রমী আয়োজন। এছাড়াও অংশ নেওয়া সবাইকে বিভিন্ন ধরনের উপহার দেওয়া হয়।
নুর আলম মোল্লা ও সুমি বড়ুয়ার প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় দুপুর ১টার দিকে অনুষ্ঠানের শুরুতে সমগ্র বিশ্বের শান্তি কামনা করে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত পাঠ করেন মোহাম্মদ আরিফ রেজা ও পবিত্র গীতা পাঠ করেন হিমু মণ্ডল। এরপর জাতীয় সংগীত শুরু করার আগে লাল ও সবুজ টি-শার্ট পড়া সবাইকে জাতীয় পতাকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে মানব পতাকা সৃষ্টি করার অনুরোধ করা হয়।
প্রিয় মা, মাটি ও দেশকে ভালোবেসে নাকসান সমুদ্র পাড়ে দেড় সহস্রাধিক বাংলাদেশির একসঙ্গে জাতীয় সংগীত গাওয়ার দৃশ্য সত্যিই এক অসাধারণ শিহরণ ও আনন্দানুভূতি সৃষ্টি করে। এ সময় বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দক্ষিণ কোরিয়ার মাটি। একসঙ্গে এত বাংলাদেশিদের দেখে উপস্থিত পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় কোরিয়ানদের মধ্যেও কৌতুহলের শেষ ছিলনা। তারাও মিলনমেলার আনন্দে শামিল হয়।
এ সময় ইপিএস বাংলার সভাপতি কামরুল হাসান রাজ সবাইকে একসঙ্গে দেখে অবাক ও আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এই মুহূর্তে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, শিহরণ জেগে উঠেছে শরীরে। আপনারা রিপ্রেজেন্ট করছেন লাল সবুজের বাংলাদেশকে।
Advertisement
ইপিএস বাংলার উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান ও মিলনমেলায় আল্লাহর রহমত ও বরকত থাকে বলে আমরা প্রতিবার সফল হই।
পরে কোরিয়ান জাতীয় সংগীত এক স্বরে গাওয়ার পর বিশিষ্ট শিল্পী খানের মনোমুগ্ধকর গান সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ও কইন্যা কাইন্দনা, মান কইরোনা এই গানের অসাধারণ কণ্ঠ শুনে সমুদ্র পাড়ে কিছুক্ষণের জন্য সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী মো. খান, সুমি বড়ুয়া, নওশাদ ফেরদৌস, মাহিম মণ্ডল হিমু, হাসান মজুমদার, এসকে সালেক, লাকি ডিজে, উজ্জ্বল হাওলাদার।
উপস্থিত সব প্রবাসীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান ইপিএস বাংলার সম্পাদক নয়ন কুমার দে, মিলন মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক ফারুক আহমেদ ও প্রধান সমন্বয়ক আশিকুন নবী রাসেল। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল জিএমই রেমিট্যান্স, বিডি হাউজের রাসেল বিন সোলাইমান,অরোরা বিডি টেলিকমের তরিকুল ইসলাম আপন, ইজিফুড, মাই ট্রিপস কোরিয়া ও এস এন ফুড।
অনেকদিন পর প্রবাসে এত লোকের সাক্ষাৎ, বাংলায় মনের ভাব প্রকাশসহ বাংলা খাবারের স্বাদ পেয়ে সবাই আনন্দিত ছিল। এ মিলনমেলায় অংশ নেওয়া সবাই আগামীতে প্রবাসে এমন আয়োজন আশা করে ইপিএস বাংলা কমিউনিটি ইন কোরিয়াকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
জেএস/জেআইএম