জাতীয়

ডিজিটাল কার পার্কিং এখন ঢাকায় (ভিডিও)

রাজধানী ঢাকায়ও চালু হয়েছে ডিজিটাল পার্কিং ব্যবস্থা। সেগুনবাগিচায় মৎস্য অধিদপ্তর অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে দেশে প্রথমবারের মতো চালু করেছে বহুতল ডিজিটাল কার পার্কিং বা অটোমেটিক মেকানিক কার পার্কিং গ্যারেজ। খবর সমকালেরব্যাপকভাবে কার পার্কিংয়ে এ ব্যবস্থা করা গেলে অফিস থেকে শপিং কমপ্লেক্স, জনসমাগম হয় এমন কোনো স্থানে গাড়ি রাখা নিয়ে ভাবতে হবে না আর। ভবনের সামনে সারি সারি গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যানজটের যন্ত্রণা পোহাতে হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি গাড়িটি নিরাপদ থাকবে কি-না এ দুশ্চিন্তাও কমিয়ে দেবে এ ব্যবস্থা। মৎস্য ভবনের সামনে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ধাতব তৈরি পাঁচতলা ভবনে ২১টি গাড়ি রাখার জায়গা আছে। পাঁচতলা ভবনে পাঁচটি স্তর আছে। একেবারে উপরের তলায় পাঁচটি গাড়ি রাখার জায়গা (আড়াআড়িভাবে) আছে। বাকি চারতলায় চারটি করে গাড়ি রাখা হয়। প্রথম থেকে চারতলা পর্যন্ত (প্রতি তলায় একটি করে ফাঁকা) একটি সারি (উপর-নিচ) ফাঁকা রাখা হয়েছে, যাতে করে সুবিধামতো গাড়ি আড়াআড়ি বা উপর-নিচ করে সরানো বা ওঠা-নামা করা যায়। তবে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি স্তরে প্রতিটি গাড়ির জন্য আলাদা নম্বর দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ২১টি গাড়ির জন্য আলাদা নম্বরবিশিষ্ট পাঞ্চ কার্ড দেওয়া হয়েছে। তিনতলার প্রথম গাড়িটি ওঠানো বা নামানোর প্রয়োজন হলে ৩০১ নম্বর কার্ড দিয়ে নির্দেশ দিলেই গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠবে বা নামবে। একটি গাড়ি ওঠা-নামার জন্য মাত্র এক থেকে দেড় মিনিট সময় নেয়।মৎস্য অধিদপ্তরের ভবনটি উচ্চতায় ৪৩ ফুট, দৈর্ঘ্য ৪৭ ফুট এবং প্রস্থে ২২ ফুট। এটি তৈরিতে জাপানি প্রযুক্তিতে চীনে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশি কোম্পানি `আজিজ অ্যান্ড কোম্পানি` এটি তৈরি করেছে। ডিজিটাল কার পার্কিং প্রস্তুতকারী এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক এ জেড খান জানান, মাল্টিলেভেল পার্কিং ব্যবস্থাটি বাংলাদেশে এই প্রথম। এটি হাইড্রোলিক ও বৈদ্যুতিক ক্ষমতায় চলে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ একেবারে কম। মাত্র ১১ থেকে ১৩ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ হয়। ভবিষ্যতে ডিজিটাল কার পার্কিং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হলে দেশে যানজটের হার অনেক কমে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। তবে প্রযুক্তিটি একেবারে নতুন হওয়ায় মৎস্য ভবনের কার পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটি একেবারে স্বয়ংক্রিয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে অটোমেটিকভাবে জেনারেটর চালু হয়। ফলে কাজে বিঘ্ন ঘটবে না। ডিজিটাল কার পার্কিং হওয়ার ফলে কেমন সুবিধা হচ্ছে এ প্রশ্নের জবাবে একজন জেলা মৎস্য কর্মকর্তার গাড়ি চালক কিশোর নন্দী বলেন, আগে গাড়ি রাখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে হতো। জায়গা না পেলে রাস্তার পাশে রাখতাম। ফলে যানজট সৃষ্টি হতো। হরতালের দিন গাড়ি রাস্তায় রাখাও নিরাপদ নয়। গাড়ি রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হতো। ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ফলে গাড়ি রাখার নির্দিষ্ট জায়গা হয়েছে। যখন গাড়ি নামানোর দরকার হয়, অপারেটরকে শুধু নম্বর বললেই গাড়ি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নেমে আসে।বহুতল ডিজিটাল কার পার্কিং ব্যবস্থা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মৎস্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, রাজধানীতে এমনিতেই জায়গার সংকট। এ কারণে অধিক সংখ্যক গাড়ি রাখা যায় না। এ বিষয়ে স্থাপত্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে ডিজিটাল কার পার্কিংয়ের ধারণা পাওয়া যায়। তবে ডিজিটাল কার পার্কিং সম্পর্কে জানতে আমরা চীনে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে বিষয়টি বিস্তারিত জানার পর আমরা এ প্রকল্পের কাজ শুরু করি। এখন গাড়ি রাখার সংকট ৮০ শতাংশ কমে গেছে।

Advertisement