জাতীয়

ননী-তাহেরের মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেত্রকোনার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছেন, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে তাদের দণ্ড কার্যকর করতে হবে।  মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। এরআগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২১টি মামলায় রায় এসেছে ২০১০ সালে গঠিত ট্রাইব্যুনাল থেকে। শুরুতে দুটি ট্রাইব্যুনাল দিয়ে বিচারকার্য চালানো হলেও পরে  মামলা সংখ্যা কমে যাওয়ায় বর্তমানে একটি ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। অপর ট্রাইব্যুনাল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মামলা সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে প্রয়োজনে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ট্রাইব্যুনাল একত্রিত হওয়ার পর প্রথম মামলার রায় এটি।  ট্রাইব্যুনাল থেকে সাজার রায় আসার পর আপিল বিভাগ ও রিভিউ নিষ্পত্তির পর মানবতাবিরোধী অপরাধে এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাও হয়েছে। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও সিনিয়র কর্মকর্তা সানাউল হক উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মামলার প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন খান। অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ মো. তানিম। দুই আসামির আত্মীয়-স্বজনও ট্রাইব্যুনালের এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় চতুর্থ ও ষষ্ঠ অভিযোগ থেকে তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ আসামিদের দ্বারা যে নৃশংস অপরাধ সংগঠিত হয়েছে তাতে তাদের মৃত্যুদণ্ডের সাজাই প্রাপ্য বলে পর্যবেক্ষণে বলেছেন আদালত।  মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। রায়ের প্রথম অংশ পাঠ করেন সদস্য বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী। দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। সর্বশেষে রায়ের মূল অংশ ও দণ্ড ঘোষণা করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক।রায় শোনানোর জন্য সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাহের ও ননীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় আনা হয়। সাড়ে ১০টায় তাদের ওঠানো হয় আদালতের কাঠগড়ায়।  রায় ঘোষণার পর প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এইচএম তানিম বলেন, আমরা সংক্ষুব্ধ। উচ্চ আদালতে আপিল করবো। তাতে আসামিরা খালাস পাবেন।উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১০ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএিভি) রাখেন আদালত। গত বছরের ২ মার্চ এ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। একই বছরের ৫ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য পেশ ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়। মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে ২৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষি হাজির করতে পারেননি।২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর এ দুই আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন।নেত্রকোনার আটপাড়ার ওবায়দুর হক ও কেন্দুয়া এলাকার আতাউর রহমানকে ২০১৪ সালের ১২ অগাস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্ত সংস্থা সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এ দুই আসামি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করতে গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।এফএইচ/এআরএস/এনএফ/পিআর

Advertisement