ধর্ম

আশুরার তাৎপর্য শিক্ষা করণীয় ও বর্জনীয়

মহররম হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস। এটি পবিত্র মাসের অন্তর্ভূক্ত। হাদিসে এ মাসটিকে ‘শাহরুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর মাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ মাসের ১০ তারিখকেই আশুরা বলা হয়। মাসটির শিক্ষা ও তাৎপর্য সবার জন্য কল্যাণের। তাছাড়া মাসটির বেশকিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে।

Advertisement

আশুরার তাৎপর্য১. রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। যখন রমজানের রোজার বিধান নাজিল হয়, তখন থেকে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ)২. হাদিসে এসেছে, আশুরার দিনের রোজা পালনের মাধ্যমে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার কাছে বিগত বছরের গুনাহ মাফের প্রত্যাশা রেখেছেন।’ (মুসলিম)৩. মহররম মাসের রোজাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের পর সর্বাধিক উত্তম রোজা বলে অভিহিত করেছেন। (মুসলিম)৪. আল্লাহ তাআলা আশুরার দিন মুসা আলাইহিস সালাম ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের অত্যাচারের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।’ (বুখারি)৫. মদিনার ইহুদিরা শুকরিয়া স্বরূপ এই দিনে রোজা রাখতো। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নেক আমলে নিজেদের বেশি হকদার হিসেবে উল্লেখ করে, নিজেও সাহাবিদের নিয়ে এই দিনে রোজা রাখেন। পাশাপাশি ইহুদিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য এড়াতে, পরবর্তী বছর থেকে আশুরার আগে বা পরে আরও একটি অতিরিক্ত রোজা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।’

আশুরার শিক্ষাআল্লাহর কাছে নিজেকে পরিপূর্ণ সমর্পন ও উৎসর্গ করার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। এর অন্যতম নুমনা হচ্ছে- নফল রোজা পালন করা। আশুরাও মুমিন মুসলমানকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি এ শিক্ষা দেয়।

নিজেদের আমিত্ব ও ইগো পরিহার, অন্যের ভালো কাজের স্বীকৃতি দেওয়া এবং ইহুদি-নাসারাদের থেকে ব্যতিক্রম ও স্বতন্ত্র ঐতিহ্য লালন করার ক্ষেত্রেও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষা।

Advertisement

বিশেষ করে আশুরার দিনে কারবালায় ঘটে যাওয়া ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘটনা ও আত্মত্যাগ, অন্যায় ও জুলুমের ব্যাপারে তাঁর আপোষহীন মনোভাব উম্মতে মুসলিমার জন্য এক অনন্য শিক্ষা।

আশুরায় করণীয়১. ঈমানি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া।২ আশুরার দিন রোজা রাখা।৩. ক্ষমা প্রার্থনা করা।৪. ত্যাগ ও কোরবানির শিক্ষা গ্রহণ।৫. আশুরায় রোজা পালনকারীদের ইফতার করানো।

আশুরায় বর্জনীয়১. হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাল্পনিক তাযিয়া বা নকল কবর বানানো থেকে বিরত থাকা।২. তাযিয়া বানিয়ে তা কাঁধে বা যানবাহনে বহন করে মিছিলসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করা থেকেও বিরত থাকা।৩. নকল এসব তাযিয়ার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকা এবং এসব তাযিয়া বা নকল কবরে নজরানা স্বরূপ অর্থ দান করা থেকেও বিরত থাকা।৪. নিজেদের দেহে আঘাত বা রক্তাক্ত করা থেকে বিরত থাকা।৫. শোক বা মাতম করা থেকে বিরত থাকা।৬. যুদ্ধ সরঞ্জামে সজ্জিত হয়ে ঘোড়া নিয়ে প্রদর্শনী করা থেকে বিরত থাকা।৭. হায় হুসেন, হায় আলি ইত্যাদি বলে বিলাপ, মাতম কিংবা মর্সিয়া ও শোকগাঁথা প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বুকে পেটে পিঠে ছুরি মেরে রক্তাক্ত করা থেকেও বিরত থাকা।৮. ফুল দিয়ে সাজানো এসব নকল তাযিয়া বা কবরের বাদ্যযন্ত্রের তালে প্রদর্শনী থেকে বিরত থাকা।৯. হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহ আনহুর নামে ছোট বাচ্চাদেরকে ভিক্ষুক বানিয়ে ভিক্ষা করানো। এটা করিয়ে মনে করা যে, ঐ বাচ্চা দীর্ঘায়ু হবে। এটাও মহররম বিষয়ক একটি কু-প্রথাও বটে।১০. আশুরায় শোক প্রকাশের জন্য নির্ধারিত কালো ও সবুজ রঙের বিশেষ পোশাক পরা থেকে বিরত থাকা।

১১. আশুরা বা ১০ মহররমকে কেন্দ্র করে এসব প্রচারণা থেকে বিরত থাকা জরুরি-> ১০ মহররম পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়।> কেয়ামত সংঘটিত হওয়া।> হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের সৃষ্টি। বেহেশতে প্রবেশ। আরাফাতের ময়দানে একত্রিত হওয়া।> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আগুন থেকে নাজাত।> হজরত নুহ আলাইহিস সালামকে মহাপ্লাবন থেকে নিষ্কৃতি ও পাপিষ্ঠ জাতিকে ধ্বংস।> এই দিনেই অত্যাচারী শাসক নমরূদের ধ্বংস। মূল কথা হলো এদিন তাজিয়া, মার্সিয়া, শোক পালন, এই দিনে বিয়ে শাদীকে অমঙ্গলজনক মনে করা, এ দিনে ভালো খাবার দাবারের আয়োজন করলে বছর জুড়ে ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা হবে ইত্যাদি পালন, কুধারণা ও বিশ্বাস পরিত্যগ করা জরুরি।

Advertisement

এমএমএস/এমএস