ভ্রমণ

সুন্দরবন ভ্রমণে যে ৬ স্পটে অবশ্যই যাবেন

রুবেল মিয়া নাহিদ

Advertisement

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। ছোটবেলা থেকেই সুন্দরবনের প্রতি আমার অসম্ভব রকমের ঝোঁক। অপার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সুন্দরবন যারা দেখেননি তারা ছুটিতে বেড়িয়ে যেতে পারেন এই সুন্দরী ম্যানগ্রোভ বন।

দুই বন্ধু অভি ও রাসেলকে নিয়ে রাত ১০টায় খুলনার উদ্দেশ্য কমলাপুর রেল স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসার কথা সাড়ে ১০টায়, আসলো ১১টায়। রাতের আধার কাটিয়ে আমাদের পৌঁছাতে সকাল ৭টা বেজে গেল।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করে আবার বাসে উঠে পড়লাম বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে সিএনজি করে চলে গেলাম বনবিভাগের বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জ।

Advertisement

বাংলাদেশ অংশের ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই বনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান হলো পূর্ব বনবিভাগের বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জ।

দু’ধারে ঘন জঙ্গলের মাঝ থেকে বয়ে চলা এখানকা আকাবাঁকা নদী-খাল আর বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সব সময়ই আকৃষ্ট করে। তাই তারা দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ছুঁটে আসেন এখানে।

শরণখোলার এই বনের কটকা, কচিখালী, সুপতি, দুবলা, আলোরকোল, কোকিলমণি, টিয়ারচরসহ আছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। শরণখোলা থেকে সহজ পথে খুব কম খরচে ও অল্প সময়ে এসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসা যায়।

অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে ও প্রচার-প্রচারণা না থাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশের এই অপার সম্ভাবনাময় খাতটি পেছনে পড়ে আছে।

Advertisement

সুন্দরবন ভ্রমণের এই সহজ রুট সম্পর্কে ব্যাপক পরিচিতি না থাকায় পর্যটকরা অধিক সময় ও অর্থ খরচ করে খুলনা ও মোংলা রুট দিয়ে শরণখোলার বনে প্রবেশ করে। শরণখোলা রেঞ্জের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে জেনে নিন-

কটকা

সুন্দরবনের আকর্ষণীয় সব স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্পট হলো শরণখোলা রেঞ্জের কটকা বনাঞ্চল। বন্য জীবজন্তু, মৎস্য ও জলজ প্রাণীর প্রজননের জন্য এটি অভযারণ্য হিসেবে ঘোষিত। এখানকার জামতলায় আছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। টাওয়ার থেকে দেখা যায়, বনের উপরিভাগের বিশাল সবুজ ঘন জঙ্গল।

ভাগ্য প্রসন্ন হলে দেখা মিলতে পারে রাজকীয় ভঙ্গিতে ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গলের শরীর দুলিয়ে হেঁটে চলা। জামতলার পাশেই আছে বিশাল সি বিচ। এই বিচেই আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরের বড় বড় ঢেউ। যেখানে একই সঙ্গে উপভোগ করা যায় কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সৈকতের আনন্দ আর সুন্দরবনের সৌন্দর্য।

কটকা বনঅফিসের আশপাশে মায়াবি চিত্রল হরিণের অবাধ বিচরণ, বানরে ছুঁটোছুঁটি সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অফিসের পেছনে আছে প্রায় ২০০ মিটার দীর্ঘ একটি ফুটট্রেইল। ট্রেইলের মাথায় গেলেই খুব কাছ থেকে দেখা যাবে হরিণের মেলা।

ইচ্ছে করলে হরিণের সঙ্গে সেলফিও তোলা সম্ভব। পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য বনবিভাগের একটি রেস্টহাউজও আছে। যেখানে নিরাপদে থাকার সুব্যবস্থাও পাবেন। তবে থাকতে হলে বনবিভাগের পূর্ব অনুমোতি নিতে হবে।

কচিখালী

কটকার মতো কচিখালীতেও আছে একটি রেস্টহাউজ। এই রেস্টহাউজে বসেই উপভোগ করা যায় সাগরের ঢেউয়ের মূর্ছনা, বণ্য পাখপাখালির কোলাহল, হরিণ-বানরের সখ্যতা।

সেখানে আরও আছে বিশাল সনের (সন ঘাস) বাগান। ঘন ঘাষে বাতাস হৃদয় জুড়ানো ঢেউ খেলে যায়। এই সন বাগান বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। এখানেও আছে বিশাল সি বিচ।

সুপতি

এটিও অভয়ারণ্য এলাকা। এখানের নদীতে দুর্লভ প্রজাতির ইরাবতী ডলফিনের দেখা মেলে। ছোট ছোট খালের দুই পাশে সারিবদ্ধ গোলপাতার বন পর্যকদের আকৃষ্ট করে। নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের ক্যাম্প রয়েছে। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করে দিনে দিনে ফিরে আসা যায়।

দুবলা ও আলোর কোল

শুঁটকি পল্লীর জন্য বিখ্যাত এই স্থান। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দুবলার জেলে পল্লীর অধীনে ছোট-বড় ৮টি চরেই শুঁটকি উৎপাদন হয়। প্রতিবছর অক্টোবর-মার্চ এই ৫ মাস চলে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ। প্রতিবছর রাস পূর্ণিমায় আলোরকোলে জমে ওঠে রাস উৎসব। এ উৎসবে দেশি-বিদেশি লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। এখানকার বিশাল সি-বিচ থেকে সূর্য ওঠা ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। অসংখ্য গাঙচিলের কলকাকলিতে সারাক্ষণ মূখর থাকে পরিবেশ।

আর যেতে যেতে দেখা মিলবে সাগরে অসংখ্য জেলি ফিশের। দুবলাতে বনবিভাগের পাশাপাশি র্যাব ও কোস্টগার্ডের ক্যাম্প আছে। ওখানে রাত্রিযাপন করতে হলে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় থাকতে হবে।

কোকিলমণি ও টিয়ারচর

এই স্থান দুটি হলো সুন্দরবনের সবচেয়ে গভীরতম স্থান। বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। কোকিলমণিতে আছে স্বচ্ছ ও মিষ্টি পানির এক বিশাল দীঘি। নোনা পানি বিধৌত এ সুন্দরবনের মধ্যে মিষ্টি পানিতে পর্যটকরা ইচ্ছে করলে অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার জন্য গোসল সেরে নিতে পারেন।

এখানে নিরাপত্তার জন্য বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডে অফিস রয়েছে। টিয়ারচরের হরিণের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। এছাড়া বনমোরগ, শুকর, গুঁইসাপ, মদনটাক, বাজপাখিসহ অসংখ্য সরিসৃপের দেখা মেলে।

সুন্দরবন ভ্রমণে কীভাবে যাবেন?

শরণখোলায় আসতে হলে প্রথমে ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আসতে হবে। সেখান থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বিলাশবহুল সব বাস আছে। এসব পরিবহনে টিকিট কেটে সরাসরি শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দায় পৌঁছানো যায়।

চাইলে প্রাইভেট গাড়িতেও যেতে পারেন যে কেউ। আপনি চাইলে ট্রেনে খুলনা, তারপর বাগেরহাটের রায়েন্দা হয়ে শরণখোলা রেঞ্জে আসতে পারেন।

সুন্দরবনে কোথায় থাকবেন?

রায়েন্দাতে রাত্রিযাপনের জন্য সরকারি ডাকবাংলো, আবাসিক হোটেল রূপসী রায়েন্দা, সুন্দরবন অবকাশ, পিংকিসহ বেসরকারি বেশ কয়েকটি রেস্ট হাউজ আছে।

এগুলোর মধ্যে কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষও আছে। তাছাড়া রায়েন্দা থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার বা লঞ্চে করে সীমিত ভাড়ায় সুন্দরবনের এসব এলাকা ভ্রমণ করা যায়।

জেএমএস/জিকেএস