লাইফস্টাইল

ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় যে খাবার

স্কিন বা ত্বকের ক্যানসারের পর নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসার সর্বাধিক দেখা দেয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রিপোর্ট করে, বিশ্বে বর্তমানে স্তন ক্যানসার ফুসফুসের ক্যানসারকেও ছাড়িয়ে গেছে।

Advertisement

এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি) দ্বারা প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্ণায়ক ক্যানসার হলো স্তন ক্যানসার।

ব্রেস্ট ক্যান্সার ইন্ডিয়ার মতে, একজন ভারতীয় নারীর স্তন ক্যানসার ধরা পড়লেও প্রতি প্রতি 8 মিনিটে একজন স্তন ক্যানসারে মারা যায়। ক্যানসারের জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস, বয়স, স্থূলতা ও অন্যান্য অপরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকির কারণ ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু খাবার আছে যেগুলো ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগের ঝুঁকি প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। ফরাসি মেডিক্সের মতে, গবেষণায় অংশ নেওয়া যেসব নারীরা অস্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার খেয়েছেন তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি ছিল।

Advertisement

নিউট্রিশন ২০২২ লাইভ অনলাইনে উপস্থাপিত এই গবেষণায় স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবারের তুলনামূলক বিশ্লেষণ জড়িত যেমন- পুরো শস্য, ফল, শাকসবজি, বাদাম ও লেবু। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট ও মিহি শস্যের মতো খাবার যার মধ্যে সাদা চাল, ময়দা ও রুটি অন্তর্ভুক্ত।

দুই দশক ধরে ৬৫ হাজার পোস্টমেনোপজাল নারীদের ট্র্যাক করার পরে, চিকিত্সকরা দেখেছেন যারা স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছেন তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ১৪ শতাংশ কম ছিল। অন্যদিকে অস্বাস্থ্যকর উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার যারা খেয়েছিলেন তাদের এই রোগের বিকাশের ঝুঁকি বাড়ে ২০ শতাংশ বেশি।

প্যারিস-স্যাকলে ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর রিসার্চ ইন এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পপুলেশন হেলথের সানাম শাহ বলেছেন, গবেষণার এই ফলাফল নিশ্চিত করে যে স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদের খাবারের বেশি ও প্রাণীজ খাবারের ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। (রিপোর্ট মিরর.ইউকে)

শরীরের জন্য কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা কতখানি?

Advertisement

গবেষণায় সুপারিশ করা হয়েছে, কিছু সাধারণ কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়া স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এতে আলু, চিনি, মিষ্টি পানীয় ও ফলের রসের মতো খাবার আছে।

তবে পুষ্টির জগতে কার্বোহাইড্রেটের ভূমিকা অনেক বেশি! যদিও কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। কার্বোহাইড্রেট মানবদেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এটি শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস, এটি পেশি সংরক্ষণে সাহায্য করে, হজমের স্বাস্থ্যকে উন্নীত করে ও কিছু ধরনের কার্বোহাইড্রেটও হার্টের স্বাস্থ্য এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

তাহলে কার্বোহাইড্রেট কেন অস্বাস্থ্যকর?

যখন কার্বোহাইড্রেটের কথা আসে, তখন আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে তিনটি প্রধান ধরণের কার্বোহাইড্রেট আছে- চিনি, স্টার্চ ও ফাইবার।

চিনিকে সাধারণ কার্বোহাইড্রেটও বলা হয়, যা সাধারণ অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- ক্যান্ডি, ডেজার্ট, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও নিয়মিত সোডাতে পাওয়া যায়।

অন্যদিকে স্টার্চ হলো জটিল কার্বোহাইড্রেট, যা অনেকগুলো সরল শর্করার সমন্বয়ে তৈরি হয়। শরীরের শর্করা ভাঙতে ও শক্তি গঠনের জন্য স্টার্চ প্রয়োজন।

আর ফাইবার হলো একটি জটিল কার্বোহাইড্রেট। যা শরীর ভাঙতে পারে না। আর এ কারণেই আঁশযুক্ত খাবার খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, শরীর সুস্থ রাখতে ও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই সবার উচিত চিনিজাতীয় কার্বোহাইড্রেটগুলো ত্যাগ করা। তার বদলে জটিল অর্থাৎ স্টার্চ ও ফাইবারসমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত সবারই। জটিল কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারে ফাইবার ও বি ভিটামিনসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি থাকে।

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির অন্যান্য কী কারণ আছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বয়স বৃদ্ধি, স্থূলতা, অ্যালকোহলের ক্ষতিকর ব্যবহার, স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস, বিকিরণ এক্সপোজারের ইতিহাস, প্রজনন ইতিহাস (যেমন- যে বয়স থেকে মাসিক শুরু হয়েছিল ওপ্রথম গর্ভাবস্থায় বয়স) তামাক ব্যবহার ও পোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি এসবই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক জানানো হয়েছে ঠিক কীভঅবে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারবেন সে বিষয়ে-

>> নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো>> নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ>> ওজন নিয়ন্ত্রণ>> অ্যালকোহলের ব্যবহার এড়ানো>> ধূমপান এড়ানো>> হরমোনের দীর্ঘায়িত ব্যবহার পরিহার করা>> অত্যধিক বিকিরণ এক্সপোজার এড়ানো

স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো কী কী?

>> স্তনে পিণ্ড হওয়া >> স্তনের আকার, আকৃতি বা চেহারায় পরিবর্তন>> স্তনের ত্বকে গর্ত, লালভাব, ঘা বা অন্যান্য পরিবর্তন>> স্তনবৃন্তের চেহারার পরিবর্তন বা স্তনের আশেপাশের ত্বকে পরিবর্তন (এরিওলা)>> স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক স্রাব ইত্যাদি।

স্তন ক্যানসার হয়েছে কি না তা নিশ্চিতভাবে জানবেন কীভাবে?

মায়ো ক্লিনিকের মতে, স্তন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার শনাক্ত করতে ডাক্তার আপনাকে ম্যামোগ্রাম করার পরামর্শ দেবেনে, এটি স্তনের এক্স-রে।

আপনার স্তন ক্যানসার আছে কি না তা নিশ্চিত করার অন্যান্য উপায় হলো, স্তনে আল্ট্রাসাউন্ড করানো বা বায়োপসি করা যা আপনার অবস্থা নিশ্চিত করার অন্যতম সেরা উপায়।

স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে

মায়ো ক্লিনিকের মতে, অ্যালকোহল সীমিত করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করা, বুকের দুধ খাওয়ানো ওপোস্টমেনোপজাল হরমোন থেরাপি সীমিত করা আপনার স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

জেএমএস/জেআইএম