অর্থনীতি

রাইড শেয়ারিং ও কুরিয়ারে খরচ বাড়ছে ২০ শতাংশ

সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় কুরিয়ার সর্ভিস ও রাইড শেয়ারিংয়ের খরচ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন দুই খাতের উদ্যোক্তারা। এর ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি ই-কমার্স ও এফ কমার্স উদ্যোক্তাদের খরচ বেশ বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

গত শুক্রবার রাতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২-৫২ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়ার পরের দিন থেকেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করে প্রভাব কৃষি, শিল্পসহ সব খাতে। এরই মধ্যে, রাইড শেয়ারিং ও কুরিয়ার খাতের উদ্যোক্তারাও সেবামূল্য বৃদ্ধির কথা ভাবছেন।

দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিপ্লব ঘোষ রাহুল জাগো নিউজকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কিলোমিটারে আমাদের খরচ নয় টাকা বেড়েছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখনো খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করিনি। নিজেদের মধ্যেই আলোচনা চলছে। তবে পণ্য পরিবহনে খরচ অবশ্যই বাড়বে।

Advertisement

‘এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেবামূল্য বাড়িয়ে ফেলেছে। আমরাও ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। তবে আমরা যৌক্তিকভাবে খরচ বাড়াতে চাচ্ছি, যাতে গ্রাহকের ওপর চাপটা কম পড়ে।’

কুরিয়ার সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১৫৩টি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। এগুলোর মধ্যে নিবন্ধিত ৭৮টি। দেশে ডিজিটাল কমার্সের প্রবৃদ্ধিতে অনলাইন কুরিয়ার সার্ভিস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুরিয়ার সার্ভিসগুলো সাধারণত পণ্য আনা-নেওয়ায় ঢাকার মধ্যে ৬০ টাকা আর ঢাকার বাইরে ১২০ টাকা ডেলিভারি চার্জ নেয়। তবে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে পার্সেলপ্রতি ২০-৩০ টাকা ডেলিভারি চার্জ দাবি করছে।

ডিজিটাল কমার্সের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, কুরিয়ার সার্ভিসের বাড়তি খরচে লোকসান গুনতে হচেছ তাদের। এতে ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Advertisement

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) জানায়, দেশে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে। এছাড়া, ফেসবুক বা এফ-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনে আরও প্রায় দুই লাখ উদ্যোক্তা যুক্ত রয়েছেন।

উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের (উই) সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, এমনিতেই কুরিয়ার সার্ভিসের খরচটা গ্রাহকরা দিতে চান না। এ জন্য ছোট উদ্যোক্তরা সম্পূরক হিসেবে কুরিয়ার খরচটা বহন করে। এতে তাদের ব্যবসার প্রসার ও হয়।

‘কিন্তু এখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দামও বাড়বে। আবার কুরিয়ারেও বাড়তি খরচ যোগ হবে। এমতাবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আসলে মূল্য বাড়িয়েও উপায় নেই। তবে আমরা আশা করবো, সবকিছু যেন খুব দ্রুত ঠিক হয়।

রাজধানীর গণপরিবহনের ভোগান্তি দূর করতে ২০১৬ সালে উবার, পাঠাও নামের দুটো রাইড শেয়ারিং কোম্পানি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে লাভজনক সুযোগ-সুবিধা থাকায় কয়েক হাজার মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িচালক রাইড শেয়ারিং শুরু করেন। বাজারে আসে আরও একাধিক কোম্পানি।

কমিশন কম দেওয়া, যাত্রী-চালকের সমঝোতা না হওয়া, চালকদের হয়রানিসহ নানান অভিযোগে চালকরা অ্যাপ ছেড়ে নিজেদের রাইড শেয়ারিং শুরু করেন।

অ্যাপের মাধ্যমে যারা রাইড শেয়ার করেন তারা বলছেন, ভাড়া বেশি হলেও, এতে নিরাপত্তা থাকে। কারণ অ্যাপে চালক ও যাত্রীর সব তথ্য থাকে।

যাত্রীরা বলছেন, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো নীতিমালা না মেনেই এর আগেও ভাড়া বাড়িয়েছে। এখন জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সুযোগে তারা ফের ভাড়া বাড়াবেন। যার পুরোটাই যাত্রীদের বহন করতে হবে।

অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল রাইডের অপারেশন ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা সবকিছু দেখছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করছি। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে খরচ যদি না বাড়ানো হয় তাহলে রাইডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ‘কয়েকটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানি এরই মধ্যে ২০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে। শিগগির আমরা অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসবো। এক্ষেত্রে আমারও ২০ শতাংশ বাড়াতে পারি।

এসএম/এসএএইচ/জিকেএস