উত্তরবঙ্গের ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণকাজ বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এবারে বড় আকারে রেলপথ সংযোগের আওতায় আসতে যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ। যার শুরুটা হচ্ছে যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে। রেল বিভাগ বলছে, পুরো দেশকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তরের জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজন। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ৩৮টি রেল চলাচল করতে পারে সেখানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন ৬৮টি রেল চলাচল করতে পারবে।
Advertisement
একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। অন্যপাশে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে দেশটির রেলবিভাগ।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত রেলের মোট ৩৬টি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। আর এসব প্রকল্পের মধ্যে ১৫নং মেগা প্রকল্পটি হচ্ছে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। শুরুতে প্রাথমিকভাবে সেতুর অনুমোদিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। পরে উদ্বোধনের আগেই নির্মাণ ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা করা হয়। এরমধ্যে জাপানি আন্তর্জাতিক সংস্থা (জাইকা) ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করছে। বাকি অর্থ বাংলাদেশের।
ইতোমধ্যে এই সেতুর ৩৮টি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ। আরো বেশ কয়েকটি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষের দিকে। জুন পর্যন্ত এই সেতুর অগ্রগতি ৪২ শতাংশ। দিন যতই যাচ্ছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু। সেতুটি নির্মাণ হলে একদিকে যেমন উত্তরের যোগাযোগ খাতে নবদিগন্তের সূচনা হবে তেমনি খুলবে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর (এডিডিআই) অতিরিক্ত চিফ প্রকৌশলী মো. আহসান জাবির।
Advertisement
বর্তমানে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর-কালিহাতী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা এই দুই প্রান্তে রেল সেতু নির্মাণে ৫০টি পিলারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেতু এলাকায় সরেজমিন ঘুরে ও প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে এসব তথ্য।
রেল সেতুর পিলার সম্পন্ন
বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশেই ৪.৮ কিলোমিটার দুই লাইনের রেল সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ৩৮টির পাইলিংয়ের কাজ শেষ। বাকিগুলোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সেখানে রাত-দিন কাজ চলছে। ২০২১ সালের মার্চে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে শেষ হওয়া পিলারগুলো দৃশ্যমান হয়েছে। তবে মাঝামাঝি পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ অংশে বাদ রয়েছে ৮টি পিলারের পাইলিং কাজ।
কাজের অগ্রগতি বেশ ভালো জানিয়ে এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ১০ আগস্টে নির্ধারিত সময়ে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ সীমান্তে ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে সময়ক্ষেপণসহ শিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীরা প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়েন। এরপরই বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের চিন্তা সামনে আসে। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
Advertisement
জাপান ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে জাইকা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। যমুনা নদীর দুই প্রান্তে দুটি ভাগে চলছে নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে সেতুর পূর্বপাশে টাঙ্গাইল অংশে ৪৭ ও ৪৮ নম্বর পিলারের মাঝে সুপার স্ট্রাকচার গার্ডারের কাজ শুরু করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, আগে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে নদীর দুই প্রান্তে সমানতালে কাজ চলানো সম্ভব হয়নি। তবে এখন বেশ জোরেসোরে কাজ চলছে।
নদী ওপর মহাকর্মযজ্ঞ
যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে প্রকল্প এলাকায় চলছে মহাকর্মযজ্ঞ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে পাইলিংসহ সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্ট নানা কাজ। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ঘিরে রাখা হয়েছে প্রকল্পের এলাকা। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সেতুপূর্ব-উত্তর পাশের গাইড বাঁধের কাছ থেকে পাইল বসানোর কাজ শুরু হয়। এখন ভারি ক্রেনের সাহায্যে হ্যামার দিয়ে বসানো হচ্ছে পাইলিং পাইপ। হ্যামারের শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো প্রকল্প এলাকা। প্রকল্পে দেশি ও বিদেশি কোম্পানির কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ৪.৮ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেল সেতু নির্মাণ। এই প্রকল্পের মধ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে উভয় প্রান্তে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাস্ট, প্রায় ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট প্রায় ৩০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ। এছাড়া সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে থাকবে নতুন স্টেশন ভবন, ইয়ার্ড রিমডেলিং ও রেলওয়ে সেতু মিউজিয়াম। একই প্রকল্পের আওতায় কিছু নদী শাসন ও সংস্কার কাজও করা হচ্ছে।
রেল বিভাগ বলছে, ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল লাইন ডুয়েল গেজের এই রেল সেতু হবে দেশের বৃহত্তম ডেডিকেটেড রেল সেতু। সেতুটিতে ৫০টি পিলার ও ৩৭টি স্প্যান থাকবে। এই স্প্যানের মধ্যে ৩৬টি নির্মাণ করা হবে ভিয়েতনাম ও মিয়ানমারে। বাকি ১টি নির্মাণ করা হবে বাংলাদেশে। সেতুটি জাপানি প্রযুক্তিতে, এন্টিওয়েদারিং স্টিল দিয়ে তৈরি হবে। যাতে কখনোই রং করতে না হয়। এতে সেতু রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তেমন লাগবে না। নতুন এ সেতুর উপর দিয়ে ব্রডগেজ লাইনে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজ লাইনে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে রেল চলতে পারবে। বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যেখানে ৩৮টি রেল চলাচল করতে পারে সেখানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মিত হলে প্রতিদিন ৬৮টি রেল চলাচল করতে পারবে।
রেল সেতুটির বৈশিষ্ট্য
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, নতুন রেল সেতু হলে নতুন রুট চালু করা হবে। বর্তমানে যে রেল সেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। এই সেতুটিতে দুটি রেললাইন বসবে। যার ফলে কোনো ট্রেনকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসঙ্গে দুটো ট্রেন দুদিকে চলে যেতে পারবে।
এখন বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘণ্টায় সর্বচ্চো ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারে। এই সেতুটিতে ঘণ্টায় সর্বচ্চো ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এটির ওপর দিয়ে যেকোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে একাধিক লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে।
তিনি বলেন, সাধারণত মালবাহী ট্রেনগুলোকে প্রায়ই দুটি ইঞ্জিন দিয়ে টানতে হয়। বর্তমান ব্রিজের ওপর দিয়ে সেটি সম্ভব হয় না। ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য সেটিকে অন্য আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু সেতুতে নেই। যে কারণে পার্বতীপুরের কারখানায় মেরামতের জন্য ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এই সেতু হলে সেটি সম্ভব হবে।
যেভাবে তৈরি হচ্ছে রেল সেতু
সেতুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমার বলেন, এই সেতুটি তৈরিতে যেসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেটি এখনকার রেল সেতুগুলো থেকে আলাদা। এটি ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে তৈরি করার কারনে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় শূন্য। এই সেতুটির ফাউন্ডেশনে জাপানের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। যে প্রযুক্তি জাপানের বাইরে খুব কম ব্যবহৃত হয়। রেল লাইনগুলো চাকার ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়া কমাতে বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হবে। তাই লাইনগুলো কম পরিবর্তন হবে। এক লাইন দীর্ঘসময় ধরে কার্যক্ষম থাকবে। ব্রিজের সংযোগস্থলে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তাতে ব্রিজটির নিজের ওজন কম হবে। এতো উচ্চ প্রযুক্তি দেশের কোনো রেল সেতুতে নেই।
আন্তর্জাতিক সংযোগের পরিকল্পনা
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর জানান, একটা আলাদা (রেল) সেতু দেশের আভ্যন্তরীণ আর্থ সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে সংযুক্ত করবে। বাংলাদেশ ট্র্যান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এই সেতুটি ভবিষ্যতে সেই সংযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্য নিয়ে উত্তরের সীমান্ত এলাকায় রেললাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
সিগনাল ও টেলিকমিউনিকেশন কাজের চুক্তি
যমুনা নদীর ওপর দ্বিতীয় প্যারালাল রেল সেতুর সিগনাল ও টেলিকমিউনিকেশন কাজের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে ২০২২ সালের মে মাসে রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে জাপানি কোম্পানি ইয়াসিমা জেএসইর (জয়েন্টে ভেনচার) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে বাংলদেশ রেলওয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমার এবং জাপানি কোম্পানি ইয়াসিমার অথোরাইজড পার্সন নরিয়ো ইকোজিমা। জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটির চুক্তি মূল্য ৪৭ কোটি ৭১ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৫ টাকা। ২৮ মাসের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করা হবে।
যুক্ত হচ্ছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ ২০২২ সালের মধ্যেই বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। পুরো প্রকল্পে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এ প্রকল্পটিতে অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যেই রেলপথের কোথায় কোথায় ব্রিজ, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস নির্মাণ হবে তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
রেল সূত্র জানায়, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ বাস্তবায়নে ৭টি রেলওয়ে স্টেশন থাকছে। এগুলো হলো বগুড়ার রানীর হাট, শাজাহানপুর, আড়িয়া বাজার, শেরপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, চান্দাইকোনা ও সিরাজগঞ্জের কৃষাণদিয়া। রেলওয়ে জংশন নির্মাণ করা হবে সিরাজগঞ্জে। এই প্রকল্পের কারণে উত্তরের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে রাজধানীর প্রায় ৭২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে।
বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ঘুরে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধুমাত্র বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লেগে যায় প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আর প্রায় ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। অপরদিকে সড়ক পথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছাতে সময়ে লাগবে মাত্র ১ থেকে সোয়া ১ ঘণ্টা।
রেলে চলমান প্রকল্পসমূহ
বঙ্গবন্ধু রেল সেতুকে ঘিরে এই অঞ্চলে চলছে রেল বিপ্লব। রেলের মেগা প্রকল্পের বেশিরভাগই এই অঞ্চলে। এখানে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ। বগুড়া থেকে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ। জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন। মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ। লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ। ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ এবং ১৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহ।
পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর। পশ্চিমাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। খুলনা-দর্শনা জংশন সেকসনে ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার ও নির্মাণ। দর্শনা থেকে দামুড়হুদা এবং মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর পর্যন্ত নতুন ব্রডগেজ রেল লাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিশদ ডিজাইন।
২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেক্ট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপায়ন, ১০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন, ২০০টি মিটার গেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ ও আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)।
রেলমন্ত্রী যা বলছেন
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন করতে পারবো এবং এ বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচল করবে।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতু সম্পর্কে মন্ত্রী আরো বলেন, আশা করছি শুরু থেকেই পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল চলাচল করবে। এ বছরের মধ্যেই খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল চালু হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যেই টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডাবল এবং কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত থার্ড লাইন ফোর লাইনে বর্ধিত করার কাজ সম্পন্ন হবে। সবমিলিয়ে রেল চলাচলে একটা বড় পরিবর্তন আসছে।
এফএ/এমএস