জনপ্রতি চিকিৎসায় বরাদ্দ মাত্র ৬০ টাকা এবং শিক্ষায় বরাদ্দ হচ্ছে ২৫৫ টাকা। এমনই আর্থিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে কুমিল্লার একমাত্র বালিকা এতিম ও দুস্থ শিশুদের আশ্রয়স্থল এবং তদারকি প্রতিষ্ঠান সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও সেখানে বিরাজমান নানা সমস্যা এবং আর্থিক বরাদ্দ স্বল্পতার কারণে সেখানে অবস্থানকারী একশ` শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। সরকারি স্বল্প বরাদ্দ দিয়েই এসব শিশুদের খাদ্য-বস্ত্র, শিক্ষা-চিকিৎসা, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ওই শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষকে। জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১ জুুলাই কুমিল্লা মহানগরীর সংরাইশ এলাকায় ২.২৮ একর জমিতে সমাজ সেবা অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত এতিম ও দুস্থ বালিকা শিশুদের জন্য জেলার একমাত্র সরকারি শিশু সদন প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮-১৯৮৯ অর্থ বছরে তা সরকারি শিশু পরিবার হিসেবে রূপান্তরিত (১ম পর্ব) করা হয়। বর্তমানে এর আসন সংখ্যা ১শ’। প্রতি বছর সেখানে আসন শুন্য থাকা সাপেক্ষে ছয় বছর বয়সের এতিম শিশু কন্যাদেরকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থানরত নিবাসীরা ওই শিশু পরিবারের অভ্যন্তরে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং বাইরে মাধ্যমিক থেকে স্নাতক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে। চলতি বছরে সেখানকার নিবাসীদের মধ্যে শিশু শ্রেণিতে আটজন, প্রথম শ্রেণিতে ১২ জন, ২য় শ্রেণিতে ১৫ জন, ৩য় শ্রেণিতে আটজন, ৪র্থ শ্রেণিতে ১০ জন, ৫ম শ্রেণিতে সাতজন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১৩ জন,৭ম শ্রেণিতে একজন, অষ্টম শ্রেণিতে ১১ জন, ৯ম শ্রেণিতে ৬ জন, ১০ শ্রেণিতে ৫ জন, একাদশ শ্রেণিতে ২ জন এবং অনার্সে ২ জন অধ্যয়ন করছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে প্রতি জন শিশুর জন্য ২ হাজার ৬শ’ টাকা সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার টাকায় দুই বেলা খাবার, ২ বেলা নাস্তা ও জ্বালানি, ২৫৫ টাকায় শিক্ষা, ৫০ টাকায় প্রশিক্ষণ, ১৬৫ টাকায় পোষাক-পরিচ্ছদ, ৬০ টাকায় চিকিৎসা এবং ৭০ টাকায় তেল, সাবান, প্রসাধনী। তাই এই স্বল্প বরাদ্দ দিয়েই কোনো রকম চলে যাচ্ছে এসব এতিম নিবাসীদের জীবন। সেখানকার মাধ্যমিক পর্যায়ে অধ্যয়নত শিক্ষার্থীরা জানান, মাসিক ২৫৫ টাকা দিয়ে লেখাপড়ার দৈনন্দিন খরচ, গাইড বই ও কোচিং ক্লাসের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। তাই এতিম এসব শিশুরা বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি ২৩ জন জনবলের মধ্যে সহ-তত্ত্বাবধায়ক পদসহ বর্তমানে ৫টি পদ শুন্য রয়েছে। খণ্ডকালীন একজন ডাক্তার ও একজন সার্বক্ষণিক নার্স নিবাসীদের চিকিৎসার দেখভাল করার কথা থাকলেও বর্তমানে তাও নেই। তাই এতিম শিশু নিবাসীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা সঙ্কট রয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষক রয়েছে মাত্র দু`জন। শিশু পরিবারের অফিস ভবন, ডরমেটরি ভবন, উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও সহ-তত্ত্বাবধায়কের বাস ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মেরামতের অভাবে দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। সেখানকার অনেক সমস্যার মাঝেও মেয়ে নিবাসীরা শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য অর্জনে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আসছে। ইতোমধ্যে চার শতাধিক নিবাসী ওই প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে দর্জি, অ্যামব্রয়ডারি, টাইপ প্রশিক্ষণ, শটহ্যান্ড, কম্পিউটার, ব্লক-বাটিক ও বাঁশ-বেত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানে বর্তমানে তিনটি কম্পিউটার ও আটটি সেলাই মেশিন রয়েছে। যা দিয়ে নিবাসীদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে সেখানকার নিবাসীদের মধ্যে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভসহ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ লাভ করার রেকর্ডও রয়েছে অনেক। ওই নিবাসীরা জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ক্রীড়া ইতোমধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় আন্ত:প্রাতিষ্ঠানিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোাগিতায় নিবাসীরা অংশ নিয়ে ছয়টি প্রথম পুরস্কারসহ ৪১ পয়েন্ট অর্জন করেছে। এছাড়াও প্রতি বছর নিবাসীরা জাতীয় স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ এবং ডিসপ্লেতে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে। কুমিল্লা সংরাইশ সরকারি ও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক হেলেনা নূর জাগো নিউজকে জানান, মানুষের চাহিদার শেষ নেই, কিন্তু নিবাসীদের জন্য সরকারি বরাদ্দ যাই আছে বিধি অনুযায়ী তা দিয়েই শিশুদের সকল চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। তবে এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। তিনি জানান, অফিস ভবন, ডরমেটরি ভবন, উপ-তত্ত্বাবধায়ক ও সহ-তত্ত্বাবধায়কের বাস ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি আরও জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষসহ অনেকেই এ প্রতিষ্ঠানটির দিকে সহানুভূতিশীল ও উদার মনোভাব নিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন। মো. কামাল উদ্দিন/এমজেড
Advertisement