হিরোশিমার কথা মনে আছে সবার? ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ইতিহাস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। জাপানের একটি শহর যুগের পর যুগ কেন এতো আলোচনায়? প্রবীণরা সহজেই বলতে পারবেন। নবীনরাও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছেন। তারপরও আজ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কারণ আজ হিরোশিমা দিবস।
Advertisement
ইতিহাস বলছে, জাপানের একটি শহর হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমা ফেলে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকালে। এর তিন দিন পর জাপানের নাগাসাকি শহরের ওপর ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
অনুমান করা হয়, ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। আর নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ মারা যায়। পরে এ দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় আরও ২ লাখ ১৪ হাজার জন।
জাপানের আসাহি শিমবুনের করা হিসাব অনুযায়ী, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২ লাখ ৩৭ হাজার এবং নাগাসাকিতে ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। দুই শহরে মারা যাওয়াদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক মানুষ।
Advertisement
এতে বহু ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, গাছ-গাছালিসহ হিরোশিমার সার্বিক নির্মাণ কাঠামো বিধ্বস্ত হয়েছিল। জাপানের সরকারি ওয়েবসাইট জানায়, এ হামলায় হিরোশিমার ৬৫ শতাংশ ভবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তারপরই ১৫ অগাস্ট নিঃশর্ত সমর্পণ করার ঘোষণা দেন জাপানের সম্রাট হিরোহিতো। কেননা পারমাণবিক বিস্ফোরণের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল জাপানের কয়েক প্রজন্মকে।
তবে জাপানের আত্মসমর্পণের পেছনে এ বোমাবর্ষণের ভূমিকা এবং এর প্রতিক্রিয়া-যৌক্তিকতা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশের ধারণা, এ বোমাবর্ষণের কারণে যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ হয়। যার ফলে পূর্ব-পরিকল্পিত জাপান আক্রমণ সংঘটিত হলে উভয়পক্ষের বিপুল প্রাণহানি হতো, তা আর বাস্তবে ঘটেনি। অন্যদিকে জাপানের জনগণ মনে করেন, এ বোমাবর্ষণের কোনো প্রয়োজন ছিল না। কেননা জাপানের বেসামরিক নেতৃত্ব যুদ্ধ থামানোর জন্য গোপনে কাজ করছিল।
মূলত চিন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় থেকেই জাপানি সামরিক কার্যকলাপের মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল হিরোশিমা। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল এ শহর। এটিই বিশ্বের প্রথম শহর, যার ওপর পরমাণু বোমার আঘাত হানা হয়। আর দ্বিতীয় শহর হলো জাপানের নাগাসাকি।
যার কারণে মুহূর্তেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল একটি শহর। শোনা যায়, নারীদের গর্ভের সন্তানও এতে আক্রান্ত হয়েছিল। প্রসবের পর বেশিরভাগকেই বিকলাঙ্গ হতে দেখা যায়। সেই ভয়াবহতাকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর দিনটিকে ‘হিরোশিমা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বিশ্বশান্তি ও শান্তিপূর্ণ রাজনীতির প্রচার করতেই দিবসটি পালন করা হয়। এ বছর ৬ আগস্ট ৭৭তম হিরোশিমা দিবস পালিত হচ্ছে।
Advertisement
এসইউ/এএসএম