বিশেষ প্রতিবেদন

চালু হচ্ছে না খুলনা-ঢাকা রকেট সার্ভিস

বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসির উদাসিনতার কারণে খুলনা থেকে ঢাকা রুটে রকেট স্টিমার সার্ভিস চালু হচ্ছে না। ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা নিয়ে দুটি সংস্থার পরস্পর বিরোধী ও দায়সারা বক্তব্যের মাঝে আটকে আছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রকেট সার্ভিস। আর এ কারণে ঢাকা-খুলনা রুটের রকেট সার্ভিস বন্ধ থাকায় অতিরিক্ত লোকসান গুণতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষকে। ঢাকা-মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত রকেট সার্ভিস চালুতে গত ৩ মাসে কোটি টাকার বেশি লোকসান গুণেছে এ কর্তৃপক্ষ। খুলনা রুটকে বাদ দিতে ষড়যন্ত্র চলছে বিআইডব্লিউটিসির অভ্যন্তরে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন লুটপাট হচ্ছে সংস্থার বিভিন্ন সম্পত্তি ও নৌযান। এদিকে গত ২০১৪ সালের ২৯ মার্চ বিআইডব্লিউটিসির নতুন দুটি স্টিমার এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে ঢাকা-খুলনা রুটের রকেট চলাচল দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘোষণার পর এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটি আশার সঞ্চার হলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংস্থার কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা শুরু থেকেই খুলনায় আঞ্চলিক কার্যালয় থাকা বরিশালকে আঞ্চলিক কার্যালয় ঘোষণা করে চিঠি ইস্যু করেন। যা এখনো পর্যন্ত সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়নি। এরপর সংস্থার ওই সকল কর্মকর্তারা খুলনা অঞ্চলের দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকেন। রকেট চলাচলের জন্য নৌরুটের খোঁজখবর না রাখা, ধীরে ধীরে খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের লোকবল কমিয়ে আনা, বিভিন্ন স্থাপনা সংস্কার করা থেকে বিরত থাকা, নৌযানগুলোকে ব্যক্তি বিশেষের কাছে হস্তান্তর করা, কর্তৃপক্ষের জমি বিক্রিসহ মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনায় অনিহা প্রকাশ ইত্যাদি। বর্তমানে রকেট সার্ভিসে স্টিমার রয়েছে, অস্ট্রিস, মাসুদ, লেপচা, টার্ন, শীলা, মধুমতি ও বাঙালি। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী গাজী স্টিমারটি ১৯৯৮ সালে ডকইয়ার্ডে মেরামতকালে অগ্নিকাণ্পে নষ্ট হয়। সূত্রটি আরও জানায়, ২০১১ সালের ২ অক্টোবর ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা অজুহাতে ঢাকা-খুলনা রকেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিকল্প রুট হিসেবে মংলার জয়মনির ঘোল বগি হয়ে খুলনা-ঢাকা রকেট সার্ভিসের স্টিমার চলাচলের জন্য আলোচনা শুরু হয়। রকেট সার্ভিস চলাচলের জন্য নাব্যতাসহ সকল ধরনের সুবিধা থাকলেও সে সুযোগকেও ধামাচাপা দেওয়া হয়। একটি বারের জন্যও ঢাকা-খুলনা রুটের রকেট সার্ভিস সে রুটে ব্যবহার বা বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া বিআইডব্লিউটিসির বিভিন্ন নৌযান ব্যক্তি বিশেষের কাছে বরাদ্দ দিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত রকেট সার্ভিসটি চালু রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির খুলনা অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে, সাড়ে ৩শ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্য থেকে কমতে কমতে এখন মাত্র ৬০ জনের মতো এখানে রাখা হয়েছে। বর্তমানে ৪টি ঘাট পন্টুন ছাড়া বিআইডব্লিউটিসির সচল কোনো নৌযান এখানে নেই। বিভিন্ন স্থাপনা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বললে তারা দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন। এছাড়া একজন অন্য আরেকজনের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন ও পরিচালনা বিভাগ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর উপ-পরিচালক মো. আশরাফ হোসেন জানান, গত ২০১৫ সালের নভেম্বরে বিআইডব্লিউটিসি একটি পত্রে জানিয়েছিল খুলনা-ঢাকা রুটের রকেট চলাচল শুরু হবে। এজন্য খুলনাস্থ স্টিমার ঘাট ও পন্টুনসহ সব কিছু প্রস্তুত রাখার কথাও বলেছিল। আমরাও তাদের চাহিদা মতো সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত আর কোনো খোঁজ খবর তারা নেয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, ঘষিয়াখালী চ্যানেলের বর্তমান গভীরতায় ১২/১৩ ফিট ড্রাফ্ট নিয়ে বিভিন্ন নৌযান পণ্য আনা নেওয়া করছেন। আর অন্যদিকে রকেট সার্ভিসের যে সমস্ত স্টিমার রয়েছে তাতে মাত্র ৬/৭ ঊর্ধ্বে গেলে ৮ ফিট ড্রাফ্ট থাকে।নাব্যতার দোহাই দিয়ে ঢাকা-খুলনা রুটের রকেট সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি। বিআইডব্লিউটিসি’র বাণিজ্য যাত্রী ও ফেরী বিভাগের (জিএম) এন.এস.এম শাহাদাৎ আলী বলেন, ঘষিয়াখালী রুটে ঢাকা-খুলনা রকেট সার্ভিস চলাচলের মতো গভীরতা রয়েছে। কিন্তু, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একপত্রে কিছুদিন আগে আমাদের জানিয়েছে জোয়ার ভাটির সঙ্গে মিল রেখে চ্যানেলটি ব্যবহার করতে হবে। এ কারণে সার্ভিসটি চালু হতে গিয়েও হয়নি। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি পর্যবেক্ষণ দল ঘষিয়াখালী চ্যানেল পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া রকেট সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিসির আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। এ বিষয়ে বাগেরহাট-৩ আসন (মংলা-রামপাল) সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক জানান, ঢাকা-খুলনা রুটে রকেট সার্ভিস চালুর জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। ঘষিয়াখালী চ্যানেলে আর অল্প একটু কাজ বাকী রয়েছে যা শিগগিরই শেষ হবে। এরপর অবশ্যই এ রুটে আবারও ঐতিহ্যবাহী রকেট চলাচল চালু হবে বলে জানান এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

Advertisement

এমএএস