বিশেষ প্রতিবেদন

‘আমার বাবারে একটু দেখবার দাও’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চতুর্থ তলার বারান্দায় মাটিতে লুটিয়ে কান্নাকাটি করছিলেন মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা। সোমবার আনুমানিক দুপুর ১২টায় বার্ন ইউনিটের লিফটে ও সিঁড়িতে করে যারাই চারতলায় আসছিলেন তারা সকলেই কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে মহিলার দিকে ফিরে ফিরে দেখছিলেন। সিঁথিতে সিঁদুর পড়া ওই মহিলা বুক চাপড়ে বলছিলেন, ‘আমার বাবারে একটু দেখবার দাও’।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার থাইয়ের কাজ করার সময় তার ছেলে প্রফুল্ল বর্মন (২০) অসর্তকতাবশত বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে দগ্ধ হয়। বর্তমানে বার্ন ইউনিটের পাঁচতলায় চিকিৎসাধীন। দুই ছেলের মধ্যে প্রফুল্ল বর্মন বড়। ছেলের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার সংবাদ পেয়ে তিনি নওঁগার মহাদেবপুর থানাধীন গাহলী গ্রাম থেকে ছুটে আসেন। গত কয়েকদিন যাবৎ হাসপাতালে থাকলেও আত্মীয়স্বজনরা তাকে ছেলের সাথে দেখা করতে দিচ্ছিলেন না। ছেলের সাথে দেখা করতে  না দেয়ায় তিনি এই কান্নকাটি করছেন। এ মমতাময়ী মায়ের মতো আরও অনেক মা, স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়মিতই বার্ন ইউনিটে চোখের জল ফেলতে দেখা যায়। ছাদে ঘুড়ি উড়াতে গিয়ে, রডের ওপর বারান্দায় কাপড় শুকাতে গিয়ে, অবৈধ সংযোগ থেকে বিদ্যুৎ লাইন নিতে গিয়ে কিংবা প্রফুল্ল বর্মনের মতো থাই গ্লাস ফিটিং করতে গিয়ে অসতর্কতাবশত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। বিদ্যুতস্পৃষ্ট হওয়ার তালিকায় ছোট্ট শিশু থেকে তরুণ, প্রৌঢ় ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন। ঢামেক বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা.সামন্ত লাল সেন জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট পোড়া রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতি মাসে গড়ে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের শিকার রোগী ভর্তি হন। তাদের অনেকেরই হাত ও পা কেটে ফেলতে হয়। ফলে সারাজীবন পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়ান তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসর্তকতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন তিনি। এমইউ/এসকেডি/পিআর

Advertisement